পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

У 3. е. একেবারে সদর রাস্ত পৰ্য্যন্ত গিয়া হাজির। তাহা হইলে রাস্তার বাক হইতে সহজেই গাড়ীটা আসিতে দেখিতে পাইবে। একমাত্র অন্তঃপুরেই এতক্ষণ ততটা ব্যস্ততা ছিল না। জামাই যত দেরীতে আসে ততই তাহাদের পক্ষে ভাল, কারণ র্তাহাদের সাত শ'-রকম আয়োজন যে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর শেষ হয় নাই, তাহা ত বলাই दांश्लT । কিন্তু ক্রমশ এতটাই দেরী হইয়া গেল যে অস্তঃপুরেও চঞ্চলতা দেখা দিল । তরঙ্গিণীর হাতের কাজ শেষ হইয়া গিয়াছে। তিনি বাহিরের ঘরের দুয়ারে আসিয়া একবার উকি দিলেন ; আবার ছোট ঠাকরুণের দরজায় গিয়৷ ডাকিলেন, “হঁ্যা ছোটমা, জামাই আস্বার সময় কি হয়নি নাকি মা? শিবুত কই গাড়ী নিয়ে এখনও ফিরুল না ! আমি ত মনে করেছিলুম কাজ না চুকতেই ওরা এসে পড়বে।” ছোটঠাকরুণ আপনার দরজায় মালা হাতে করিয়া চুলিতেছিলেন, জাগিয়া উঠিয়া বলিলেন, “তাই ত বাছ, কই দেখে আসিগে ত একবার বারদিকের দোরগোড়াটা ।” বড়ঠাকরুণ আসিয়া বলিলেন, “বেীমা, ইট্টিশানে আর একটা লোক পাঠাও না বাছা । কি জানি গাড়ীর কিছু গোলমাল যদি হ’য়ে থাকে পথে ; শেষে কুটুমবাড়ীর ছেলে চ’টে-ম’টে একখানা কাণ্ড ক'রে বসবে। শিবুর যা বুদ্ধি ! হয়ত রাস্তায় গাড়ী সাবৃছে ত গাড়ীই সাবৃছে।” - তরঙ্গিণী বলিলেন, “টহল দরোয়ানট বুড়ো হ’য়ে ভীমরতি হ’তে চলল; সে কি আর বুদ্ধি করে একখান গাড়ী জোগাড় ক’রে নিয়ে যাবে না ! শিবুই না হয় ছেলেমানুষ আছে, তা ব’লে ত আর সবাই ছেলেমাচুষ নয়।” কথা বলিতে-বলিতে গাড়ীর তীয় শিঙা একবার বাজিয়া উঠিল। ছেলে-মেয়ে চাকর-বাকর হৈ হৈ করিয়া উঠিল, “ওরে গাড়ী আসছে রে!” জগু বেহার ছুটিয়া প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ રાજ્યન ভাগ, ১ম খণ্ড বড়বাবুকে খবর দিয়া আসিল। তিনি পুঁথি গুটাইয়া চোখের চশমা নামাইতে-নামাইতে মাটিতে বালাপোষ লুটাইতে-লুটাইতে বারান্দায় বাহির হইয়া আসিলেন। বিস্মিত দর্শকমণ্ডলীর মাঝখানে গাড়ী আসিয়া থামিল । সকলের আগে ছোট ছেলেরা সমস্বরে বলিয়া উঠিল, “একি ভাই!” তাহার পর বী-চাকর, পাড়াপড়শী সকলের মুখে বিস্ময়ধ্বনি নানা-ভাবে ফুটিয়া উঠিল। "গাড়ীতে জামাই কই!” সেই শিবপ্রসাদ টিনি ও রামটহল তিনজন যেমন গাড়ীতে গিয়াছিল তেমনি তিনজনই ত ফিরিয়া আসিয়াছে। শিবপ্রসাদ বিরক্তমুখে গাড়ী হইতে তড়াকু করিয়া নামিয়া পড়িয়া বলিল,“এই দুপুর-রোদে নাওয়া-খাওয়া ফেলে, আমার যেমন দুর্ভোগ তাই,গিয়েছিলাম গেয়োটাকে আনতে। দুখান গাড়ী এক ঘণ্ট। অন্তর ছিল ; ই ক’রে দুখানার যত র্বোচক-ওয়ালার মুখই দেখছি তখন থেকে ; শ্ৰীমানের টিকিও কোথাও দেখতে পেলাম না। নাই যদি আস্বি ত একটা খবরই না হয় দে, কি আট গণ্ড খরচ ক’রে একটা লোকই পাঠা ; তা কোনো বুদ্ধি যদি আছে!” 吻 শিবপ্রসাদ সিড়ি দিয়া দুড় দাড় করিয়া উঠিয়া নিজের ঘরের দিকে চলিয়া গেল । সঙ্গে-সঙ্গে হরিকেশব আপনার চশমা সামূলাইতে-সাম্‌লাইতে তাহার পিছনে চলিলেন। র্তাহার মুখে অৰ্দ্ধস্ফুট কি একটি প্রশ্ন শিবপ্রসাদের উষ্ণতা দেখিয়া ব৷<র হইবার আর ভরসা পাইতেছিল না। ভূত্য এবং শিশুবাহিনীও কৌতুহলাক্রাস্ত হইয়া কৰ্ত্তার পিছন লইল। রামটহল মেয়েমহলে আসিয়া বহু দীর্ঘ ভূমিকা করিয়া বুঝাইয়া দিল যে ষ্টেশনে দুঘণ্টা দাড়াইয়া থাকিয়াও তাহারা জামাইবাবুর দর্শন পায় নাই। সে অনেক মুসাফিরকে প্রশ্ন করিয়াছে, কিন্তু কেহই তাহাদের জামাইবাবু সংক্রান্ত কোনো ইতিহাসের খবর রাখে না। অগত্যা বাড়ী ফিরিয়া আসা ছাড়া তাহারা আর কি করিতে পারে ? ( ক্রমশ: )