পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] মৃত্যু-দূত ১২৩ হইয় তাহাকে এক অপরূপ উগ্র সৌন্দর্য্যে মহিমাময়ী করিয়া তুলিয়াছে। ঈডিথের মুখের এই অস্বাভাবিক জ্যোতি ও উগ্রত দেখিয়া সিস্টার মেরী উপবিষ্ট মহিলাটির কানে-কানে বলিলেন, “দেখুন ক্যাপটেন, সিস্টার ঈডিথকে কেমন মুন্দর দেখাচ্ছে—ঠিক রাণীর মতন দীপ্তিময়ী !” স্থূলকায় মহিলাটি রোগিণীকে ভালো করিয়া দেখিবার জন্য চেয়ার ছাড়িয়া শয্যাপার্শ্বে আসিয়া দাড়াইলেন । তিনি ঈডিথের নম্র ও আনন্দোজ্জল মুখশ্ৰীই বরাবর দেখিয়া আসিয়াছেন। এমন-কি দারুণ রোগ-র্যন্ত্রণার মধ্যেও শেষ পৰ্য্যন্ত তাহার সে সৌন্দৰ্য্য অক্ষুণ্ণ ছিল। তাই আজিকার এই পরিবর্তনে তিনি এমনই আশ্চৰ্য্য হইলেন যে পুনরায় আসন পরিগ্রহ না করিয়া দাড়াইয়া রহিলেন । কি যেন এক অধীর আবেগে রোগিণী বালিশ হইতে মাথা তুলিয়া উঠিয়া বসিবার চেষ্টা করিতেছিল। এক অবর্ণনীয় বিরক্তিতে তাহার ভ্র কুঞ্চিত। ওষ্ঠাধরে কম্পন ছিল না বটে, কিন্তু মনে হইতেছিল, যেন সে কাহাকেও অনুযোগ করিতেছে। মহিলা-দুইটিকে আশ্চর্য হইতে দেখিয়া ঈডিথের মা পারে-পূীরে বলিলেন, “অন্য দিন ও আমি ঈডিথের এই অদ্ভূত ভাব লক্ষ্য করেছি ; ঠিক এই সময়েই না সে তা’র উদ্ধার-কাজে বের হ’ত ?” সিস্টার মেরী পাশের টেবিলের উপরকার ঘড়িটির দিকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, “হ্য এই সময়েই সে হতভাগ্য পতিতদের পাড়ায় তাদের সাহায্য করতে যেত,” বলিতেবলিতে র্তাহার চক্ষু অশ্রুসজল হইয়া উঠিল ; তিনি রুমাল দিয়া মুখ ঢাকিলেন । ঈডিথের আসন্নমৃত্যু তাহাকে এমুনি ব্যথিত করিয়াছিল ধে তাহার সম্বন্ধে কোনো কথা বলিতে গেলেই কান্নায় তার বুক ভরিয়া উঠিতেছিল। কন্যার একটি অসাড় হাত আপনার মুঠার মধ্যে চাপিয়৷ ধরিয়া মা ধীরে-ধীরে তাহাতে হাত বুলাইতে বুলাইতে বললেন,— o "বোধ করি এই হতভাগাদের নোংরা বস্তি পরিষ্কার ক’রে দিতে ও তাহাদের বদঅভ্যাস ছাড়াতে তা’কে খুবই বেগ পেতে হত। এমন-ধারা কঠিন কাজে লোকে যখন হাত দেয় তখন তা’র ভাবনাও তা’র কাজকে সৰ্ব্বক্ষণ অনুসরণ করে ফেরে। স্ট্রডিথ বোধ হয় ভাবছে যে ও সেই নোংরা পল্লীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।” তাহার নিজের মুখও ঘূণায় কুঞ্চিত হইয়া উঠিল। কাপ্তেম শান্তভাবে বলিলেন, “যে কাজকে লোকে ভালোবাসে তা’র জন্যে এমন হওয়াই ত স্বাভাবিক।” হঠাৎ তাহারা লক্ষ্য করিলেন যে রোগিণীর নিশ্বাস অতি ঘন-ঘন পড়িতেছে, ভ্র দ্রুত সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হইতেছে, কপালের রেখাগুলি সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে, ওষ্ঠ ঘূণায় কম্পিত হইতেছে। বোধ হইল যেন সে এখনই চক্ষুরুন্মীলন করিবে ও তাহ দিয়া অগ্নিজাল নিৰ্গত হইবে। স্থূলকায় মহিলাটি আবেগকম্পিতস্বরে বলিয়া উঠিলেন, “ঈডিথকে ঠিক রোযদীপ্ত দেবীর মতন দেখাচ্ছে ।” “ঈডিথের মন এখন বস্তির বীভৎসতার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, না জানি সেখানে কি দেখে সে এমন করছে!” এই বলিয়া সিস্টার মেরী অন্যদুইটি নারীকে সরাইয়া দিয়া মুমূর্ষর কপালে হাত বুলাইতে-বুলাইতে তাহাকে উদেশ, করিয়া বলিলেন, “ঈডিথ, বোন, তুমি কেন ওদের জন্যে এত ভাবছ। ওদের জন্যে তুমি ত চেষ্টার ক্রটি করোনি।” এ-কথায় যেন ফল ফলিল। রোগিণীর মনের মেঘ ক্রমশঃ যেন কাটিয়া গেল ; রোষদীপ্ত ভাব অনেকটা তিরোহিত হইল। তাহার স্বাভাবিক কমনীয়তা ও মাধুর্য্য ফিরিয়া আসিল । সে ধীরে-ধীরে চক্ষু মেলিল । সিস্টার মেরীকে সম্মুখে দেখিতে পাইয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয় তাহার একটি ক্ষীণ হাত র্তাহার কাধে ফেলিয়া তাহাকে আরো কাছে টানিয়া লইল । ঈডিথের মিনতি-কাতর দৃষ্টি দেখিয়া সিস্টার মেরী ব্যখিত হইয়া উঠিলেন। ঈডিথের কপালে সস্নেহ করম্পর্শ করিয়া আবেগ-উচ্ছসিত-কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিলেন “ঈডিথ, কেমন আছ ?” ঈডিথ অতি মৃদুস্বরে তাহার কানে-কানে শুধু বলিল “ডেভিড হলম্।”