পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ৷ প্রবাল X8) করছেন স্বতরাং তা’কে ভয় কি ? যাই হোকু কেদারের নীরবতায় অধৈৰ্য্য হ’য়ে ঠান্‌দি অভয় দিয়ে আবার বললেন-ভয় কি দাদা, নিৰ্ভয়ে গান ধরে, বৃষ্টির জালায় মেয়ের যে আসতে পায়নি, নইলে তোমার সঙ্গে তারাও নেচে গেয়ে একৃপা ক’রে দিত। ও সই—তুই না হয় ভাই ঝাঝর মল পরে’ তোর সয়ার সামনে দু’পা নেচে দে না, দিদি ! ঠানদি কি দুই আর কি যে অসভোর মতন কথা বলছ! তোমার সখ হ’য়ে থাকে তুমিই নাচে না, বাপু, কে মানা করছে ? পাষ্ট্ৰজোর চাই, এনে দেবো ? ব’লেই সেবা সইএর গা ঘেসে বসল। ঠানদি হাসিমুখে বললেন—ত বাপু এ বয়সে অথৰ্ব্ব হয়ে পড়েছি তাই ; নইলে বাসরে যে নাচিনি তা নয় । তোরা এখন সভ্য হয়েছিল, আমাদের মতে বুড়ীকে অসভ্য বলবি বই কি ! ও ভাই বর, আর কথায় কাজ নেই ; তোমার যেমন কপাল তুমি শুক্লোতেই গান ধর । ঐ শোনো পুত্র-পাড়ের ব্যাঙগুলো দোহর গাইছে। কেদার প্রথমটা একটু গুনগুন ক’রে স্বর ভেজে নিয়ে তার পর মুক্ত-কণ্ঠে গান ধর্লে— আজু রজনী হাম ভাগে পোহাইকু পেখলু পিয়া-মুখ-চন্দ, জীবন যেীবন সফল করি মানিমু দশ দিক্‌ ভইল মহানন্দ । প্রিয়া-মিলন-বিমুগ্ধ হৃদয়ের উচ্ছ্বাস মধুর কণ্ঠের মধ্য দিয়ে যেন মুক্তি ধ’রে ফুটে উঠেছিল। কেদার সঙ্গীতজ্ঞ না হ’লেও তার গলা বেশ মিষ্টি ছিল ; সুতরাং গানটি বেশ জমে উঠল। কৰ্ম্ম-বাড়ীর দু’একজন পুরুষ এদিকে- সেদিকে ছুটে-ছুটার ফীকে বাসর-ঘরের জানালা-দরোজায় উকি দিয়ে গান শুনে যেতে লাগলেন। পাড়ার ছোটলোকদের ছেলে-মেয়ের বৃষ্টি-বাদলে ভিজেও প্রসাদ-প্রার্থী হয়ে এতে রাত্রে কৰ্ম্মবাড়ীতে অপেক্ষা করছিল। তা’র আপাতত: লুচি-মণ্ডার কথা ভুলে দুয়ারে দাড়িয়ে গান শুনতে লাগল । এই সময়ে হঠাৎ কে একজন ত্বরিতগতিতে একেবারে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়তেই সঙ্গে-সঙ্গে কেদারের গান থেমে গেল । ঠান্‌দি অম্নি ব’লে উঠলেন—ও ভাই বর, হঠাৎ থেমে রসভঙ্গ করলে কেন ? নেহাৎ বেরসিক তুমি—কানে মোচড় দিতে হবে নাকি ? যে ঘরে ঢুকেছিল সে বললে—ওহে কেদার, বেশতে গাইছিলে, বন্ধ করলে কেন ? এবয়সে স্কুলের ছেলের শাস্তিটা নেহাৎ গায়ে পড়ে নিতে চাও না কি ? কেদার ঠানদির দিকে চেয়ে বললে—দেখুন, গান শুনতে চান তো এই লোকটিকে পাকুড়াও করুন। গান শুনে খুশী হ’তে পারবেন। এটি আমার অভিন্নহৃদয় বন্ধু শ্ৰী প্রবালচন্দ্র । গান-বাজনায় এর খুব দখল । প্রিয়ত্রতা ঘোমটার ফাকু থেকেই বড় বড় চোখ মেলে বরের বন্ধুটির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে দেখছিল, আর ঘোমটা-হীনা সেবাও সে-দৃষ্টির অনুকরণ করছিল। প্রবালের চেহার বেশ দীর্ঘায়ত, বলিষ্ঠ । বরের চাইতে রঙ তার অনেকটা মলিন হ’লেও সে সুঠাম চেহারার দিকে তাকিয়ে সহজেই বলতে ইচ্ছে হয়, ই, পুরুষের চেহারা বটে। তবে কি না ঘোমটার আড়াল হ’তে পুরুষ মানুষের দিকে চেয়ে দেখা যতটা সহজ, ঘোমটার বাইরে থেকে মোটেই ততটা সুবিধা নয় ; কাজেই সেবার সঙ্গে বার দুই তিন প্রবালের চোখোচোখী হ’য়ে না গিয়ে পারলে না। ঠানদি প্রবালের পরিচয় পেয়ে ব’লে উঠলেন—তা বরের বন্ধু যখন তখন বরের হয়ে গান গাইলে মোটেই দোষ নেই। বর তো থামূলেন, এখন প্রবাল এসে আসরট জমিয়ে তোলো ভাই, নইলে নেহাৎ ফিকে লাগছে।” প্রবাল বললে--আমি কোথায় বলতে এসেছি যে, ভোরের ট্রেণেই আমায় ফিরে যেতে হবে । বর-কনে তো যাবে বেলা ন’টার ট্রেণে। বাড়ীতে বাবার অসুখ, আমি না গেলে তার ওষুধপত্রের বন্দোবস্ত হবে না। তা না আপনি কিনা আমার গান শুনতে চাইছেন। যখন কুটুম্বিতাই হ’ল তখন কেদারের ল্যাজ ধ’রে মাঝে মাঝে আসতেই তো হবে । শুনবেন তখন যত ইচ্ছে । শেষে অরুচি না হ’য়ে যায় ।” ঠানদিদি র্তা’র কাফন-পর। হাতখানি কপালে ঠেকিয়ে মধুর স্বরে বললেন—আ—কপাল, আমার কি ভাই সেই