পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

98३ অদেষ্ট, যে মধ্যে মধ্যে এসে তোমাদের গান শুনব ? একেবারে তিন ক্রোশ দূরে বাড়ী ; বউ-বেট। সব থাকে কলকাতায়, বুড়োবুড়ীতে ভিটে আগলে পড়ে আছি। কৰ্ত্তাটি আবার চোথে দেখেন না ; তাকে ফেলে কোথাও কি আমার এক পা যাবার জো আছে ? প্রিয়র বাবা নেহাং গিয়ে ধ’রে আনলে, তাই আসা। বললে, পিসী, তুমি ন গেলে কিছুতেই আমার কাজ উদ্ধার হবে না। তাতেই না এসে থাকৃতে পারলেম না । গান গল্প শুনতে আমার চিরকালই খুব সর্থ, কিন্তু অদৃষ্টে এখন রাতে শেয়াল কুকুরের আর দিনে ঝি ঝি পোকা আর ব্যাঙের গাম শুনেই কাটে। ম্যালেরিয়ার ভয়ে দেশে তো আর মাতুয নেই যারা আছে তারা আমাদেরই মতো বুড়োবুড়ী । ভিটেতে সন্ধ্যে জালুবার জন্যে মাটি কামড়ে সব প’ড়ে আছে। সেবা বিরক্ত হ’য়ে ব’লে উঠল—কি ঠানদি বাজে বকে যাচ্ছ ? ঠান্‌দি নিঃশ্বাস ফেলে বললেন—বাজে বকুনীই বটে ! অতীতের সিন্দুক এমনি বোঝাই হ’য়ে উঠেছে যে, কথার ফঁাকে তা’র কেবল খানিক ক’রে বেরিয়ে প’ড়ে বোঝা হাস্কা করতে চায়। ত বোসে দাদ। এই থানটিতে, ব’সে গান ধর ।” ঠানদিদির শুক্ল কেশের অমান্য করতে প্রবালের আর সাহস হ’ল না। দুটি তরুণীর নীরব আবেদনও যে ঠানদির অনুরোধের পিছনে উকি মারছে তাও সে মেনে নিলে । তা ছাড়া ফুটন্ত গোলাপের মতো সেবার ঢলঢ়লে মুখখানি কিছুক্ষণ ব’সে দেখবার প্রলোভনও সে দমন কবুতে পারলে না। রূপ বিশ্ব-বিধাতার একটি বিশেষ দান। সে রূপ যারই অধিকারে থাকুন কেন, সৌন্দর্য্যের উপাসক যার। তা’র তা’ দেখে তৃপ্ত হবেই। প্রবাল ছেলেটির হৃদয় ছিল বড় মধুর ; স্নেহ, প্রেম, ভালোবাসা সবেতে তার অন্তরটি পরিপূর্ণ ছিল। সংসারের যা-কিছু সুন্দর জিনিষ সবই তা’র মনে সহজেই বেশ একটি ছাপ রাখতে পারত। সে তথম বাসর-ঘরে আসন গ্রহণ ক’রে সাধ। গলায় গান ধরূলে— সখি নয়ন না তিরপিত ভেল, লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখমু তবু হিয়ে জুড়ন না গেল । প্রবাসী-বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড কোন অতীত যুগে প্রেম-পরিপূর্ণ একথানি হৃদয় হ’তে এই আবেগ-ভরা বাণী উচ্চারিত হয়েছিল । বহুযুগ ধরে’ সার। দেশে সে ত’ার চিরন্তন বিজয়বারতাকে একটি অখণ্ড সুরে ভ’রে রেখেছে । পুরাতন হ’লেও তা’ নিত্য-নূতন সৌন্দর্য্য প্রকাশের দাবী রাখে । - প্রবালের সরল মধুর কণ্ঠস্বর ঘরখানি জম্ জম্ ক’রে তুললে । বাইরে অশ্রান্ত বাদল-ধার তা’র মধুর রাগিণীর ঝঙ্কারে মানবশিশুর কণ্ঠের সঙ্গে অমৰ্ত্ত্যলোকের একটি অপূৰ্ব্ব, সুর মিলিয়ে সঙ্গত করতে লাগল। একটার পর দু’টে। গান গেয়ে প্রবাল উঠে দাড়াল ; যদিচ শ্রোতার তা’কে এত শীগগীর মুক্তি দিতে চাইছিল না। ঠানদিদি প্রবালের মাথায় হাত দিয়ে আশীৰ্ব্বাদ করলেন—আহ। গান গাইলে না তো ভাই যেন মধু-বৃষ্টি করলে । বেঁচে থাক, দাদা ; আমার চুলের মতন আগুস্তি বছর তোমার পরমাই হোকু। এই চাচা গলায় গান গেয়ে সবাইকে যেন চিরদিন তৃপ্তি দিতে পার । প্রবালের সঙ্গে কেদার ও একবার কি দর্কারে উঠে বাইরে চলে গেল। ঠানদিদি এই ফঁাকে রাত্রের আহার সেরে নেবার জন্যে উঠে পড়লেন। প্রিয় ঘোমটার বালাই থেকে মুক্তি পেয়ে সেবাকে জড়িয়ে ধ’রে ব’লে উঠ ল, আহা ভাই সই এই প্রবালের সঙ্গে ঘদি তোর বিয়ে হ’তো তা হ’লে কি মজাই না হ’ত । সেবা গুম্‌ ক’রে সইয়ের পিঠে একটা কীল বসিয়ে দিয়ে সেবা শুধু বললে—রাক্ষুসী— প্রিয় বলে উঠল—উঃ আচ্ছ জোর তোর কন্দ্রীতে— বিয়ে হ’লে ভালো হ’ত এই জন্যেই বলছি যে, তা হ’লে দুই সইয়ে এক জায়গায় থাকৃতে পেতাম। কি এক পাগল মামুষের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে ! দু’জনেই সংসার-জ্ঞানহীন তরুণী, কোন কথাটা ভাব উচিৎ। আর কোনটা না, কোনটাই বা মুখ ফুটে বলা অন্যায় এসব সাং পারিক বা ব্যবহারিক নীতিশাস্ত্রের কথা এখনও তাদের জ্ঞান-রাজ্যের সম্পূর্ণ বাইরে। নইলে বিবাহিতা সইকে প্রিয় একথাটি কখনই বলতে সাহস করতে পারত না। অবশ্ব কেবল ভাবনাটুকু তা’র মনের মধ্যে উকি মারলে ত ক্ষতি ছিল না।