পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y 88 কেদারের স্ব ভাবে দাগটি নেই, সেট। মোটেই খোসামুদে কথা নয় । এখন সবার চীংকার শুনে তার বুকটা ধড়াস্ ক’রে উঠল। সাধ তা’র অপূর্ণ থাকুক তাতে বিশেষ দুঃখ নেই । কিন্তু বিয়ের ক’নে কচি মেয়ে এখনি মনে ব্যথা পাবে। আহা ! এখানে তা’র আপন জন বলতে এখন কেই বা আছে ? দুটো মিষ্টি কথাই তা’র এখন সাস্তুন । তা’র পর কেদারেরও মুখ কালে হ’য়ে উঠবে। তাড়াতাড়ি বরণডালা হাতে নিয়ে গিন্নী ছেলে-বউকে বরণ করতে গিয়ে একটি সিদূর-ভরা সোনার কোট বউএর হাতে দিয়ে তা’র মুখের কাপড় খুললেন। এদিকে গরম আর মানুষের ছড়োহুড়ি তা’র উপর সকলকার চীংকার শুনে বেচাণী বউ তখন ঘেমে উঠেছে। ক’নের কপালের চন্দনের টিপের উপর ঘামের ফোটা যেন মুক্তোর মতন ফুট্‌ফুট কবৃছে। প্রিয়ত্রত রূপসী নয়, তবে তেমন কালোও নয়, বরং তার মুখের একটি কোমল শ্ৰী ছিল যা অনেক সময় নিখুৎ স্বন্দরীদের মুখেও দুল্লভ ! মোট কথা, ক’নে দেখে মধুমতী অপ্রসন্ন হলেন না, বরং বললেন—কী সব চেচিয়ে সোরগোল করছি —ডাক-সাইটে সোন্দর না হোকৃ, ছিরিখানি তো মন্দ না। তখন সাহসে বুক বেঁধে ক’নের সঙ্গেকার ঝি ব’লে উঠল—আমাদের মা ঠাকুরুণ পাউডার আর ঘসে দিতে জানেননি, তাতেই রঙ মাটো-মাটো দেখাচ্ছে, মা । তার ওপর এই তো সে-দিন জর থেকে উঠল, বারো মাস বাপ কলকাতায় থাকে, দু’চার মাসের জন্যে দেশে আসা। এলেই জরজাড়ির ছাড়ান নেই। মুখে আগুন দেশের জোরে হাওয়ার । যাকে ছোবে তার রঙে এক পোচ কালী লাগিয়ে তবে তা’কে ছাড়বে।” * কেদারের ছোট বোন প্রীতি ব’লে উঠল—ওমা—দেখছ তোমার বউ এর নাক কেমন টিকলে, ঠিক যেন টিয়াপাখীর মতো, না ভাই মেজ-দি ? গিল্পী মেয়ের পরিহাস বুঝতে পেরে আবৃত্তি করলেন, নাক খাদী-থ:দ| চোক ভাসা সেই মেয়েটির মুখ খাস। ওরে তোরা সব চুপচাপ দাড়িয়ে কেন ? উলু দে, প্রবাসী – বৈশাখ, OHO ෆ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড না ! বড় বউ মা, শাকে ফু দাও, দেবীর মা ছিরিখানা লক্ষ্মীর ঘর থেকে বের করে আন না ভাই ।” এমনি ভাবে প্রথমেই প্রিয়ত্রতা তার শাশুড়ীর স্বনজরে পড়ে গেল। তা’র বড়-জা, মেজ-জ। এটা মোটেই পছন্দ করলে না। বিয়ের পর এক সপ্তাহ প্রিয় শাশুড়ীর কাছে ছিল ; মার ও ঠানদির উপদেশ মতো সে দুপুর-বেলা আস্তে-আস্তে শাশুড়ীর কাছে গিয়ে তার মাথার চুলগুলিতে হাত বুলিয়ে দিত, সন্ধ্যার পর তার পায়ে হাত বুলোত । তা’তে তা’র কচি হৃদয়ের শ্রদ্ধার ভাব সেই ছোট সেবাগুলির মধ্যে বেশ ফুটে উঠত। মধুমতীর দাণী চাক্রাণীর অভাব ছিল না । কিন্তু মেয়ে বা বউদের কাছ থেকে এধরণের সেবা তিনি কখনো পাননি ; তাতেই নব-বধুর সেবায় তিনি যেন একটি নূতন আনন্দের স্বাদ পেয়ে ছিলেন। একদিন চঞ্চল শাশুড়ী জী-দের সঙ্গে খেতে বসে কথায় কথায় প্রিয়ত্রতাকে বলেছিল, তোমাদের কলকাতার বাসায় ঝি আছে তো বউ, না নিজেদেরই কাজকৰ্ম্ম ক’রে নিতে হয় ? প্রিয়ত্রতা বললে—ঠিকের ঝি আছে ; আর দেশের একজনদেব বাড়ীর একটি স্ত্রীলোক কেউ কোথাও নেই ব’লে আমাদের কাছেই থাকেন ; এক বেলা তিনি রণধেন, আর এক বেলা মা র শধেন ৷” চঞ্চল ভ্ৰ কুঁচকে বললে—মোটে একটি ঝি! তা’ গেরস্ত লোক এর বেশী আর রাখবেই বা কোথেকে ? আর আমাদের সব শুদ্ধে ক’জন বি-চাকর ঠাকুর-ঝি, বারোজন, না ? মাকে তেল মাথায় যে নাপ্তিনী সে ছাড়া । প্রিয়ত্রতা বুঝতে পারলে তা’র বাপের দরিদ্রতার উল্লেখ করবার জন্যেই এই বড়মহিষীর পরিচয়-প্রসঙ্গ । সে উত্তর দিলে না, চুপ-চাপ খেয়ে যেতে লাগল। চঞ্চল আবার বললে—তোমার মাকে তেল-টেল কে মাখিয়ে দেয়, ঝিই বুঝি ? প্রিয়ত্রতা বললে—আমার মাকে তেল মাথাবার দরকার হয় না ; তিনি নিজেই মাখেন। তবে সন্ধ্যের পপ তিনি একটু যখন শুয়ে পড়েন তখন আমি কি আমার ছোট বোন তার পা টিপে দিই। নয়নতারা একটু স্বর-টেনে বললে—তাতেই পায়ে তেল দেওয়া তোমার