পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૦8 অনুরোধ করা হয়। তৎক্ষণাৎ ৫০ টাকার পরিবর্ষে ১০৩ টাকা সংগৃহীত হয়। নমঃপূদ্র জাতি শিক্ষার জন্ত কিরূপ ব্যাকুল হইয়াছে, এই ঘটনা তাহার উজ্জ্বল প্রমাণ । তৎপরে যশোহর জেলার নমঃশুদ্রদের এক মন্ত্রণা-সঙ্গ হয়। সভায় যশোহর সদর, মাগুরা, ঝিলেদহ ও নড়াইল মহকুমা হইতে প্রায় আড়াই হাজার লোক আসিয়াছিলেন। প্রায় তিন শত স্ত্রীলোকও উপস্থিত ছিলেন । আগস্তুক ব্যক্তিদিগের অভ্যর্থনার জন্য এক কমিটি হইয়াছিল। শ্ৰীযুক্ত গুরুচরণ সমাদার সেই কমিটির সভাপতি ছিলেন । গ্রামবাসীরা অগস্তুকদিগের আহারের জন্য একমণ চাউল, তদুপযুক্ত ডাইল, তরকারী, তৈল, লবণ ইত্যাদি দান করিয়াছিলেন এবং ভলণ্টিয়ারগণ সমবেত ব্যক্তিদিগকে বিশেষ যত্বের সহিত আহার করাইয়াছিলেন । বেল ১টার সময় মন্ত্রণাসভার কায্য আরস্ত হয়। এই সভায় ইহা ধাৰ্য্য হয় যে, যশোহর জেলার নমঃশূদ্রগণ ৭ হইতে ১২ বৎসরের বালক ও বালিকাদিগকে বিদ্যালয়ে পাঠাইতে বাধ্য হুইবে এবং যে-গ্রামে ২৫টি ছাত্র ও ছাত্রী আছে, তথায় বালক ও বালিকাবিদ্যালয় স্থাপন করবে। বিদ্যালয়সমুহের ব্যয়নিৰ্বাহীর্থ প্রত্যেক গৃহস্থ নির্দিষ্ট পরিমাণ শস্য দিবে। গৃহিণীগণ প্রতিদিন একটি ভাণ্ডে চাউল দান করিবেন । বিবাহ, শ্রাদ্ধ ইত্যাদি কাৰ্য্যে যে-ব্যয় হইবে, তাহ। হইতে টাকা প্রতি এক আনা বিদ্যালয়ের জন্ত দান কপ্লিবেন । এখন নমঃপূদ্রদের মধ্যে দুই-তিন বৎসরের মেয়ের সহিতও দশ এগার ৰৎসরের ছেলের বিবাহ হয়। এই কুপ্রথা শিবারণের জন্ত সমবেত নমঃপূদ্রগণ এই নিৰ্দ্ধারণ কয়িয়াছেন যে, ১২ বৎসরের পূৰ্ব্বে কন্যার ও ২• বৎসরের পূৰ্ব্বে পুত্রের বিবাহ দিবেন না । অন্নপ্রশান, বিবাহ ও শ্ৰান্ধ প্রভৃতি ক্রিয়া যাহতে অল্পব্যয়ে নির্বাহ হয়, সকলেই তাহার জন্য যত্নবান হইবেন । গবর্ণমেণ্ট শিক্ষা-বিস্তারের জন্য যে-বিল উপস্থিত করিয়াছেন, এই সভা সম্পূর্ণরূপে তাহ সমর্থন করিয়াছেন । ইউনিয়ানবোর্ড,লোক্যাল বোর্ড,ষ্ট্রিক্ট বোর্ড, ও বাবস্থাপক সভায় যাহাতে নমঃশূদ্র সভ্য মনোনীত হইতে পারে, তজ্জন্ত এই সভা গবর্ণমেণ্ট কে অনুরোধ করিয়াছে। নমঃশূদ্র ছাত্রদিগকে মেডিক্যালু, ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি ও শিল্পবিদ্যালয়ে ভৰ্ত্তি করিবার হুবিধা করিয়া দিতে গবৰ্ণমেণ্ট কে অনুরোধ করা হইবে। যশোহর জেলার সমস্ত নমঃশূদ্র নরনারীকে সর্বপ্রকার হিতকর কার্য্যে সংঘবন্ধ করিবার অভিপ্রায়ে জেলাসমিতি গঠিত হইয়াছে । ডাক্তার প্রাণকৃষ্ণ আচাৰ্য্য তাহার সভাপতি : বাবু রসিকচন্দ্র বিশ্বাস বি-এ, মালিয়tট বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্ৰীযুত শরচ্চন্দ্র মজুমদার, বি-এ প্রভৃতি তাহার সম্পাদক ; শ্ৰীযুক্ত কালিদাস বিশ্বাস ধনাধ্যক্ষ ; শ্ৰীযুত রাসমোহন মিশ্র প্রভৃতি কয়েক জন ধন-সংগ্রহকারী ; এবং প্রত্যেক মহকুমার কতিপয় প্রধান লোক কমিটির সভ্য মনোনীত হইয়াছেন । —সঞ্জীবনী বঁt }ড়-জেল ডাক-সমিতির পঞ্চমবার্ষিক অধিবেশনে রায় যোগেশচন্দ্র রায় বুাহাদুর, এম-এ, বিদ্যানিধি, সভাপতির সম্বোধনের সারমৰ্ম্ম যে-ডাক ঘরের সহিত চল্লিশ-পঞ্চাশ বৎসরের সম্পর্ক, তাকে চিনি না, জানি না বল চলে না । যদি বা না জানি, জানা কৰ্ত্তব্য মনে করি । কারণ, ডাকঘর আমার দেশের কৰ্ম্মচারিগণ আমার দেশের। শুধু আমার নয়, ডাকঘরের সহিত জনসাধারণের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক পরোক্ষও নয়, প্রত্যক্ষ । সরকারী অপর কোনও বিভাগের সহিত জনসাধারণের এমন প্রত্যক্ষ ব্যবহার আবগুক হয় না। যারা লিখতে পড়তে জানে, তাদের ত কথাই নাই ; যারা জালে না—কোন নিভৃত পল্লীর অজানা কোণে প্রবাসী —বৈশাখ, `ද්‍රිෆL [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড কোন দুঃখী বিধবা, কোন মাতা, কোন ভগিনী বাস করছে, তারাও ডাকঘর দিয়ে দূরস্থ প্রিয়জনের সংবাদ পাচ্ছে। কত লোকের কত জিনিষ যাচ্ছে-আস্ছে ; টাকা-কড়ির লেন-দেন হচ্ছে ; কৰ্ম্মচারিগণের সত্যে নির্ভর করে এক বৃহৎ মহাজনি চলছে। অপর কথা কি, মেলেরিয়ারোগে কুইনীন চাই, ডাকঘর যাও, ডাকঘর যেন ডাক্তার-খান । সরকারী আর-একটি বিভাগ নাই, যেখানে এত রকমের কাজ, এত অসংখ্য লোকের কাজ স্থানীয় দুই-চারিজন কৰ্ম্মচারীদ্বারা চলছে। এই যে ডাকঘর ইহা নুতন অনুষ্ঠান, পূর্বকালে ছিল না । অবশ্ব রাজার দূত থাকৃত ; বণিককে হাটের বাৰ্ত্ত পেতে দূত পাঠাতে হত। প্রজাসাধারণের পক্ষেও সেই অবস্থা, দুই-এক পরস ব্যয়ে সংবাদ পাওয়া ঘটত না । কতকগুলি লোক বাৰ্ত্ত বহন করত। ভাদিকে বলুপ্ত ‘ধাআড়িয়া', অর্থাৎ ধাবক, বৰ্ত্তমান কালের “রানার’ । পথ দুর্গম ; দস্থ্য ও স্বাপদ পশু হতে ভয় ছিল। ধীজড়িয়ার অস্ত্রধারী হয়ে দৌড়াইত ; রাত্ৰি হ’লে মশাল জেলে চীৎকার করতে-করতে যেত। সে-অস্ত্রের চিহ্ন এখন রানারের বর্ষাতে, এবং ডাক-ইকের চিহ্ন শিকলের ঝনঝনে আছে । সেই ডাক হতে চিঠিপত্রদি প্রেরণের কার্য্য-বিভাগের নাম ডাকঘর হয়েছে । বর্তমান ডাকঘর গবর্ণমেণ্টের হাতে। আমরা ভুলে যাই, অন্ত লোকেও ডাকযরের কাজ করতে পারত। দেশের সব রেল সরকারের হাতে নাই, তারের সংবাদ এক এক কোম্পানী পাঠাচ্ছেন । কিন্তু ডাকবিভাগ গবর্ণমেণ্টের হওয়াতে প্রজাবর্গের সুবিধা হয়েছে, অস্তের যা অসাধা হ’ত, ইহাতে তা সাধ্য হয়েছে। বর্তমান ডাকথর এক অভাবনীয় ব্যাপার } রেল হওয়ার পর ডাকবিভাগের কৰ্ম্ম-বাহুল্য হয়েছে । আমাদের জীবনযাত্রীর সহিত এমন জড়িত যে, বন্ধ হ’লে বর্তমান কালকে অতীতে প্রবেশ করতে হবে, সভ্যতার গতি ক্লদ্ধ হবে। র্যারা এই ব্যাপারে নিযুক্ত আছেন, আমরা তাদের খবর রাখি না, তাদের কষ্টের কথা ভাবি না। চারি বৎসর পূর্বে আমি যখন বাঁকুড়ায় প্রথম আসি, তখন এক ঘটনায় আমার এইরূপ উদাসীনতায় প্রবল ধাক্কা লাগে, আমার নিকট ডাকঘরের স্বরূপ প্রতীয়মান হয় । বেলা একটা হ'তে তিনটা পর্যন্ত বাকুড়ার ডাকঘরের বারাগুtয় দাড়িয়ে কাৰ্য্যকলাপ লক্ষ্য ক’রেছিলাম, গবাক্ষের অন্তরালে র্যারা বাহিরের লোকের কাজ করছিলেন, উদিকে কলের যন্ত্র মনে হয়েছিল। দেই একই মণি-অর্ডার, একই রেজিষ্টারি, একই সেভিংস্বেঙ্ক—সব পুরাতন, প্রত্যহ পুরাতন, প্রতি মিনিটে পুরাতন, নুতন কোথাও নাই, ভাব বার নাই, বুদ্ধি খেলাবার নাই, অথচ সৰ্ব্বল সাবধান থাকৃতে হয়, অর্থমনস্ক হবার যে নাই, ভুল হ’লে বিপত্তির সীমা নাই। নূতনত্বে আনন্দ, সে-আনন্দ কই ? আর আনন্দ ব্যতীত জীবনে রস কই ? সত্য কথা বলতে কি, আমি এইরকম কাজ দশ দিন করতে পারতাম কি না সন্দেহ । আমরা ডাকঘরের ও রেলের টিকিট-বেচা কেরাণীর অশিষ্ট ব্যবহারে ক্ষুণ্ণ হই ; কিন্তু ভাবি না, ধৈর্য্য অসীম না হ’লে কৰ্ম্মদোষে মেজাজ থিটুথিটা হয়ে পড়ে । রেলের টিকিট-বেচা কেরাণী কৰ্ম্মের বিরাম আছে, কিন্তু ডাকঘরের কেরাণীর নাই । কাহাকে-কাহাকেও ভোর ৫ট। হইতে রাত্রি ৯ট। পয্যন্ত খাটুতে হয়, দশটার আগে স্নানাহারের ছুটি আছে বটে, কিন্তু সেটা ছুটি নয়, ছুটাছুটি । হৃদয়বান ও চিত্ত-সম্পন্ন মানবকে কলে পরিণত করলে তার মানবত্ব লুপ্ত হয় । শ্রম ও বিশ্রাম,— দুই নইলে মামুষের স্বাস্থোর ও আয়ুর হানি হয় । জানি না, ডাকঘরের কৰ্ম্মগরিগণের পরমায়ু কত । অবগু ডাকঘরের কাজ বন্ধ করা যেতে পারে না, কিন্তু আরও লোক নিযুক্ত করা যেতে পারত। যে-কৰ্ম্মে বিশ্রাম পাই না, নিজের বলতে একটু সময় পাই না, সেকৰ্ম্মের বেতন যতই হ’ক, বtyনীয় নয় । - এইরূপ আরও কত কষ্ট আপনাদের থাকৃতে পারে, ভুক্তভোগী