পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rebo প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড ক্ষত্রিয়। কিন্তু “স্বয়ম্ অসিদ্ধং কথম পরান সাধয়েৎ" ? নিজে যিনি সিদ্ধ হন নাই, তিনি পরকে কেমন করিয়া সিদ্ধি দিবেন ? যিনি দুৰ্ব্বলকে, অত্যাচরিতকে রক্ষা করিবেন, সাহস, আশ্বাস ও আশ্রয় দিবেন, তাহার আত্মরক্ষায় সমর্থ হওয়া গোড়াতেই চাই । অতএব র্যাহার ক্ষত্ৰিয়, এবং ক্ষত্ৰিয়ত্বের সম্মান দাবী করেন, র্তাহাদিগকে আত্মরক্ষায় সমর্থ হইতে হইবে এবং দুৰ্ব্বল ও অত্যাচরিতকে রক্ষা করিতে ও আশ্রয় দিতে হইবে । অবশ্য তাহাদিগকে রক্ষা করিলে ও আশ্রয় দিলেই কৰ্ত্তব্যের সমাপ্তি হইবে না ; তাহাদিগকেও আত্মরক্ষায় সমর্থ করিয়৷ তুলিতে হইবে । আত্মরক্ষার সামর্থ্য দৈহিক শক্তির উপর এবং অস্ত্রব্যবহারে দক্ষতার উপর নির্ভর করে । কিন্তু যাহার মনের জোর নাই, সাহস ও দৃঢ়তা নাই, কোনপ্রকারে বঁচিয়া থাকা অপেক্ষা সম্মানের সহিত মৃত্যু শ্ৰেয়: এই বিশ্বাস নাই, তাহার দৈহিক বল ও অস্ত্রচালনায় দক্ষতা অধিক হইলেও, সে সকল সময় আত্মরক্ষার যথেষ্ট চেষ্টা করিতে সমর্থ ন হইতেও পারে। অতএব, সৰ্ব্বাগ্রে নির্ভয় হইতে হইবে । নানা কারণে শৈশব ও বাল্যকাল হইতেই কাহারও কাহারও ভয় বেশী বা কম থাকে । কিন্তু আত্মপরীক্ষা দ্বারা ও পুন:-পুনঃ অবিরাম চেষ্ট৷ করিয়া ভয়াতুর লোকেও যে খুব সাহসী হইয়া উঠিতে পারে, তাহার অনেক প্রমাণ ইতিহাসে ও বিখ্যাত লোকদের জীবনচরিতে পাওয়া যায়। প্রত্যক্ষ জ্ঞান হইতে তাহার। বলিয়াছেন, যে, ভয় খুব কমাইয়া আনা যায়। এই কথা কেবল যে ব্যক্তির পক্ষে সত্য তাহা নহে, জাতির পক্ষেও সত্য । ইতিহাসের কোন সময়ে যে-জাতি ভীরুতার প্রমাণ দিয়াছে, পরবর্তী যুগে তাহারাই সাহসেরও প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত দেখাইয়াছে। সেইজন্ত, আমরা সকলেই, কললাভ সম্বন্ধে নিঃসংশয় হইয়া, সম্পূর্ণরূপে ভয়শূন্য হইবার চেষ্টা করিতে পারি। একাগ্রতার সহিত সাধনা করিলে সিদ্ধিলাভ অবশ্যম্ভাবী। ইহার প্রমাণের জন্য দূরদেশে যাইতে হইবে না, অতীত ইতিহাসের পৃষ্ঠা উদঘাটন করিতে হইবে না । আমরা এখন কলিকাতায় বসিয়া দেখিতেছি, ভীরু বলিয়া যাহীদের নিন্দ সৰ্ব্বাপেক্ষা অধিক ঘোষিত হইয়াছিল, তাহার। অনেকে আত্মরক্ষায় অন্য কাহারও চেয়ে কম সাহস ও দক্ষতা দেখায় নাই, দেখাইতেছে না । পাঠকেরা সকলেই জানেন, আমাদের দেশে আত্মরক্ষার প্রয়োজন কিরূপ এবং তাহার উপলক্ষ কত বেশী। অসহায়, দুৰ্ব্বল ও অত্যাচরিতের সাহায্য করিবার প্রয়োজন গ্রামে নগরে গৃহে পথে ঘাটে মাঠে সৰ্ব্বত্র প্রত্যহ ঘটিতেছে । অতএব ক্ষাত্রধৰ্ম্মের আচরণ করিবার অরসর খুবই রহিয়াছে। সকল ক্ষত্রিয়ের নিকট নিবেদন, র্তাহার ক্ষত্রিয়ধৰ্ম্মের অনুসরণ করুন । ক্ষত্রধৰ্ম্মাচরণে অধিকার কেবল যে ক্ষত্রিয়েরই আছে, তাহা নহে ; অন্তেরও আছে। যাহারা শাস্ত্রীয় প্রমাণ চান, র্তাহারা জানেন, দ্রোণের মত পরশুরামের মত ব্ৰাক্ষণ ক্ষত্রিয়ের কাজ করিয়াছিলেন ; আবার যাহারা জাতিতে বৈষ্ঠ বা শূদ্র এরূপ লোকেরও ক্ষত্রিয়ের মত আচরণের দুষ্টান্ত শাস্ত্রে ও ইতিহাসে আছে। যাহার শাস্ত্রীয় প্রমাণ চান না, তাহাদিগকে বলিয়া দিতে হইবে না, যে, ইতর প্রাণীরাও যখন আত্মরক্ষা ও আশ্রিতের রক্ষা করিয়া থাকে, তখন প্রত্যেক মানুষের তাহা করিবার অধিকার অবশ্যই আছে। ইহা সকলেরই অধিকারভুক্ত ও কৰ্ত্তব্য । বস্তুতঃ প্রত্যেক মানুষের প্রকৃতিতে ব্রাহ্মণাদি সকল জাতির গুণ ও ধৰ্ম্ম রহিয়াছে। জ্ঞানোপার্জন ও সাত্বিকতা লাভ, আত্মরক্ষা ও আৰ্ত্তরক্ষা, পণ্য উৎপাদন ও বিতরণ দ্বারা উপার্জন ও সমাজসেবা, এবং নানাপ্রকারে অপরের আজ্ঞাপালন ও সেবা প্রত্যেক মানুষই করিতে পারেন এবং অনেকেই করিয়৷ থাকেন । কলিকাতায় দাঙ্গাহাঙ্গামা ও খুনখুনি কলিকাতায় কয়েক দিন ধরিয়া যে দাঙ্গাহাঙ্গামা ও খুনখুনি চলিতেছে, তাহ সাতিশয় শোচনীয় এবং হিপূমুসমলমান উভয় সম্প্রদায়ের পক্ষেই ঘোরতর লজ্জার বিষয় এবং বিশেষ অনিষ্টকর। কোন সম্প্রদায়ের দোষ কতটুকু, তাহ নিক্তির ওজনে স্থির করিবার সামর্থ আমাদের নাই, ইচ্ছা ও নাই, বোধ হয় সে-চেষ্টা করিয়া এখন কোন লাভ ও নাই ।