পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] ধৰ্ম্মের নামে এবং ধৰ্ম্মাচরণকে উপলক্ষ করিয়া ঘোরতর অধৰ্ম্ম পৃথিবীতে শত শত বৎসর হইয়া আসিতেছে। বক্ষ্যমাণ ব্যাপারটিও এই-জাতীয় অধৰ্ম্ম । আৰ্য্যসমাজীরা এমন একটি রাস্ত দিয়া বাজনার সঙ্গে-সঙ্গে ধৰ্ম্মসঙ্গীত গাহিতে-গাহিতে যাইতেছিলেন যাহার উপর একটি মসজিদ ছিল । মসজিদের নিকট র্তাহার পৌছিলে মুসলমানের তাহাদের গান-বাজনায় আপত্তি করেন। এই বিষয়ে তর্কবিতর্ক হইতে হইতে মারামারি আরম্ভ হয়। দাঙ্গা-হাঙ্গামার আরম্ভ এইরূপে হয় । আমরা অনেক বার বলিয়াছি, কোনও সম্প্রদায়ের লোক যখন র্তাহাদের ধৰ্ম্মমন্দিরে আরাধনা প্রার্থনাদি করেন, তখন তাহার নিকটে কোনপ্রকার গোলমাল না হওয়া বাঞ্ছনীয় । কেহ যদি এরূপ পূজা-অৰ্চনায় ব্যাঘাত জন্মাইবার জন্যই কোন-প্রকার গোলমাল করে, তাহা অত্যন্ত গহিত ও তাহ বন্ধ করিবার আইনসঙ্গত উপায় অবলম্বন করা উচিত । কিন্তু যদি এইরূপ-উদ্দেশ্ববিহীন সাধারণ গোলমালে কোন সম্প্রদায় আপত্তি করেন, তাহা হইলে হয় সকল-রকম গোলমালেই আপত্তি করা তাহদের উচিত, নতুবা সকলরকম গোলমালেই সমান ঔদার্য্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন কৰ্ত্তব্য। অতীত কালে মুসলমানের শেষোক্ত প্রশংসনীর পন্থাই অবলম্বন করিতেন । কিন্তু কয়েক বৎসর হইতে র্তাহারা অন্য সব গোলমাল সহ করেন, কেবল হিন্দুদের ীিতবাদ্যসংযুক্ত শোভাযাত্রার গোলমাল সহ করেন না। ইহা আমাদের বিবেচনায় অযৌক্তিক। মুসলমানদিগের মহরমের সময় তাহারা নিজেদের মসজিদ ও অন্যান্য ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের ধৰ্ম্মমন্দিরের সম্মুখে ঢাক বাজাইয়া থাকেন। তাহা মুসলমানের অন্যায় মনে করেন না। অন্য ধৰ্ম্ম সম্প্রদায়ের লোকেরাও তাহাতে আপত্তি করেন না। আপত্তি না করাই উচিত। কারণ, যদিও জ্ঞানী অনেক মুসলমান মহরম শোকের ব্যাপার বলিয়৷ তদুপলক্ষে তাজিয়া লইয়া শোভাযাত্র ও বাদ্যের বিরোধী, তথাপি যে-সকল মুসলমানের মত অন্তরূপ, র্তাহার বিষাদের পর্বকে উৎসবে পরিণত করিলে, অন্যের তাহাতে বাধা দিবার অধিকার নাই । বিবিধ প্রসঙ্গ—কলিকাতায় দাঙ্গাহাঙ্গামা ও খুনখুনি

  • .e:S

অনেক মসজিদ কলিকাতার ও অন্য অনেক বড় বড় সহরের বড় বড় রাস্তার উপর অবস্থিত । সেইরূপ অনেক রাস্তায় প্রত্যহ ভোর হইতে অনেক রাত্রি পর্য্যন্ত জনকোলাহল এবং নান-প্রকার গাড়ীর ঘড়ঘড়ানি এবং ভেপুর ও ঘণ্টার আওয়াজ লাগিয়াই থাকে। এই ষে প্রাত্যহিক গোলমাল, ইহা কালেভদ্রে হিন্দুদের নগরকীৰ্ত্তন বা অন্যবিধ গানবাজনা ও শোভাযাত্রা অপেক্ষা কোন অংশেই কম নহে, বরং বেশী । কিন্তু রোজকার এই গোলমালে কোন আপত্তি না করিয়া মুসলমানেরা খুবই স্ববিবেচনার কাজ করিয়া থাকেন ; এই স্ববিবেচনা ও সহিষ্ণুতা যদি তাহারা হিন্দুদের গীতবাদ্যসহকুত শোভামাত্র সম্বন্ধেও প্রদর্শন করেন, তাহ হইলে বিবাদের ও রক্তপাতের কোন কারণ ঘটে না । আমরা জানি না, মুসলমানদের ধৰ্ম্মে মসজিদের সম্মুখে বিশেষ কেরিয়া হিন্দুদেরই গীতবাদ্যে বাধা দিবার কোন রিধি ও আজ্ঞা আছে কি না। আরবী ভাষায় স্থপণ্ডিত কোন মুসলমান এবিষয়ে আমাদের অজ্ঞতা দূর করিলে বাধিত হইব। " কোনও দেশে যদি কেবল মুসলমানের বাস হয়, তাহ হইলে তথাকার সমুদয় ক্রিয়াকলাপ ও ব্যবস্থা মুসলমান ধৰ্ম্ম অনুসারে হইতে পারে, যদিও সেই ধৰ্ম্মাবলম্বীদের মধ্যেও মতভেদ থাকায় ঠিক একরকম ব্যবস্থা হইবার সম্ভাবনা কম । কিন্তু ভারতবর্ষের মত যে-সব দেশ নানা ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের বাসভূমি,সেখানে কেবল কোন একটিসম্প্রদায়ের স্থবিধা দেখিলে চলিবে না। হিন্দুরা যদি বলেন, এদেশে মুসলমানদের পর্ব উপলক্ষে গোবধ হইতে পারিবে না, র্তাহাদের সে-ইচ্ছা পূর্ণ হইতে পারে না—এবং দেখাও যাইতেছে, যে, ঈদ বক্রীদে গোবধ লইয়া হিন্দুরা যতই গোলমাল করুন না, প্রত্যহ যে শত শত গোবধ কেবলমাত্র খাদ্যের জন্য হইতেছে, হিন্দুরা তাহা নিবারণের যথেষ্ট চেষ্টা করেন না এবং নিবারণে সমর্থও হন নাই। অন্ত দিকে মুসলমানরা যদি বলেন, হিন্দুদের দেবমন্দির ও দেবদেবীমূৰ্ত্তি থাকিতে দিব না, কিম্বা মসজিদের সম্মুখে বা নিকটে তাহাদের গীতবাদ্য ও শোভাযাত্রা হইতে দিব না, সেআপত্তিও টিকিবে না ।