২১ e সকল দেশের ও সকল জাতির জ্ঞানী জনেরা পরমতসহিষ্ণু, এবং অন্তকেও এই পরমতসহিষ্ণুতা অবলম্বন করিতে তাহারা উপদেশ দেন। যাহারা বুঝিয়-স্থঝিয়া অন্তরের সহিত এই উপদেশ গ্রহণ করেন ও তাহার অনুসরণ করেন, র্তাহারা স্ববিবেচক। সকলে এইরূপ আচরণের শ্রেষ্ঠত। বুঝিতে নাও পারেন। কিন্তু পরমতসহিষ্ণুতা যে সাংসারিক সুবিধাজনক, তাহা বুঝিতে গভীর দার্শনিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। কলিকাতায় এই যে শোচনীয় ব্যাপারটি ঘটিল, তাহাতে হিন্দু বা মুসলমান কাহার লাভ হইল বা কীৰ্ত্তির ধ্বজ চিরস্থায়ী হইল ? বহুসংখ্যক হিন্দু ও মুসলমান হত ও আহত হইয়াছে, তদপেক্ষাও অধিকসংখ্যক লোকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং অনেকে সৰ্ব্বস্বাস্ত হইয়াছে, শত শত হিন্দু ও মুসলমান কলিকাতা ত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছে। ইহাতে কোন সম্প্রদায়েরই লাভ, সুবিধা বা সুখ্যাতি হয় নাই । যাহারা হিন্দু বা মুসলমান কিছুই নহেন, এরূপ লোকদেরও খুব ক্ষতি ও কাজের অস্ববিধা হইয়াছে। কয়েক দিন ধরিয়া কলিকাতার উত্তরাংশের সহিত ডাক ও টেলিগ্রাফ দ্বারা বাহিরের জগতের যোগ বিচ্ছিন্ন হইয়াছে বলিলেও হয় । অথচ অন্য সম্প্রদায়ের কথা ছাড়িয়া দিয়া কেবল হিন্দু ও মুসলমানদের বিষয় বিবেচনা করিলেও দেখা যায়, যে, কতকগুলি হিন্দুর অপকার্য্যের জন্য সব হিন্দু দায়ী নহে, কতকগুলি মুসলমানের অপকাৰ্য্যের জন্য সব মুসলমান দায়ী নহে। যাহারা দাঙ্গা মারামারি খুনাখুনি ধৰ্ম্মমন্দির-বিনাশ প্রভৃতি কোন অপকৰ্ম্ম করেন নাই, তাহাদের কাহারও কাহারও মনে প্রতিহিংসার ভাব এবং ঐক্লপ অপকৰ্ম্মের সহিত সহানুভূতি থাকিতে পারে। কিন্তু কাহার মনে কি আছে, তাহার বিচার অপরে করিতে পারে না ; বিচার বাহিরের আচরণেরই হয় । তাহা হইলেও আমাদের প্রত্যেকেরই নিজের নিজের হৃদয়মন পরীক্ষা করা উচিত, এবং তাহা হইতে প্রতিহিংসা ও পরমত-অসহিষ্ণুতা দূর করা কর্তব্য । হিন্দু ও মুসলমান এই উভয় সম্প্রদায়ের যে-সকল লোক ধৰ্ম্মান্ধতা, উত্তেজনা, প্রতিহিংসা বা লুটের লোভে নানা অপকৰ্ম্ম করিয়াছে, কেবল তাহারাই যদি দল’বাধিয়া প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড পরস্পরের সহিত যুদ্ধ করিত, তাহা হইলে তাহাও দুঃখের বিষয় হইলেও, যাহা ঘটিয়াছে তাহা অপেক্ষা উহ। ভাল হইত। কারণ, তাহ হইলে সম্পূর্ণ নিরপরাধ এত লোক হত ও আহত হইত না, সম্পূর্ণ নির্দোষ এত লোক ক্ষতিগ্রস্ত ও কোন কোন স্থলে সৰ্ব্বস্বাস্ত হইত না, এবং সম্পূর্ণ নিরপরাধ বহু সহস্র হিন্দু ও মুসলমানকে ভয়ে কলিকাতা ত্যাগ করিতে হইত না । যাহার সহিত কখনও কোন বিবাদ বা মনোমালিন্য হয় নাই, কোন কালে যাহাকে হয়ত চোথেও দেখা হয় নাই, এরূপ অনেক লোককেও প্রতিহিংসা ও ধৰ্ম্মান্ধতায় বিকৃতমস্তিষ্ক অনেক লোক হঠাৎ অতকিতে আঘাত ও বধ করিতেছে, ইহা অতি ঘৃণ্য কাপুরুষতা । বিবাদ বা চক্ষুষ পরিচয় যাহার সহিত আছে, তাহাকে অতকিতে বধ করা যে ভাল, তাহ বলিতেছি না। নরহত্যা এরূপ ক্ষেত্রেও দূষণীয়। কিন্তু ব্যক্তিগত বিবাদ ও শত্রুত৷ থাকিলে ও না থাকিলে উভয় ক্ষেত্রে অপরাধের প্রকারভেদ ও কিছু তারতম্য হয়। ঈশ্বর বিশেষ করিয়া কোন একটি স্থানে বাস করেন না, কেবলমাত্র কোনও ধৰ্ম্ম-সম্প্রদায়ের ধৰ্ম্মমন্দিরেই যে তিনি থাকেন, তাহীও নহে। সকল আস্তিক ধৰ্ম্মেই বলে, যে, তিনি সৰ্ব্বত্র বিদ্যমান এবং সৰ্ব্বাশ্রয়। সুতরাং কোন এক সম্প্রদায়ের ভজনালয় ভাঙ্গিয়া দিয় তাহাকে খুশি করিবার চিন্তা কোন সম্প্রদায়েরই প্রকৃত জ্ঞানী ও ধাৰ্ম্মিক লোকেরা করিতে পারেন না। বাস্তবিকও আমরা দেখিতে পাইতেছি, যে, যদিও ভারতবর্ষের অতীত ইতিহাসে মামুদ গজনবী ও অন্য কোন কোন রাজা হিন্দুর মন্দির ধ্বংস করিয়াছিলেন, তথাপি আলিগড়ের ইতিহাসাধ্যাপক মি: হবীব, কলিকাতার মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রভৃতি জ্ঞানী মুসলমান এরূপ কাৰ্য্যের নিন্দাই করিয়াছেন। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিবার জন্য ভিন্নধৰ্ম্মাবলম্বীর ভজনালয় ধ্বংস করিবার ইচ্ছারূপ মানসিক ব্যাধি হিন্দুর ছিল না। ইহা আধুনিক ব্যাধি। হিন্দুর ইতিহাসে এরূপ অপকর্মের নজীর নাই বা কম আছে। এই কারণে এরূপ গৰ্হিত কাজ যে-সকল হিন্দু করিয়াছে, আমরা মন্দিরংসকারী মুসলমানদের চেয়ে তাহাদের নিন্দা বেশী
পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/3/3e/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80_%28%E0%A6%B7%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%B6_%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%97%2C_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29.djvu/page234-1024px-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80_%28%E0%A6%B7%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%B6_%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%97%2C_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29.djvu.jpg)