পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] করিতে বাধ্য। মন্দিরধ্বংসকারী মুসলমানদের কাজের নিন্দ যে করি না, তাহা নহে । আমরা কেবল এই কথাই মনে রাখিতে চেষ্টা করিতেছি, যে, এরূপ মুসলমানদের দোষক্ষালকের বলিতে পারে যে, তাহীদের কোন কোন রাজার দৃষ্টান্ত তাহাদিগকে বিপথচালিত করিয়াছে ; কিন্তু এরূপ কিছু বলিয়া মসজিদধ্বংসকারী হিন্দুদের দোষক্ষালন করিবার বা তাহা লঘুতর প্রমাণ করিবার উপায় নাই । এইসকল দাঙ্গাহাঙ্গামার মধ্যে র্যাহার ভাল কাজ করিয়াছেন, তাহারা সৰ্ব্বথা প্রশংসনীয়। মন্দির ও মসজিদ রক্ষা করিবার জন্য যে-সকল হিন্দু ও মুসলমান প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াছেন, তাহার কেবল স্ব স্ব সম্প্রদায়ের নহে দেশবাসী সকলেরই কৃতজ্ঞতাভাজন । কাগজে দেখিলাম, স্থল বিশেষে হিন্দুর মন্দির রক্ষার ভার মুসলমানের এবং মুসলমানের মন্দির রক্ষার ভার হিন্দুর উপর অর্পিত হইয়াছিল। পরস্পরের এই সহযোগিতার ভাব অতীব প্রশংসনীয় ও আশাপ্রদ। কোন কোন মন্দির নষ্ট করিবার চেষ্ট বার বার হইয়াছে, কিন্তু স্বেচ্ছারক্ষীদের সতর্কত সাহস ও দলবদ্ধনৈপুণ্যে আততায়ীর বার বার তাড়িত হইয়াছে । ঠনঠনিয়া কালীতলার কালীমন্দির রক্ষা ইহার একটি দৃষ্টান্ত। এই মন্দির ধ্বংস করিবার চেষ্ট শত শত ব্যক্তি সম্মিলিতভাবে অনেক বার করিয়াছে, কিন্তু শ্ৰীযুক্ত পুলিনবিহারী দাস ও নন্দলাল ঘোষের নেতৃত্বে বাঙালী যুবকের আক্রমণকারীদিগকে হটাইয়া দিয়াছে। আমহাষ্ট ষ্ট্রীট ডাকঘরের নিকটবৰ্ত্তী শিবমন্দির, প্রেমচাঁদ বড়ালট্রীটের নিকটবৰ্ত্তী শিবালয়, গড়পারের বারোয়ারী কালীপূজার স্থান প্রভৃতিও এইভাবে রক্ষিত হইয়াছে । পুলিস কোথাও কিছু সাহায্য করে নাই বলিতেছি না ; কিন্তু ইহা ধ্রুব সত্য, যে, স্থানীয় বাঙালী যুবকের আত্মনির্ভরপরায়ণ ও সাহসী না হইলে মন্দিরগুলি ত রক্ষা পাইতই না, অধিকন্তু মন্দির বিনাশে সফলকাম বিকৃতমস্তিষ্ক লোকদের দ্বারা পাড়াপড়শী ও পথিকদের উপর সর্বপ্রকার অত্যাচার অবাধে অকুষ্ঠিত হইত। প্রত্যেক জায়গায় কে কি সাহসের কাজ করিয়াছেন, তাহা জানা যায় নাই, এবং যাহা দৈনিক কাগজে বাহির হইয়াছে তৎসমুদয় এখানে লিপিবদ্ধ করা বিবিধ প্রসঙ্গ দাঙ্গাহাঙ্গামী, পুলিস ও গবন্মেটি ૨SS

দুঃসাধ্য। কিন্তু কালীতলার মন্দির রক্ষার জন্য সিটি-কলেজ হোষ্টেলের ছাত্রের যেরূপ সাহস ও দলবদ্ধতার দৃষ্টান্ত দেখাইয়াছে, তাহার উল্লেখ করা আবশ্যক মনে করিতেছি । বিপন্ন অনেক লোককে যাহারা নিজের প্রাণ দিয়াও রক্ষা করিবার চেষ্টা করিয়াছেন, র্তাহারা ধন্ত । শত্রুভাবাপন্ন মুসলমান-পরিবেষ্টিত অনেক হিন্দু পরিবারকে যেসব হিন্দু আশ্রয় দিয়াছেন ও উদ্ধার করিয়াছেন র্তাহারা মহৎকাজ করিয়াছেন। মৌলানা আবুল কলাম আজাদ দৈনিক কাগজের মারফৎ জানাইয়াছেন, যে, কোন কোন স্থলে মুসলমানেরাও হিন্দুদিগকে এইরূপ সঙ্কট অবস্থা হইতে উদ্ধার করিয়াছেন। এরূপ সংবাদ সার্ভ্যান্ট কাগজেও দেখিলাম। হিন্দুরাও মুসলমানদের এইরূপ সাহায্য বহু বহু স্থলে করিয়াছেন। কোন কোন পাড়া রক্ষা করিবার জন্য পাড়ার যুবকেরা দলবদ্ধ হইয়া দিনের বেলা এবং রাত্রেও পাহারা দিয়াছেন, এবং রাত্রে টহল দিয়াছেন ; যেমন গড়পাড়ে । ইহাতে পাড়াগুলি রক্ষা পাইয়াছে। শাস্তির সময়ে সব পাড়াতেই যুবকেরা তাহাদের পাড়া রক্ষার ব্যবস্থা আরও স্বশৃঙ্খল করিবার স্বযোগ পাইবেন। যে-সব পাড়ায় হিন্দু মুসলমান উভয়েরই বাস, সেখানে উভয়ের সম্মিলিত রক্ষীদল গঠন করিবার চেষ্টা করা কৰ্ত্তব্য । কারণ, শান্তিরক্ষায় উভয়েরই সুবিধা, স্বনাম ও কল্যাণ । সম্প্রদায়বিশেষের জয়পরাজয়কে এসব স্থলে মনের মধ্যে প্রধান স্থান দিলে তাহারও কল্যাণ হয় না, দেশের হিত ত হয়ই না। কাগজে দেখিলাম, যখন বড়বাজারে শ্ৰীযুক্ত দেবীপ্রসাদ খৈতানের বাড়ী আক্রান্ত হয়, তখন র্তাহার পরিবারস্থ মহিলারা কয়েকবার গুলি চালাইয়াছিলেন, এবং তাহাতে আক্রমণকারীরা কতকটা নিরস্ত হইয়াছিল । ইহঁরা রাজপুতানার নারীদের উপযুক্ত কাজ করিয়াছেন । সকল পরিবারের নারীদের এইপ্রকারে আত্মরক্ষা করিতে শিখা উচিত। দাঙ্গাহাঙ্গামা, পুলিস ও গবষ্মেন্ট দাঙ্গাহাঙ্গামা থামাইবার জন্য এবং প্রতিহিংসা বা লুটের আশায় উন্মত্ত জনতাকে নিরস্ত করিবার নিমিত্ত