পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रैe७ · পুস্তকের দোকানে ঢুকিয়া সস্তায় ডারউইনের জগদবিখ্যাত “জীবজাতির উৎপত্তি’(Origin of species)নামক পুস্তকখানি ক্রয় করেন। ঘরে পৌছিয়াই শুনিলেন, পত্নী একটি পুত্র-সন্তানের জননী হইয়াছেন। নীলাম্বর-বাবু ভাবিলেন, তাই ত, কখনো ত আমার পুস্তক ক্রয়ের ইচ্ছা হয় না। তবে আজই বা কেন এইরূপ ইচ্ছা হইল ? ইহার কি তাহা হইলে কোন গুঢ় অর্থ আছে ? ঈশ্বর কি আমায় এই অকারণ পুস্তক ক্রয়েচ্ছার ভিতর দিয়া গোপনে কোনো আদেশ জানাইতেছেন। নীলাঙ্গর-বাবু সমস্ত রাত্রি জাগরণ করিয়া পুস্তকখানি পাঠ করিলেন। পাঠ করিয়া বুঝিলেন, মানুষের যে উন্নতি, তাহার যে ত্রহ্মের সহিত মিলনের পথে অনন্ত উদামু গতি, তাহার সমস্তটিই ভবিষ্যতের বুকে নিহিত রহিয়াছে । অতীতে যে মানব বানর ছিল, ভবিষ্যতে সে হইবে দেবতা। যুগে-যুগে, পলে পলে নিত্য নুতন ব্যক্তির জন্ম ও জীবনের ভিতর দিয়া কোনো এক অজানা স্বজন শক্তি নিরবচ্ছিন্ন আবেগে আপন আত্ম-প্রকাশে মাতিয়া উঠিয়াছে। ইহার পরিণতি কি, কোন আদর্শ সম্মুখে রাখিয়৷ এই বিশ্বশক্তি অগ্রসর হইতেছে তাহ অচিন্তনীয়। আমরা জানি শুধু আমরা এই ক্রমবিকাশ লীলা-উন্মত্ত সৰ্ব্বনিয়ুস্তার ক্রীড়নক মাত্র। আমরা প্রতিমুহূৰ্ত্তে সম্মুখে চলিয়াছি, অতীত আমাদের পায়ের নীচে—অতীতের ধাপ বাহিয়া আমরা ক্রমশ: উৰ্দ্ধে আরও উৰ্দ্ধে উঠিতেছি। সন্তান য়ে, সে পিতার তুলনায় ব্রহ্মের নিকটতর। স্বষ্টিশক্তি সস্তানের ভিতর দিয়া তাহার যে আবেদন ( আকাঙ্ক্ষা ), তাহ প্রকাশ করিতেছে। নীলাম্বর-বাবু শিহরিয়া উঠিয়া বুঝিলেন, যশোদা কেন কৃষ্ণের মুখবিবরে বিশ্বরূপ দেখিয়াছিলেন। আজ এই যে সস্তান তাহার ঘরে জন্মগ্রহণ করিয়াছে ইহা ; মধ্য দিয়া ভগবান আপনার আদর্শের আরও কতখানি প্রকাশ করিবেন তাহা কে বলিতে পারে ? নীলাম্বর-বাবু একবার এই সস্তানের উদ্দেশে প্রণাম করিলেন । পাশের ঘরে সদ্যোজাত সস্তানের ক্ৰন্দনে নীলাম্বর-বাৰুর চমক ভাঙ্গিল । তিনি উঠিয়া পাশের ঘরে গমন করিলেন। কিছুকাল সস্তানের দিকে অপলকনেত্রে চাহিয়া থাকিয়া প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ,১ম খণ্ড নীলাম্বর-বাৰু যখন তাহাকে ক্রোড়ে না লইয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া প্ৰণাম করিলেন, তখন বৃদ্ধ ধাই কাত্যায়নী ওরফে কাতু *ওমা কি হ’ল গো”বলিয়া বিকট চীৎকার করিয়া বাহিরের দালানে দৌড়িয়া বাহির হইয়া গেল এবং গোলমাল করিয়া বাড়ীর অপরাপর লোকদিগকে আঁতুড়ঘরের দরজায় আনিয়া জড় করিল। নীলাম্বর-বাবু স্মিতহাস্তে সকলকে অভ্যর্থনা করিয়া বলিলেন যে, ব্যাপার কিছুই নহে, তাহার মস্তিষ্ক ঠিক পূৰ্ব্ববংই আছে ; শুধু তিনি ভগবানের আদেশেই আনস্তের আদর্শকণিকা এই শিশুকে ভক্তিনিবেদন করিতেছেন। সবাই অবাক! নীলাম্বর-বাবু সকলকে বুঝাইয়া বলিলেন যে, এই শিশুর মধ্যে যে স্বষ্টির আবেদন নিহিত রহিয়াছে, তাহার তুলনায় শঙ্করের দর্শন, গৌতম বুদ্ধের দিব্যবাণী, চৈতন্যের প্রেমের আহবান অতি নিম্নস্তরের ব্যাপার। নূতন যে আসিয়াছে সে ত অতীতের সকল সঞ্চিত উন্নতির আধার বটেই—তা ছাড়া তাহার ভিতর রহিয়াছে অনন্তের আলোক, ঝরণার পুণ্যনীরের আর-এক অঞ্জলি । স্বষ্টির প্রারম্ভ হইতে মানব ভগবানের চরণে তমসে মা জ্যোতির্গময় বলিয়া যে প্রার্থনা জানাইয়াছে বর্ষে বর্ষে নিত্য-নুতন শিশুর জন্মের ভিতর দিয়া ভগবান মানুষকে সেই প্রার্থিত পূর্ণজ্যোতি এক-এক রশ্মি করিয়া দান করিতেছেন । নীলাম্বর-বাবুর মুখ হৃদয়ের আবেগে আলোকিত হইয়া উঠিয়াছিল এবং সকলে তন্ময় হইয় তাহার কথা শুনিতেছিল। তিনি সম্ভবত আরো অনেকক্ষণ সমান তোড়ে কথা বলিয়! যাইতেন ; কিন্তু তাহার বৃদ্ধ পিসিমাত এইসব শুনিয়া হঠাৎ হাউ-হাউ করিয়া কাদিয়া উঠিলেন। তা’র পর তীরবেগে ছুটিয়া পাশের ঘর হইতে একটা শাখ আনিয়া জোরে জোরে বাজাইতে লাগিলেন ও অন্যান্য স্ত্রীলোকদিগকে উলু দিবার জন্য দম লইবার ফাকে-ফাকে আদেশ করিতে লাগিলেন । ( সশঝে ) "ওরে, ঘরে দেবতা এসেছেন, উলু দে, উলু দে ।” “ও খেদীর মা, শাখটা বাজান মা, বুকে যে আর জোর নেই।”