পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

షాలి, প্রবাণী—বৈশাখ, ১৪৩৩ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড পিসিমা একাই নানান আবেগের ঐক্যতানে আঁতুড়মঞ্চ এমন সরগরম করিয়া তুলিলেন যে, স্বয়ং নীলাম্বর-বাবুও মিনিট পনের ডারউইন ও ক্রমবিকাশ ভুলিয়া “খ” অবস্থা প্রাপ্ত হইয়া রছিলেন । তা’র পর দুই দিন ধরিয়া বাড়ীতে পাড়ার লোকের ভীড়ে ইদুর-বিড়ালেরও স্থান রহিল না। নীলাম্বর-বাবুর পিসিমা সৰ্ব্বত্র রটাইয়া দিলেন যে,"আমাদের ”কে স্বয়ং মা দশভূজা স্বপ্ন দিয়াছেন যে তাহার বাড়ীতে এক অবতারের আবির্ভাব হইবে। ফলে গিনি, হাফগিনি হইতে আরম্ভ করিয়া আধুলি ও কিং এডওয়ার্ডের দুয়ানি অবধি সকল-প্রকার স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রায় নবজাত শিশুর তক্তপোষের পাদদেশ ভরিয়া উঠিল। e/وه নীলাম্বর-বাৰু আফিসের ডেসপ্যাচ ক্লার্ক, ধরণীনাথের সহিত পুত্রের নামকরণ সম্বন্ধে বহু আলোচনা করিয়া তাহার নাম রাখিলেন আবেদন । ধরণীনাথ বলিল, সে অনেক নামে অদ্যাব ধ চিঠিপত্র প্যাকেট ইত্যাদি পাঠাইয়াছে, কিন্তু আবেদন নামট কখনো তাহার চোখে পড়ে নাই। স্বই জগতের আবেদন শিশুর জীবনের ভিতর দিয়া প্রস্ফুট হইয়া উঠিবে বলিয়াই নীলাম্বর-বাৰু এই নামটি নিৰ্দ্ধারিত করিলেন । আবেদন বাড়িয়া উঠিতে লাগিল। চারিপাশে তার পিতা মাতা হইতে আরম্ভ করিয়া দূর সম্পর্কের কাকা মামা ও মাসীরা তাহাকে একাধারে পুত্রের ন্যায় স্নেহ ও দেবতার স্তায় ভক্তি করিয়া তাহার মনোভাব চাকুরীতে সদ্যোনিযুক্ত ইংরেজ ছোকরা-সিভিলিয়ানের সমতুল্য করিয়া তুলিল। ভবিষ্যতে সে কমিশনার বা গভর্ণর হইবে, এই কথা স্থতিতে চিরজাগ্রত রাখিয়া যেমন বৃদ্ধ ডেপুটি ও সাব ডেপুটিগণ ছোক্রা-সিভিলিয়ানের সকল দোষত্রুটি ও খৃষ্টতাকে স্বেচ্ছায় ও স্বচ্ছন্দচিত্তে গুণ ও অমায়িকতা বলিয়া ভ্রম করে, আবেদনের সকল অক্ষায় আবদার ও অশোভন ব্যবহার তেমনি তাহার গুরুজনদিগের স্নেহ ও ভক্তিকাতর চক্ষে সরলতা নামে অভিহিত হইয়া আবেদনকে খাচালতা ও অশিষ্টতার ক্রমবিকাশ-মার্গে শ্রুত অগ্রগামী ক্ষরিয়া তুলিল। নীলাম্বর-বাৰু কোথায় যেন পড়িয়াছিলেন যে, প্রাচ্যের কোনো এক মহাশক্তিশালী জাত্ত্বির লোকেরা পূৰ্ব্বপুরুষের পূজা করে। তিনি ডারউইনের কেতাবখানি পাঠ করিবার পরে স্থির করিয়াছিলেন যে, নিবুদ্ধিতার ইহা অপেক্ষা স্বম্পষ্ট উদাহরণ আর পাওয়া সম্ভব মহে। যে পূৰ্ব্বপুরুষগণের অন্বেষণে অধিকদূর যাইলে বৃক্ষে আরোহণ করিতে হয় সেই পূৰ্ব্বপুরুষেব পূঙ্গ ! হায় মূঢ় নর। এতকাল কি নিদারুণ অজ্ঞানতার মধ্যেই ডুবিয়া ছিলে । নীলাম্বরবাবু বলিলেন “মানুষকেই যদি পূজা করিবে তবে যাহার মধ্যে ভগবানের ছায়া গাঢ়তম হইয়া পড়িয়াছে তাহাকে পূজা কর।” তিনি আবেদনের জন্মের তিন চার মাস পর হইতেই গৃহে নিয়মিতভাবে মাসে একবার করিয়া “সন্তান-পূজা” করিতে লাগিলেন। শিশু অবস্থায় আবেদন পিড়িতে শায়িতভাবে পূজা গ্রহণ করিত, পরে তাহাকে একথানা আবলুশ কাষ্ঠের চৌকিতে বসাইয়া পূজা করা হইত। সে ফুল আলো শাখ ও ঘণ্টা যতটা পছন্দ করিত, তাহা অপেক্ষ অনেক অধিক পছন্দ করিত নিজের ভোগটি। আবেদনের প্রসাদ অনেক সময় পিপিড়ার পক্ষেও যথেষ্ট হইত না। এইরূপে আবদার ও পূজা পাইয়া সন্তান-দেবতা আবেদন ক্রমশঃ বড় হইতে লাগিল। দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার ফলে সে শিশু-অবস্থা হইতেই নিৰ্ব্বিকারচিত্তে ছোটবড়নির্বিশেষে সকলকে সৰ্ব্বপ্রকার উপদেশ দিতে পারিত। খৃষ্টয়ানদিগের ভগবান যখন অনন্ত অন্ধকারে বসিয়া-বসিয়া হায়রান হুইয়া হঠাৎ বলিয়া উঠিয়াছিলেন, “আলো হউক তখন যেমন তাহার চিত্তে এরূপ কোন সন্দেহ জাগে নাই যে, তাহার অভ্রান্তবাণীতে আলো না হইয়া একটি উৰ্দ্ধ-লাঙ্গুল গো-বৎসও হইতে পারে; আবেদনও তেমনি যখনই কিছু উচ্চারণ করিত তখন কদাপি তাহার নিজের মত বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু ঘটিতে পারে এরূপ কল্পনাও করিতে পারিত না । সেই যে সে সকল মতামত ও ইচ্ছা-অনিচ্ছার একমাত্র নিয়ন্ত এই ধারণ আবেদনের অন্তরে দৃঢ়নিবন্ধ ছিল। আবেদন বাড়িতে লাগিল ।