পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাসী-বৈশাখ, ১৩৩৩ 88 [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড, একদিন সে নিউ ইয়র্কের হাওয়া অসহ দেখিয়া কালি- পারিত। তাহাকে অনেকে তখনই স্বামীজি বলিয়া ফোর্নিয়ার টিকিট কিনিয়া অদৃপ্ত হইয়া গেল। সম্বোধন করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। কিন্তু এমন সময় নিউইয়র্কে হোমিওপ্যাথির ছাত্রদের লঘুচিত্তের পরিচয় পাইয়া আবেদন আমেরিকা-সম্বন্ধে প্রায় হতাশ হইয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু কালিফোর্নিয়ায় যখন সে পৌছাইবার দুই ঘণ্টার মধ্যে একটা সিনেমা কোম্পানীতে ভারতীয় হাবভাব শিখাইবার কাজ পাইয়া গেল, তখন তা’র মনের হারানো শাস্তি কতকটা ফিরিয়া আসিল । সে, সিনেমার কারখানায় যে-সকল লোক ভারতীয় কোনো ভূমিকায় অভিনয় করিত, তাহাদের পোষাক ও হাবভাব ঠিক তইত কি না দেখিত । সিনেমার ‘ষ্টার’, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর নাম ছিল, মাদমোয়াজেল ফিফি । তার চেহারাটা দোহারা ও বয়স ২১ হইতে ৫২র মধ্যে কিছু-একটা । তিনি আবেদনকে দেখিয়া ও তাহার নিকট ভারতীয় দর্শন, বিশ্বপ্রেমের বার্তা, অসহযোগ আন্দোলন, অহিংসা, ভারতীয় নাট্যকলার আদর্শ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অনেক বহুমূল্য কথা শুনিয়া তাহাকে বড়ই পছন্দ করিয়া ফেলিলেন। স্ববলচন্দ্র মিত্র মহাশয় প্রণয়ের, যে-সংজ্ঞাদিয়াছেন, ইহা ঠিক তাহা নহে। আবেদনের মতে ইহার ভিতর ছিল প্লেটোর নিস্পৃহতার আদর্শ, আর ছিল দুইটি জিজ্ঞাস্থ আত্মার পরম্পর-পরিচয়ের আকাজক্ষা –আবেদন ফিফিকে ভারতীয় রাজকন্ত। সাজাইয়া একটি সতীদাহ ও জলন্ত প্রেমের দুঃসাহস-সংক্রাস্ত নাটিকা “রিলিজ" (প্রকাশ ) করায়, । তাহাতে নায়িকা মোটরকার ও এয়ারোপ্লেন যোগে কলিকাতায় কেওড়াতলার ঘাট হইতে রাজা রামমোহন রায়ের পরিচিত বন্ধু এক কাশ্মীরী রাজপুত্রের সহিত সমস্ত পথ আশ্বারোহী সৈনিকদিগের দ্বারা অনুস্থত হইয়া শ্ৰীনগরে পলায়ন করিলেও উক্ত সিনেমা-চিত্র চিকাগো বুষ্টার নামক সংবাদপত্রে প্রশংসিত হইয়াছিল। সেই কাগজেই ঐ উপলক্ষে আবেদনের একটি ছবি বাহির হয় ; তাহাতে তাহাকে ভারতীয় নাট্যকার, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, গায়ক ইত্যাদি নানা আখ্যায় ভূষিত করা হয়। এইরূপ আরও কয়েকটা ছবি প্রস্তুত করাইতে পারিলেই আমেরিকায় আবেদন প্রসিদ্ধ হইয় উঠতে আর-একটি দুর্ঘটনার ফলে আবেদনকে কালিফোশিয়া ত্যাগ করিতে হইল। আবেদন এই সময় আর-একটি চিত্রনাটিকা লইয়া ব্যস্ত ছিল। একজন ইয়াঙ্কি কলিকাতার ঠনঠনিয়া কালীবাড়ীর কালীর গহনাপত্রের মধ্য হইতে একটি নারিকেলের সমান বৃহৎ হীরক অপহরণ করে। তাহার ফলে দুই জন দিগম্বর জৈন সন্ন্যাসী তাহাকে জাহাজের খালাসী সাজিয়া নিউইয়র্ক অবধি অমুসরণ করে ও শেষ অবধি তেরজ । স্ত্রীলোক ও আঠারজন পুরুষের জীবন বিপন্ন করিয়া হিপনটিজমের সাহায্যে হীরকটি পুনরুদ্ধার করিয়া ভারতে ফিরিয়া আসে। এই ঘটনাটি লইয়াই নাটিকাটি রচিত। যেদিন শ্ৰীমতী ফিফি হীরক-চোর ইয়াঙ্কির সহযোগিনীরূপে জৈন সন্ন্যাসীদিগের দ্বারা কুপে নিক্ষিপ্ত হইয়া বহুঘণ্টা চিত্রে ছটফট করিবেন সেই দিন চিত্র উঠাইবার কয়েক ঘণ্টা পূর্বে র্তার নিদারুণ মাথা ধরিল! তিনি অ্যাসপিরিন খাইয়া শুইয়া থাকিতে যাইতেছেন, এমন সময় তার দেখা হইল আবেদনের সহিত । আবেদন ব্যাপার কি শুনিয়াই বলিল, “আরে করুছ কি ? ওতে কিছু হবে না। তুমি এক ডোজ নক্স ভমিকা সিক্স, খেয়ে শুয়ে থাকে, সব ঠিক হ’য়ে যাবে।” ফিফি তা’র কথায় নক্স ভমিকা সেবন করিয়া শুইয়া রছিলেন। কিন্তু তার মাথা-ধরা ক্রমে বাড়িতে লাগিল। সব বন্দোবস্ত ঠিক, একৃষ্ট্র লোকেরা ষ্টেজে আসিয়াছে। ম্যানেজার ব্যস্তসমস্ত হইয়া ফিফির খোজ করিতে পাঠাইলেন । , ফিফির তখন নড়িবারও শক্তি নাই। সেদিন ছবি তোলা হইল না এবং তাহাতে ফিফির কিছু আর্থিক ক্ষতি হইল। ইহাতে ফিফির সমস্ত রাগ গিয়া পড়িল আবেদনের উপর। তিনি আবেদনকে একটা প্রকাগুস্থলে নিৰ্ব্বোধ ও হাতুড়ে বলিয়া খুব গালি দিয়া দিলেন । আবেদন পুনৰ্ব্বার হোমিওপ্যাথির জন্য লাঞ্ছিত হইয়া শোকে আজ আত্মহারা হইয়া উঠিল। সে সিনেমার কার্ষ্যে তখনি ইস্তফা দিয়া বাহির হইয়া গেল। তাহার আর কালিফোর্শিয়ায় থাকিবার কিছুমাত্র ইচ্ছা রহিল না। সে সেইদিনই কোথাও চলিয়া বাইত ; কিন্তু