পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] আবেদন পাকৃড়াণী

8ግ

প্রধান সঙ্গীতজ্ঞ ও সাহিত্যিক লোমাং লোলাং তাহাকে কেমন করিয়া নিজের পার্থে বসাইয়া সোইয়া শিম সিদ্ধ খাওয়াইয়াছিলেন ও চীনা অভিনেতা ক চা লং কি কারণে জগতের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বলিয়া গণ্য হইতে পারেন, এই সকল কথা আবেদনের লিখিত বিভিন্ন ভ্রমণবৃত্তাস্তের মধ্যে প্রাপ্তব্য। কিন্তু চীন দেশের সকলকিছুর মধ্যে আবেদনের প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল চীনা সঙ্গীতটি ভাল করিয়া আয়ত্ত করা। - jo/o চীন-সম্রাট ফুসি খৃঃ পূঃ ২৮৫২ অব্দে সঙ্গীতের আবিস্কার করেন । চীনারা সঙ্গীতকে জীবনে যত উচ্চ স্থান দিয়াছে পৃথিবীর অপর কোন জাতি সেরূপ দেয় নাই। তাহাদের মতে সুস্বর-লহরীর ক্ষমতার অতীত কিছুই নাই। স্বরবিন্যাসের সাহায্যে মানব-হৃদয়কে যে-কোন দিকে লইয়া যাওয়া যায়। এমন-কি, এই যে সহস্ৰ সহস্র বৎসর ধরিয়া চীনারা নিজেদের সভ্যতার ক্ষেত্রে আচল স্থির ও শক্তিশালী করিয়া রাখিয়াছে তাহার মূলে রহিয়াছে, চীনার চিত্তবিকারের মহৌষধ চীন-সঙ্গীত । আবেদন এই সঙ্গীতের নাকি স্বরের সাময়িক কষ্টকারিত ও ঘণ্টা ও ঢঙ্কা নিনাদের কঠিন আবরণ ভেদ করিয়া ইহার অন্তরের মাধুর্ঘ্যের স্বাদ গ্রহণ করিবেই বলিয়া মনস্থ করিল। সে তিন মাস কাল চীনা স্বর ও তাল সাধন করিল এবং স্ত্রীলোক-বর্জিত চীনা রঙ্গমঞ্চের আটঘাট আরও দুই মাস ধরিয়া চিনিয়া লইল । তা'র ইচ্ছা ছিল সে চিন, শে, লাপ, পিপা প্রভৃতি চীনা বাদ্য-যন্ত্রগুলিও আয়ত্ত করিবে, কিন্তু একদিন যখন সে মহামতি লোমাং লোলাংএর কাছে যাইবে এরূপ মনস্থ করিতেছে, ঠিক সেই সময় একটা কেবলগ্রাম আসিল যে তাহার কাকা গতায়ু হইয়াছেন। আবেদন ছিল তাহার কাকার একমাত্র উত্তরাধিকারী, স্বতরাং ত্বাহাকে প্রথম যে . জাহাজটি পাওয়া যাইল তাহাতেই দেশে ফিরিতে হইল। সঙ্গে রহিল কয়েকটি চীনা বাদ্যযন্ত্র ও কয়েক খাতা ভ্রমণস্বত্তাস্ত-পূর্ণ ডায়েরী। ہ (ile জাহাজে আবেদনের একটি বান্ধবী জুটিয়া গেল । তাহার বাস ফিলিপাইন দ্বীপে। আবেদন প্রত্যহ তাহার সহিত জাহাজের ডেকে বসিয়া নানাপ্রকার গল্প ও আলোচনা করিত। সে যে কেন বিদেশে আসিয়াছিল, দেশে ফিরিয়াই বা সে কি করিবে ইত্যাদি সকল কথা সে এই ফিলিপাইন-দেশীয় মহিলাটিকে বলিত। ফিলিপিনে মহিলাটির মতে আধুনিক জগতের সকল দুঃখের মূলে রহিয়াছে পরের উপর প্রভুত্ব করিবার চেষ্টা ও পরদাসত্ব দোষ । আবেদন বলিল, “না, আমার মনে হয় এই যে সকল দেশের সকল মামুষের ভিতরেই দেখা যাইতেছে যে প্রাণের যা আকাজক্ষা ও আবেদন তাহা উপযুক্তরূপে ব্যক্ত করিতে কেহই পারিতেছে না, সকলেই অন্তরে নিহিত অব্যক্ততার বোঝা বহন করিয়া গুমুরাইয়া মরিতেছে, ইহাই আমাদিগের সকল শোকের মূল । উপযুক্ত অভিব্যক্তির উপায়ু ও পথ পাইলেই মানব মুখের চরমে পোছাইবে ।” বান্ধবী বলিলেন, “এ উপায় কি তুমি মাহুষের ভাষার প্রসার ও নববৈচিত্র্যের ভিতর পাইবে, ন নৃত্যে পাইবে,. না, কৰ্ম্মে পাইবে?” আবেদন বলিল,“ন, ও-সকলের ভিতর মানুষ শুধু তা’র ব্যর্থতার বেদনুমাত্র প্রকাশ করিতে পারে। মনের অর্গল উহাতে সম্পূর্ণ খোলে না। উপযুক্ত সঙ্গীতেই একমাত্র মুক্তির পন্থা। স্বরসাধনের ভিতর দিয়াই মানুষ আত্মাকে সৈনিকের ন্যায় শিক্ষিত ও গতিদক্ষ করিয়া তুলে ।” বান্ধবী বলিলেন, “তবে কি তুমি সঙ্গীতের সাহায্যে বিশ্বে নবজাগরণ আনিতে পারিবে ভাবো ?” আবেদন বলিল, “হা, সঙ্গীতের ভিতর দিয়াই আত্মাকে যে-কোন দিকে লইয়া যাওয়া যায়। চীন-দেশে দেখ, সঙ্গীত সাগরের ন্যায় কখন চঞ্চল, কখনও উচ্ছ স্থল, কখন শাস্ত, কখন নিঃশব্দপ্রবাহিত, এম্‌নি নানাভাবে চির প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছে। চীনা আপনার হৃদয়ের সকল আবেগের নিবৃত্তি তাহার সঙ্গীতেই পাইতেছে। তাই বাহি