ఇ&e তাহার সহিত চীনের ভাবমাত্রিক ছন্দের তালে তালে ঘণ্টাধ্বনি, এতদুভয়ের ঐক্যতানে যদি বিশ্বকে প্লাবিত করিয়া দিতে পারেন, তাহা হইলে এবং শুধু তাহা হইলেই এই দুঃখদৈন্য প্রশমিত হইবে।” রবীন্দ্রনাথ স্তম্ভিত হইয়া বলিলেন, “সে কি ?” আবেদন বলিল, “যেমন আলোকের সম্মুখে অন্ধকার আপন হইতেই মিলাইয়া যায়, তেমনি এই ঐক্যতানের স্বরজ্যোতিঃপ্রস্থত হৃদয়াবেগের সম্মুখে অপরাপর মনোভাব কোথায় যে স্রোতের মুখে তৃণের ন্যায় ভাসিয়া যাইবে, তাহার কুলকিনারা" মিলিবে না। আমরা যদি যথাযথ স্বরবিন্যাসে নৃতন নূতন ভাবোদ্দীপক রাগরাগিণী স্বজন করিতে এবং ভারতীয় সঙ্গীতের তালের শৃঙ্খল ছিন্ন করিয়া তাহা চীনা তালে গাহিতে পারি, তাহা হইলে কি না হইতে পারে ?” রবীন্দ্রনাথ কিছু বলিবার পূৰ্ব্বেই তাহার পাশ্বে উপবিষ্ট একজন প্রসিদ্ধ বাঙ্গালী গায়ক বলিয়া উঠিলেন, “মশায়ের দেখছি তালের উপর বড় রাগ । কেন, অপরাধ ?” আবেদন বলিন্স, "ভারতীয় তাল ভাবকে, মনের দরদকে তা’র শেষ সীমা অবধি যাইতে দেয় না। উদ্দীপনার অৰ্দ্ধপথে তাল তাহার মস্তকে সমের মুগুর বসাইয়া সকল-কিছু ভণ্ডুল করিয়া দেয় । চীনারা স্বরকে খেলাইয়া থেলাইয়া চরমে লইয়া যায় ; স্থান, কাল, পাত্র বিশেষে এ স্বরের নেশা চরমে পৌঁছিতে কম-বেশী সময় লাগিয়া থাকে। যখন চীনা তালজ্ঞ ভাব চরমে পৌঁছিয়াছে বলিয়া বুঝিতে পারে, শুধু তখনই সে ঢং করিয়া ঘণ্টা বাজাইয় ভাবের ঢেউ নিম্নগামী করিয়া দেয়। আবার ভাবের অভাব যখন চরমে পৌছায় তখন সে আবার ঢং করিয়া ঘণ্টা বাজাইয়া ঢেউএর গতি পুনৰ্ব্বার ফিরাইয়া দেয়। ইহার মধ্যে স্বরফাক্তার ধী ঘেনে নাগ, দিগ, বা চোঁতালের ধাধা দিন তা, এ জাতীয় কোন বন্ধনের উৎপাত নাই।” আবেদনের কথা শুনিয়া তাহার আলোচকের মুখ রাগে লাল হইয়া উঠিতেছে দেখিয়া কবি তাহাকে অন্ত কথায় ভুলাই বার জন্ত বলিলেন, “ঢেউও ত তার নিজের নিয়মে বাধা । সে কি কখন নিজের আকৃতি ও প্রকৃতিকে প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড ছাড়িয়া সমচতুষ্কোণ আকার ধারণ করিতে পারে? যেমন তা’র নিজের স্বভাবের বন্ধনের মধ্যেও ঢেউ পূর্ণতা পাইয়া থাকে, তালের বন্ধনের মধ্যেও স্বর তেমনি বিকাশের চরমে পৌছাইতে পারে।” আবেদন বলিল, “আপনার উপমা চমৎকার ; কিন্তু আমার যুক্তি আপনি বুঝিলেন না। যুক্তি ও উপমা এক নহে । তাল স্বরের স্বভাব নহে...” সঙ্গীতজ্ঞ লোকটি কথা শুনিয়া অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়৷ বলিলেন,“আপনাকে পুলিশে দেওয়া উচিত!” বলিয়া তিনি উঠিয় দাড়াইতেই সকলে আবেদনকে পাশের ঘরে লইয়া গিয়া সন্দেশ রসগোল্ল সরবং ইত্যাদিতে তুষ্টকরিয়া বাড়ী পাঠাইয়া দিলেন । আবেদন প্রতিজ্ঞ করিল, সে আর প্রসিদ্ধ লোকদিগের সহিত সাক্ষাৎ করিবে না ; নিজেই সে জগতের সম্মুখে দাড়াইবে । ഗുപ്തം বাঙ্গালীর একটি গুণ আছে। সে সকল ব্যক্তি ও মতকেই কিছু দিনের মত আকাশে তুলিয়া ধরিতে কখনও নারাজ হয় না। আরব্যোপন্যাসে কে যেন শুধু একদিনের জন্য রাজা হইতে চাওয়াতে সম্রাট হার-উন-আল-রসিদ তাহাকে সানন্দে একদিনের জন্য নিজের সিংহাসন ছাড়িয়। দিয়াছিলেন । ইহাতে সম্রাটের ঔদার্ষ্যই প্রমাণ হয় । বাঙ্গালীও এই ঔদার্য্য-গুণে গুণী । যে কেহ উচ্চকণ্ঠে যাহা হইতে - চায়, সে তাহাকে ক্ষণতরে তাহাই হইতে দেয়। এইরূপে বাজলায় নিত্যই নব নব বাল্মীকি, তানসেন, ভীমসেন,যুধিষ্ঠির, বিক্রমাদিত্য, শ্ৰীকৃষ্ণ, শ্ৰীচৈতন্য, কালিদাস, ভবভূতি, হুইটম্যান, গরুকি ইত্যাদির আবির্ভাব হয় । তাহারা আসেন যান মাত্র দুদিনের জন্য । কাজেই বাঙ্গালী তাহাদের আশায় নিরাশ করে না। এই সকল ক্ষণপূজিত মহাপুরুষদিগের মধ্য হইতেই আবার কেহ কেহ চিরকালের দেবতারূপে থাকিয়া যান। সে । কথা থাকুক। আবেদন খন কয়েকটি মেস ও কলেজ হোষ্টেলে যাইয়া নিজের মত প্রচার এবং তৎসঙ্গে হারমোনিয়াম তানপুরা ও চীনা ঘণ্টা সহযোগে স্বরচিত সঙ্গীত ও পররচিত সঙ্গীতের নূতন মুর আলাপন করিয়া সকলের চিত্তের উৎকর্ষ সাধনে
পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/3/3e/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80_%28%E0%A6%B7%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%B6_%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%97%2C_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29.djvu/page276-1024px-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80_%28%E0%A6%B7%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%B6_%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%97%2C_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29.djvu.jpg)