পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

so o হরিকেশব দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, “মাথাটা থারাপ করেও যদি মেয়েটার দুঃখ ঘোচাতে পারি, তবে ত জন্ম সার্থক ইয়। ওর শিশু মুখের মিষ্টি হাসি নিয়ে ও যখন এসে কাছে দাড়ায়, তখন আমার বুকটা যে দু-খান হয়ে যায় । ম{ আমার জানে ও না যে পাপ হয়ে ওর কি সৰ্ব্বনাশ করে রেখেছি ।" তরঙ্গিণী বাপ দিয়া বলিলেন, "এ তোমার অন্যায় কথা । বিধাত। ওর কপালে দুৰ্ভাগ্য লিখেছেন, তুমি কি তার জন্যে দায়ী হলে নাকি ? আমাদের অদুষ্ট পারাপ, মুখ বুজে সইতেই হবে ।” হরিকেশব বলিলেন, “অদৃষ্টের চাক ঘোরালে কে ? মুখ আমি যদি আট বছরের মেয়েটাকে দান করে পুণ্য সঞ্চয় না করতে খেতাম, তাহলে ত আর এমন হত ন৷ !" তরঙ্গিণী বলিলেন, “আজি না গোক কাল ত হতে পাবৃত ? পৃথিবীতে দুঃপের হাত থেকে মাহুষ কি কথন ও মাতুষকে পরিত্রাণ দিতে পেরেছে ? দুরদুষ্ট কোন ছল ধরে কার ভাগ্যে কথন যে আসে কেউ কি বলতে পারে ? হরিকেশব স্ত্রীর মাথায় তাত রাগিয় গাঢ়স্বরে বলিলেন, “কেন বৃথা আমায় সাম্বন দাও, তরু ? দুঃখ যত বড় শক্তিমানই হোক, মাহুষের কান্নাকে জয় করতে পারে নি, মামুষের আশা মাহুষের চেষ্টাকে সে দমাতে পারে নি! আমাকে তুমি হাল ছাড়তে বোলে না, তাহলে আমি বাচ বন । এর একট প্রতিকার খামায় করতেই হবে ।” তরঙ্গিণীর তর্কযুক্তি অশ্রুজলে পর্য্যবসিত হুইল । তিনি অন্ধকারে ছাদের আলিসার উপর মাথ। রাথিয় অশ্রী বিসর্জন করিতে লাগিলেন ; আর কথা তার মুখে আসিল না। হরিকেশবই এবার তাহাকে ডাকিয়া তুলিয়া বুঝাইয়া ঘরে লইয়া চলিলেন । ঘরে তখনও গৌরীর মুখের হাসিটি তারার আলোয় অস্পষ্ট দেখা যাইতেছে। গৌরীর ঘুম বাচাইয়া অতি সন্তপণে র্তাগর। দুজনে শয্যা আশ্রয় লইলেন ; কিন্তু শয্যা তাহাদের দুঃগক্লিষ্ট দেহমনকে শাস্তি দিতে পারিল না । রুদ্ধ দীর্ঘনিঃশ্বাস ও নীরব আশবর্ষণে দীর্ঘ রাত্রি কাটিয়া গেল। যাহার বেদনায় এই দুটি হৃদয় কাদিতেছিল অন্ধ প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩০০ | ૨૭૧ ૭ોભ, > પ કિ কারের এই নিঃশব্দ শোকগাথার কোনো সাড়া সে পাইল না; কিন্তু রজনীর নিস্তব্ধতার ভিতর অন্ধকারের কৃষ্ণ যবনিক। ভেদ করিয়াও তাগর দুজন পরস্পরের উদ্বেলিত বক্ষের প্রতিটি স্পন্দন গণিয়া ধাইতেছিল। থাকিয়া থাকিয়৷ দুজনার হাত দুজনার উত্তপ্ত ললাট ও অশ্রুসিক্ত মুখের উপর স্নেহস্পর্শ বুলাইয়া দিতেছিল, আবার উচ্ছসিত আশউৎস পরস্পরের বক্ষ অভিষিক্ত করিয়া তুলিতেছিল । এমনি করিয়াই আজ দুইটি মাস বিনিদ্রভাবে তাহাদের রাত্রি কাটিয়াছে । দিনের কাজের ভিড়ে শোকদুঃখের সমর্থ পৰ্য্যন্ত মিলে না ; পরস্পরের দেখা পাওয়াও শক্ত ; রাত্রির কোলের নিভৃত মিলনে তাই বেদনার বন্ধু দুটি এম্নি করিয়া আপনাদের ক্ষত সৃদয়ের জালা জুড়াইতে 反f牙 | দুই মাস আগের সেই উৎসবের আয়োজন করিবার সময় কে জানিত যে তাহার অবসান এমন করিয়া হইবে ? শিবপ্রসাদ শূন্ত গাড়ী লইয়া লইয়া ফিরিয়া আসিবার পর ৭ সারাদিন ধরিয়া মেয়ের অপেক্ষা করিয়াছিল, হয়ত জামাই সন্ধ্যার দিকের কোনো গাড়ীতে আসিয়া পড়িতে পারে । গেীরীর সাজসজ্জা খোলা হয় নাই ; সে যে মেয়ে, একবার মুক্তি পাইলে আবার ধে সহজে প্রসাধনের সংস্র বন্ধনে ধরা দিবে, তা কিছুতেই বলা চলে না । রাত্রি যপন বাড়িয়া চলিল, তখন মেয়েদের সমস্ত দিনের পরিশ্রমের ফল ফেলাছড়া করিয়া কোনো রকমে দুটি-দুটি মুখে দিয়৷ অপেক্ষাক্লান্ত পরিজনসকলে অবসন্নচিত্তে নিরাশহৃদৰুে ঘুমাইতে চলিয়া গেল । শুধু হরিকেশবের চোখে ঘুম আসিল না । কি একটা আশঙ্কায় তিনি রাত্রে দারোয়ানকে দৌড় করাইলেন টেলিগ্রাফ করিতে । এই ব্যর্থ উৎসবের আয়োজন যেন তাহার মনে কি একটা অমঙ্গলের ইঙ্গিত করিতেছিল । - পরদিন শরীর খারাপের ছুতা করিয়া আধঘণ্টার ভিতর তিনি কাছারী গুড়িয়া চলিয়া আসিলেন, পাছে অপর কেউ টেলিগ্রাম-সম্বন্ধে কিছু জানিয়া ফেলে, কিম্বা জবাব-খান। অকস্মাং হাতে পাইয়া বসে । বাড়ী আসিতেই গোর’ ছুটিয়া রাস্তার ধারের সিড়ির কাছে হাজির, “ওকি বাবা । তুমি ঠিক দুঙ্ক র বেলা কেন কাছারী থেকে পালিয়ে এলে ?