>や প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড থাক তবে কেবলমাত্র বাক্য-বিন্যাসের দ্বারা ভাবরসসম্ভোগে তা অপব্যয় কোরে না । যে অনুকুল সময় এসেছে তাকে ফিরিয়ে দিয়ে না তোমার দ্বার থেকে, সকলে মিলে স্বষ্টির কাজে প্রবৃত্ত হও। সম্মিলিত দেশের হুষ্টির মধ্যেই দেশের আত্ম তার গৌরবের স্থান লাভ করেন । বিশ্ববিধান্ত বিশ্বকৰ্ম্ম। আপনার মহিমায় প্রতিষ্ঠিত কোথায় ?— র্তার বিশ্ব স্পষ্টর মধ্যে । তেম্নি দেশের আত্মার স্থানও দেশের সন্ত চষ্টির কাজের মপ্যে, ভবি-সম্ভোগে নয় । সেই বিচিত্ৰ হষ্টির শক্তি কি জেগেছে আজ আমাদের মধ্যে— যে-শক্তিতে দেশের অন্ন-দৈগু, স্বাস্থ্যের দৈন্য, জ্ঞানের দৈর্ঘ্য সব ঘুচে যাবে ? বসম্বকালের অরণ্যে যেমন তরুলত সব ঐশ্বর্য্যে পূর্ণ হয়ে উঠে তেমূমি কৰ্ম্মের বিকাশে সমস্ত দেশে একটি বিচিত্র রূপ ব্যাপ্ত হ’ধে যায়। সেই লক্ষণ কি দেখতে পাই আমরা ? আমি তে সায় পাঙ্গনে অন্তরে । ভবাবেগ আছে, কিন্তু তার মধ্যে কৰ্ম্মের প্রবর্তন অতি অল্প । কিছু কাজ যে হয়নি তা বলুচিনে, কিন্তু সে বড় অল্প। আবার সেজষ্ঠে পুরোনো কথা স্মরণ করিয়ে দেবার সময় এসেছে । কিন্তু আমার সময় গিয়েছে, স্বাস্থ্য ভগ্ন হয়েছে, আর অধিক দিম বাকী নেই আমার । তথাপি আমি বেরিয়েছি—পুরস্কারের জন্যে নয়,বরমাল্য নেবার জন্যে নয়,করতালি লাভের জন্যে নগ্নসম্মানের ট্যাক্স আদায় করবার জন্তে নয়—দেশকে আপনার জানতে চাচ্ছেন কৰ্ম্মদার, এইটুকু দেখে যাব আমি । জীবনের অবসান-কালে আমি দেখে যেতে চাই যে, সৰ্ব্বত্র কৰ্ম্মশক্তি উষ্ঠত হয়েছে। তা দি না দেখতে পাই তবে জানব ধে, আমাদের ধে-ভাবাবেগ তা সত্য নয়। ঘেখানে চিত্তের সত্য উদ্বোধন হয়, সেখানে সত্য কৰ্ম্ম আপুনি প্রকাশ পায় । দেশের মধ্যে কৰ্ম্ম না দেখে আমাদের চিত্ত বিষণ্ণ হয়েছে । মরুভূমির মধ্যে আমরা কি দেখতে পাই ? পৰ্ব্বাকৃতি কাটা"গাছ, মনসা গাছ দূরে দূরে ছড়ানো রয়েছে তাদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই,আছে বিরুদ্ধ রূপ আর চিত্তের দৈন্য। মরুভূমিতে প্রাণশক্তি কৰ্ম্মচেষ্টাকে বড় করে তুলতে পারেনি, সমস্ত উদ্ভিদ সেখানে দৈণ্ঠে কণ্টকিত । এখনো কি তাই দেখব আমাদের মধ্যে ? বসন্তের দক্ষিণ সমীরণ কি বইল না ? মরুভূমির যে প্রাণের দৈন্ত, বিরোধে বিদ্বেষে ভেদে বিভেদে সব কণ্টকিত তাই দেপ ব এখনো ? তা হ’লে যে সব ব্যর্থ হবে, মরুভূমিতে বারি-সেচন যেমন ব্যর্থ হয়। নেব আমরা এই শুভদিনকে, কেবল হৃদয় দিয়ে নয়, বুদ্ধি দিয়ে নয়— কৰ্ম্মের মধ্যে চারদিকে তাকে বেঁধে নে , কথনে ধেতে দেব না—এই আমাদের গুণ হোক । আমার কাজের পরিচয় দেবার অবকাশ নেই, কিন্তু অল্প কাজের মধ্যে সফলতার ঘে লক্ষণ দেপেছি, তাতে ধে- হানন্দ পেয়েছি সেই আনন্দ আপনাদের কাছে ব’ : পূৰ্ব্ব কালে এমন একদিন ছিল পন সীনাদের গ্রামে গ্রামে প্রাণের প্রাচুর্য্য পুর্ণরূপে ছিল । গ্রামে গ্রামে জলাশয় গনন, অতিথিশাল স্থাপন, নানা উংসবের আনন্দ, শিক্ষাদানের ব্যবস্থ—এ সবঙ্গ ছিল । সেই ছিল প্রাণের লক্ষণ । আজকের দিনে কেন জল দূষিত হয়ে গেছে, শুষ্ক হয়ে গেছে ? কেন তুষ্ণাৰ্বের কান্ন। গ্রীষ্মের রৌদ্রতপ্ত আকাশ ভেদ করে’ উঠে ? কেন এত ক্ষুধা, অজ্ঞানত, মারা ? সমস্ত দেশের স্বাভাবিক প্রাণচেষ্টার গতি রুদ্ধ হ’য়ে গেছে । যেমন আমরা দেখতে পাই, যেখানে তুরস্রোতের 2 ছিল, সেখানে নদী যদি শুদ্ধ হ’য়ে যায় বা স্রোত অন্যদিকে চলে যায় তবে দুকূল নারীতে দুভিক্ষে পীড়িত হ’য়ে পড়ে। তেমনি একসময়ে পল্লীর হৃদয়ে ঘে-প্রাণশক্তি অজস্র ধারায় শাখায় প্রশাখায় প্রবাহিত হ’ত আজ তা নিজীব হ’য়ে গেছে, এইজন্যেই ফসল ফল্ছে না। দেশবিদেশের অতিথির ফিরে যাচ্ছেন আমাদের দৈন্যকে উপহাস করে । চারদিকে এইজন্যেই বিভীষিকা দেখছি। যদি সে-দিন না ফেরাতে পারি, তবে সহরের মধ্যে বক্তৃতা দিয়ে, নানা অনুষ্ঠান করে’ কিছু ফল হবে না। প্রাণের ক্ষেত্র যেখানে, জাতি যেখানে । জন্মলাভ করেছে, সমাজের ব্যবস্থ হয় যেখানে, সেই পল্লীর প্রাণকে প্রকাশিত করে—ত হ’লেই আমি বিশ্বাস করি, সমস্ত সমস্ত দূর হবে । যখন কোনো রোগীর গায়ে ব্যথা, ফোড় প্রভৃতি নানারকমের লক্ষণ দেখা যায় তখন রোগের প্রত্যেক" লক্ষণকে একে একে দূর করা যায় না। দেহের সমস্ত রক্ত দূষিত হ’লেই নানা লক্ষণ দেখা দেয়। একটা সম্প্রদায়ের ভিতরে যদি বিরোধ,ভেদ, বিদ্বেষ প্রভৃতি রোগলক্ষণ দেখা দেয়, তবে তাদের বাইরে থেকে স্বতন্ত্র আকারে দূর করা যায় না। দূষিত রক্তকে বিশুদ্ধ করে স্বাস্থ্য করতে চাই ।
পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।