পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লাগল। তার পর কথা বলতে বলতে হঠাৎ ডান হাতটা শূন্তে একবার নেড়েই হাত পেতে বললে—এই নাও— হাতে একটা সন্দেশ ••• আমি ওর দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছি দেখে বললে— আর একটা খাবে ? এই নাও । হাত যখন ওঠালে, আমি তখন ভাল ক’রে চেয়েছিলাম, হাতে কিছু ছিল না । শূন্তে হাতখানা বার দুই নেড়ে আমার সামনে যখন পাতলে তখন হাতে আর একটা সন্দেশ। অদ্ভুত ক্ষমতা তো লোকটার! আমার অত্যন্ত কৌতুহল হ’ল, বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল কিন্তু আমি আর নড়লাম না সেখান থেকে । লোকটা অনেক গল্প করলে । বললে—আমি গুরুর দর্শন পাই কাশীতে। সে অনেক কথা বাবা । তোমার কাছে বলতে কি আমি বাঘ হ’তে পারি, কুমীর হতে পারি। মন্ত্রপড়া জল রেখে দেবো, তার পর আমার গায়ে ছিটিয়ে দিলে বাঘ কি কুমীর হয়ে যাব—আর একটা পাত্রে জল থাকবে, সেটা ছিটিয়ে দিলে আবার মানুষ হবো । সাতক্ষীরেতে ক’রে দেখিয়েছিলাম, হাকিম উকিল মোক্তার সব উপস্থিত সেখানে—গিয়ে জিগ্যেস ক’রে আসতে পার সত্যি না মিথো। আমার নাম চৌধুরী-ঠাকুর—গিয়ে নাম করে । আমি অবাক হয়ে চৌধুরী-ঠাকুরের কথা শুনছিলাম । এসব কথা আমার অবিশ্বাস হ’ত যদি-না এই মাত্র ওকে খালি-হাতে সন্দেশ আনতে না-দেখতুম। জিগোস করলাম—আপনি এখন কি কলকাতায় যাচ্চেন ? —না বাবা । মুরশিদাবাদ জেলায় একটা গায়ে একটি চড়িালের মেয়ে আছে, তার অদ্ভূত সব ক্ষমতা । খাগড়াঘাট থেকে কোশ-দুই তফাতে। তার সঙ্গে দেখা করবো ব’লে বেরিয়েচি । আমি চাকুরি-বাকুরী খুজে নেওয়ার কথা সব ভুলে গেলাম । বললাম—আমীয় নিয়ে যাবেন ? অবিশ্যি যদি আপনার কোন অসুবিধা না হয় । চৌধুরী ঠাকুর কি সহজে রাজী হন, অতিকষ্টে মত করালুম। তার পর মেসে ফিরে জিনিষপত্র নিয়ে এলাম । চৌধুরী-ঠাকুর বললেন—এক কাজ করা যাক এস বাবা । আমার হাতে রেলভাড়ার টাকা নেই, এস ছাটা যাক। আমি বললাম—তা কেন? আমার কাছে টাকা আছে, দু-জনের রেলভাড়া হয়ে যাবে। চড়িাল মেয়েটির কি ক্ষমতা আছে দেখুবার আগ্রহে আমি অধীর হয়ে উঠেfচ । খাগড়াঘাট ষ্টেশনে পৌছতে বেলা গেল। ষ্টেশন থেকে এক মাইল দূরে একটা ছোট মুদির দোকান। সেখানে যখন পৌঁছেচি, তখন সন্ধ্যা উত্তীর্ণপ্রায়। দোকানের সামূনে বটতলায় আমরা আশ্রয় নিলাম। রত্রে শোবার সময় চৌধুরী-ঠাকুর বললেন, আমার এই দুটো টাকা রেখে দাও গৈ তোমার কাছে । আজকাল আবার হয়েচে চোর-চেঁচড়ের উৎপাত। তোমার নিজের টাকা সাবধানে রেথেচ তো ? চৌধুরী-ঠাকুরের ভয় দেখে আমার কৌতুক হ’ল। পাড়াগায়ের মানুষ ত হাজার হোক, পথে বেরুলেই ভয়ে অস্থির । বললাম কোন ভয় নেই, দিন আমাকে। এই দেখুন ঘড়ির পকেটে আমার টাকা রেখেচি, বাইরে থেকে বোঝাও যাবে না, এখানে রাখা সব চেয়ে সেফ — সকালে একটু বেলায় ঘুম ভাঙলো । উঠে দেখি চৌধুরী-ঠাকুর নেই, ঘড়ির পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমার টাকাও নেই, চৌধুরী-ঠাকুরের গচ্ছিত দুটা টাকাও নেই, নীচের পকেটে পাঁচ-ছ আনার খুচরা পয়সা ছিল তাও নেই । মানুষকে বিশ্বাস করাও দেখচি বিম মুস্থিল। ঘণ্টাখানেক কাঢ়ল, আমি সেই বটতলাতে বসেই আছি । হাতে নাই একটি পয়সা, আচ্ছা বিপদে তো ফেলে গেল লোকটা ! মুদিটি আমার অবস্থা দেখে শুনে বললে—আমি চাল ডাল দিচ্চি, আপনি রোধে খান বাৰু। ভদ্রলোকের ছেলে, এমন জুয়োচোরের পাল্লায় পড়লেন কি ক’রে ? দামের জন্তে ভাববেন না, হাতে হ’লে পাঠিয়ে দেবেন। মানুষ দেখলে চিনতে দেরি হয় না, আপনি যা দরকার নিন এথান থেকে। ভাগ্যিস আপনার সুটকেস্টা নিয়ে যায় নি ? দুপুরের পরে সেখান থেকে রওনা হয়ে পশ্চিম মুখে চললাম। আমার স্কটকেসে একটা ভাল টর্চলাইট ছিল, মুদিকে ওর চাল-ডালের বদলে দিতে গেলাম, কিছুতে নিলে না । ক্রমশঃ