পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা শরীরে গৃহে ফিরিয়া অমিতা দেখিয়াছে, শিশির দিব্য আরামে নন্দবাবুর ঘরে চায়ের সঙ্গে সান্ধ্য আলাপ চালাইতেছে আর উড়ে জাহাজ কি গঙ্গার ইলিশ সম্বন্ধে গভীর আলোচনা করিতেছে। যেন দুনিয়ায় সভা-সমিতি কাজ-কৰ্ম্মের কোনও বালাই নাই । রাগে অমিতার গা জলিয়া উঠে। এ ত অক্ষমতা নয়। এযে নেহাৎ উদাসীনতা । সে আজ কৰ্ম্মের সমুদ্রে বাপাইয়া পড়িয়াছে আর দুদিন পূৰ্ব্বেকার কৰ্ম্মের সাথী তীরে দাড়াইয়া উদাস দৃষ্টিতে তাই দেখিতেছে। একটা চাপ ক্রোধ বুকের মাঝে ঢেউয়ের মতন হু হু করিয়া বাড়িয়া উঠিয়া অভিমান হইয়া ভাঙ্গিয়া পড়ে। শিশির আসিয়া বলিল, একটা মুস্কিল হয়েছে—অমিতা উষ্ণভাবে বলিল, হোকৃগে । একটা সামান্য কাগজের একটু মুস্কিলের চাইতে ঢের বড় জিনিষ সংসারে নিত্য হচ্ছে । শিশির হাসিয়া বলিল, তাইত দেখছি । সাহিত্যচর্চা থেকে সমাজ সেবায় উঠেছেন, এইবার বোধ হয় পলিটিকৃসে প্রমোশন । ‘মন্দিরকে নাটমন্দিরে পরিণত করতে ন পারলে আর সুবিধে নেই দেখছি । অমিতা চুপ করিয়া গেল। কথার ফুয়ে যে সমস্ত উড়াইয়া দিতে চাহে তাহীকে আর বলিবার কি থাকে ! সংসারে বড় কিছু করিবার ঝঞ্জাট, আত্মোৎসর্গ, ত্যাগ যে দেখিয়াও দেখে না তাহাকে চোখে আঙ্গুল দিয়া তাহা দেখাইতে ঘাইবার মতে লজ্জা আর কি আছে ? সংস্কার পরায়ণ লোক পাজি না দেখিয়া যাত্র করিলে তাহার সমস্ত সফলতার তলে তলে কেমন একটা অস্বস্তি বোধ থাকিয়া যায়, সাহিত্যক্ষেত্রে এই আড়ম্বরপূর্ণ মাত্রায় শিশিরকে বাদ দিয়া অগ্রসর হওয়াতে অমিতার সকল কাজ-কর্থের তলে-তলে তেমনি একটা কাটা থাকিয়া থাকিয়া খোচা দেয়। সরস্বতীর আরাধনায় শিশির যেন সংস্কারের মতে আঁটিয়া গিয়াছে তাহার আবশ্যকতাও চোখে পড়ে না, অথচ অনাবশ্যক বোধে তাহাকে কাদ দিয়াও স্বস্তি নাই । 彎 彎 毒 泰 এক রাশ ফুল পাতা সম্মুখে করিয়া অমিতা স্তব্ধ সাধনার বিড়ম্বন షిసె হইয়া বসিয়াছিল । স্থশাস্তুর সহিত তাহার বিবাহের সম্বন্ধ যেন বাতাসে উঠিয়া পড়িয়াছে। সে মুখোমুখি কাহারও নিকট কিছু শোনে নাই, অথচ দুই কানে অবিশ্রাস্ত ভাবে এই কথাটাই ধ্বনিত হইতেছে । পিতার উৎসাহ-আনন্দ লক্ষ্য করিতেছে, বাহিরেও অনেকের কাছে আপন সৌভাগ্যের আভাস ইঙ্গিত পাইয়াছে। মিউজিয়াম প্রাচীন চিত্র-পরিদর্শন, পরিষদে প্রাচীন পাণ্ডুলিপিপাঠ ইত্যাদি কত কি কাজে সমস্ত দিনটা স্থশাস্তর সঙ্গেই হুটপাট করিয়া কাটিয়াছে। ঘরে আসিয়া বসিতে না বসিতে তাহারই প্রেরিত এই উপহার যেন একটা প্রশ্ন হইয়া জবাব চাহিতেছে। অমিতা এ প্রশ্নটা কোনও দিম ভাবে নাই । নিজের এই বিস্তৃত জীবন একদিন কোনও অন্তঃপুরে গুটাইয়া লওয়া হইতে পারে, এ চিন্তা তাহার মন স্পর্শ করিত না । সংসারের উপরে তারার মতন ফুটিয়া আকাশে তাহার আলো ছড়াইয়া দিবে এমনি একটা রঙ্গিন কল্পনা তাহার চিত্তকে উৎসাহিত ক্ষরিত । আজ হঠাৎ দেখে, নানা পথ ঘুরিয়া অবশেষে সেই অন্তঃপুরের সম্মুখে আসিয়াই উপস্থিত হইয়াছে । মন যেন আশাভঙ্গের ভার বোধ করিতেছে । অথচ কি যে আশা করিয়াছিল ; কি যে হইবে ভাবিয়াছিল অথচ হইল না তাহাও ঠিক বুঝিল না। তথাপি রূপে, স্বাস্থ্যে, শিক্ষায়, ধনে, মানে খ্যাতিতে, মুশাস্তর দৃষ্টান্ত সংসারে বিরল, তাহাকে লাভ করা যেকোনও নারীর পক্ষেই যে সৌভাগ্যের কথা মোটামুটি একথাটাও অমিতার মনে উদয় হইল। এম্নি সময়ে নন্দবাবু আসিয়া ঠিক এই প্রসঙ্গটাই তুলিলেন। অমিতার অত্যন্ত লজ্জা বোধ হইতে লাগিল, র্তাহার সোজা প্রশ্নের জবাবে ঘড় নাড়িয়া সম্মতি প্রদান করিয়া সে উঠিয়া গেল । পাশের ঘর হইতে জানিতে পারিল শিশির আসিলে পিতা অত্যস্ত আনন্দের সঙ্গে এই শুভ সংবাদ তাহাকে দিলেন। সেও আনন্দ প্রকাশ করিল। এই মাতুযটার কাছে অমিতা জীবনে অনেক বৃহৎ কাজ, উচ্চ আদর্শ মহৎ সাধনার কথা বলিয়া আসিয়াছে। তাহার বস্তুতান্ত্রিক স্থল ভাবের বিরুদ্ধে অনেক রহস্য বিদ্ধপ