পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে, বেশ বোঝা যাচ্ছে সে তার নিজের কষ্টের কথা ভাবছে না। পায়ের শব্দ শুনে, মুচিকে দেখে সে একটি ক্ষীণ হাসি হেসে বললে, ”উ: কী ভীষণ কতগুনে বাজ পড়ল টেরেন্টা. আমার সমস্ত জীবনেও এতগুনে বাজ পড়তে শুনিনি।” “কিন্তু হাতটা তোর কোথায় ?” “এই গৰ্বে, টেনে বার করে দাও না, টেরেন্ট লক্ষ্মীটি ।” গৰ্ত্তের ধারে-ধারে কাঠ ভেঙে গিয়েছে, আর তাইতেই ডামিলকার হাত এটে ধরে রয়েছে ; হাতটা সে ভিতরে আর-খনিকটা ঢুকিয়ে দিতে পারে, কিন্তু বার করে’ আনতে পাৰ্বছে না। টেরেন্ট ঐ ভাঙা অংশটাকে মট করে একেবারে ভেঙে ফেললে । ছেলেটির হাতটাও বেরিয়ে এল ; হাতটা তার ছেচে গিয়ে লাল হ’য়ে উঠেছে। হাতটা ঘসূতে ঘসূতে ছেলেট আবার বলে উঠল, “কি রকম ভয়ানক বাজ পড়ছে ! • •••বাজ কেন পড়ে, টেরেনটা ?” মুচি জবাব দিল, “একট। মেঘ আর একটা মেঘের ঘাড়ে গিয়ে পড়ে কিনা তাই ।” দলটি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে তার ধার দিয়ে ধার দিয়ে তাধার-ঢাকা রাস্তার দিকে এগিয়ে চলল। বাজ পড়া ক্রমে কমে আসতে লাগল ; তার গুড়গুড় শব্দ বহুদূরে গ্রামের ওপার থেকে শোনা যাচ্ছিল । ডানিলকা তখনও তার হাত ঘস্তে-ঘস্তে বললে, “হাসগুনো সেদিন ওখান দিয়েই উড়ে গিয়েছিল টেরেন্ট, তাদের বাসা নিশ্চয়ই গ্লিলিয়া-জাইমিষচা জলায় ফিয়কূল, একটা নাইটিঙ্গেলের বাসা দেখবি ?” টেরেন্ট তার টুপি থেকে জল নিংড়তে নিংড়তে বললে, “ন না, ওতে হাত দিও না ওদের ব্যতিব্যস্ত কোরো না ; নাইটিঙ্গেল গায়ক-পাখী, নিষ্পাপ ও । গলায় ও স্বর পেয়েছে ভগবানের স্তব গাইবার জন্যে আর মামুষের হৃদয়ে আনন্দ দেবার জন্যে । ওকে জালাতন করা পাপ ।” 姆 ডানিলকা বললে, “আর চড়ুইয়ের বেলায় ?” “না চড়ুইয়ের বেলায় ক্ষতি নেই। ওটা একটা বজাং হিংস্কুটে পার্থী ; ওর ব্যবহার ঠিক গীটকাটার ছেলেদের পাততাড়ি-পল্লীতে এক দিন ৩২৫ মতে, মামুষের মুখ ও দেখতে পারে না । যখন যীশুকে ক্রুসে বিঁধেছিল, তখন ঐ চড়ুই-পাখাই ইহুদীদের পেরেক এনে দিয়ে বলে উঠেছিল,—বেঁচে রয়েছে রে, বেঁচে রয়েছে !” এতক্ষণে এক খাবল উজ্জল নীল রং আকাশে দেখ} দিল । টেরেন্‌টা বললে, “এই দ্বাখ উই ঢিবি একট, বিষ্টিতে ফেটে খুলে গেছে। সব ভেসে গেছে পাজী গুনে ৷” তারা উই ঢিবির উপর ঝুকে দেখতে লাগল। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে’ এর অনিষ্ট করে দিয়ে গেছে । পোকগুলি বিচলিত হ’য়ে কাদায় এদিক ওদিক তাড়াতাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর তাদের জলমগ্ন সঙ্গীদের বয়ে নিয়ে যাবার জন্যে ব্যস্ত হ’য়ে চেষ্টা করছে। টেরেনট র্দীত খিচিয়ে বললে, “অত হাঙ্গাম আর করতে হবে না, মরবিনি এতে ! রোদুরে গরম হোলেই তোরা আবার চাঙ্গা হোয়ে উঠ বি । এ তোদের একট} শিক্ষা হোলে হাদাগুনে ; দ্বিতীয়বার আর নীচু জমিতে বাসা বাধবি নি।” তারা আবার চলতে লাগল। ডানিলকা একটা ছোট ওকু গাছের ডালের দিকে দেখিয়ে বললে, “এখানে কতক গুনো মৌমাছি রয়েছে।” মৌমাছিগুলি জলে ভিজে ও ঠাণ্ডায় কাতর হয়ে ডালটার উপর গাদাগাদি করে’ বসে’ রয়েছে ; এত মাছি রয়েছে যে ডালের ছাল বা পাতা কিছুই দেখা যাচ্ছে না, অনেকে আবার এর ওর ঘাড়ের উপরেই বসে পড়েছে। টেরেনট তাদের বললে, “একটা ঝাক মৌমাছি ; ওরা বাসার খোজে উড়ে বেড়াচ্ছিল, এমন সময়ে যখন বিষ্টি এসে পড়ল ওদের ওপোর, ওমনি ওরা বসে* পড়ল ৷ এক ঝাক মৌমাছি ধখন ওড়ে, তখন তাদের ওপোর শুধু জল ছিটিয়ে দিলেই হোলো, তখুনি তারা বসে পড়বে। এখন ধর যদি তোমরা এই ঝাকটাকে নিতে চাও তা হ’লে ঐ ডালটাকে বেঁকিয়ে একটা বোরার ভেতর পূরে দাও, তারপর নাড়া দিতে থাক, ওর} সব ভেতরে পড়ে যাবে।” ছোটো ফীয়কুলা হঠাৎ ভুরু টুক্ল কুঁচকে খুব জোরে