দ্বিতীয় বাসলী-মন্দিরের সম্মুগে গ্রথিত শিলালিপি শ্ৰীযুক্ত সাগরচন্দ্র দে মহাশয়ের গৃহীত আলোকচিত্র হইতে ] বামে খপর, খড়গ ও খর্পর দুই-ই ধাতুনিৰ্ম্মিত, প্রশান্ত হসিতবদনা, কণে কুণ্ডল, কণ্ঠে মুণ্ডমালা, নূপুর-শোভিত চরণদ্বয়ের বামটি শয়ান এক অস্তরের জঙ্ঘায় এবং অন্যটি অস্বরের মস্তকোপরি স্থাপিত । দেবীর দুই পাশ্বে দুই সহচরী। দেখরিয়া মহাশয়কে দেবীর স্তবের কথা জিজ্ঞাসা করায় তিনি স্তবটি এইরূপ বলিলেন – ওঁ আয়াত স্বৰ্গলোকে দৃঢ়ভুবনতলে কুণ্ডলে কর্ণপুরে সিন্দুরাভাজিহা বিকটিত-দশনা মুণ্ডমাল চ কণ্ঠে । ক্রীড়ার্থে হাস্তযুক্ত পঞ্চযুগকমলে মুগুরং বাজয়ন্তী কৃত্ব হস্তে চ খড়গং পিব পিব রধিরং বাসলী পাতু সনঃ ॥ বর্তমান মন্দিরের পশ্চিমাংশে একই বহিঃপ্রাচীরের অন্তভূক্ত আর-একটি মন্দির দেখিলাম। শুনিলাম চণ্ডীদাসের জীবদ্দশায় বাসলী দেবীর যে-মন্দির নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল সেই প্রথম মন্দির ভাঙ্গিয়া যাইবার পর এই মন্দির নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। ইহার চুড়ার কতকাংশ ভাঙ্গিয় প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড পড়িয়া যাওয়ায় এবং মন্দির ভিত্তি ফাটিয়া যাওয়ায় ইহা দেবীমূৰ্ত্তি ধারণের অনুপযোগী হইয়াছে। এই মন্দিরটি মরগড়ি প্রস্তর ( সং মৰ্কট প্রস্তর, laterite stone) চতুষ্কোণ করিয়া কাটিয় তাহাতে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। বৰ্ত্তমান মন্দিরের ন্যায়"এটিও পঞ্চচূড় ; গঠন-প্রণালী একই ধরণের, কেবল আকারে কিছু বড় মনে হইল। ঐ মন্দিরের পুরোভাগে মন্দির-গাত্র-সংলগ্ন একখানি প্রস্তরফলকে চারিছত্র লিখন দৃষ্ট হইল। তাহ পড়িবাব চেষ্টা করিলাম, কিন্তু ফলকটি উচ্চে থাকায় পড়িতে পারিলাম না। আমরা সেখান হইতে ছাতনার রাজা শ্ৰীযুক্ত হেমেন্দ্রনাথ সিংহের নিকট যাইলাম। রাজবাটী নিকটেই ; রাজা ও র্তাহার কয়েকজন কৰ্ম্মচারী আমাদিগকে সাদরে গ্রহণ করিলেন। রাজবাড়ী হইতে বাশের এক সিড়ী লইয়। রাজ ও র্তাহার কৰ্ম্মচারিগণ সহ পুনরায় বাসলী-মন্দিরে গমন করিলাম এবং ঐ সিড়ীর সাহায্যে দ্বিতীয় মন্দির-গাত্র-সংলগ্ন প্রস্তরফলকের নিকটবর্তী হইয়া ঐ লেখা পাঠ করিলাম। শ্রদ্ধাভাজন শীর্যক্ত বিদ্যানিধি-মহাশয়ও এই বয়সে বিশেষ উৎসাহের সহিত সেই সিড়ী অবলম্বন করিয়া উপরে গিয়া আমার পড়া ঠিক হইল কি না মিলাইয়া দেখিলেন। ঐরূপে ঐ প্রস্তর-ফলকের পাঠ পাইলাম :– ব্ৰহ্মাশেষ-সুরেশবন্দ্যচরণ লীবাসলী-প্রতিয়ে শর্বাস্ত স্মরশায়কওঁ, শশতৃৎ সত্ম্যে শকাব্দে ততে। সমস্ত স্বয় সাগরেন্দুবীরস্ততীত জিসতু কেশরী মুগুধৃত-বরে বিবেকনৃপতিঃ সৌধং দদৌ দার্শদং ॥ লেখাটির তৃতীয় ও চতুর্থ ছত্রের পাঠ সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হইতে পারি নাই ; তবে প্রথম ও দ্বিতীয় ছত্রসম্বন্ধে কোনরূপ সন্দেহের কারণ নাই । দ্বিতীয় ছত্র হইতে পাওয়া যায় ১৬৫৫ শকাব্দে ঐ দ্বিতীয় মন্দির নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। প্রথম মন্দিরের আয়ুষ্কাল দুইশত বৎসর ধরিলেও তাহার নিৰ্ম্মাণকাল চণ্ডীদাসের সমকালেই দাড়ায়। সেখান হইতে রাজা ও র্তাহার লোকজন সহ আদি বাসলী মন্দির স্থানে আসিলাম । দেখিলাম ভগ্নাবশেষ ও ভগ্নস্তুপ। চণ্ডীদাস-ভক্তগণ যদি এখনও আসিয়া ইহা “হইতে সত্যের স্বত্র বাহির করিবার চেষ্টা করেন তাহা হইলে হয়ত সফলকাম হইতে পারেন। আর কিছু দিন পরে হয়ত কালের অঙ্গুলি শেষ চিহ্নগুলিও লোপ করিয়া দিবে।
পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।