পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] ফন্দি জুটে গেল। ভয় দেখিয়ে ত কিছু হ’ল না, এখন আদর করে আর লোভ দেখিয়ে যদি কিছু হয় তারি একটা শেষ চেষ্টা করা যাক না । তখন ফচুনাতোকে সে বললে, বাপধন ! তুমি ত একটি পাকা ঘুঘু হ’য়ে উঠেছ দেখছি—এর পর তুমি একটা সামান্য লোক হবে ন! ! তবে, আমার সঙ্গে এই যা করছ, এটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না। মাতেও আমার কুটুম্বু, তাকে চটাবার ভয়ে কিছু করতে পারছিনে, নইলে, কোন শাল। আজ তোমাকে এইখান থেকে পাকডে নিয়ে না যেত !” “বা রে !” আচ্ছা, মাতেও ফিরে আসুক, তার পর দেখাচ্ছি তোমাকে । এইসব মিথ্যা কথা বলার দরুণ এমন চাবুক খাবি, যে পিঠে রক্ত ফুটে বেরুবে ।” “আমার কথা যদি শোনো মামু, তবে এখানে বসে’ বসে’ সময় নষ্ট কোরো না ; এই বেলা বেরিয়ে পড় ; নইলে, জানেত্তে যদি একবার ‘মাকী’তে গিয়ে পৌছতে পারে, তখন আর তাকে খুঁজে বার করে ধরা তোমার সাধিতে কুলোবে না ।” তথন দলপতি পকেট থেকে একটা রূপোর ঘড়ি বার করলে, তার দাম খুব কম হ’লেও পঞ্চাশ টাকা । তাই দেখে ফচুনাতোর চোখ দুটাে একটু ডাগোর হয়ে উঠেছে লক্ষ্য করে’, সে তার চেনটা ধরে দোলাতে-দোলাতে বললে— “কি বলিস্ রে ছোড়া ! এই রকম ঘড়ি একটা গলায় ঝুলিয়ে বেড়াতে কেমন লাগে ? তা হ’লে, পোর্টে ভেচ্চোতে গিয়ে, রাস্তায়-রাস্তায়, মাথাটা উচু করে’ বেড়াস, না ? লোকে জিজ্ঞেস করবে ‘কটা বেজেছে মশাই ? অার তুই অমনি গম্ভীর হয়ে বলবি, দেখনা আমার ঘড়িতে ” “আমি যখন বড় হ’ব, আমার কাক আমায় একটা ঘড়ি দেবে বলেছে।” “বটে। তা’ তোর খুড়তুত ভাই ত এর মধ্যেই একটা খড়ি পেয়ে গেছে—এত ভালো ঘডি নয় যদিও, তবু তুই ত’ এখনো পাসনি, সে তোর চেয়ে কত ছোট !” মাতেও ফালকোনে WO96: শুনে ছেলেটা একটা নিঃশ্বাস ফেললে । “সে যা হোক গে। এখন বলদিকিন, ঘড়িটা তোর বেশ পছন্দ হয় কি ?” বেড়ালকে একটা আস্ত মুরগীর ছানার লোভ দেখালে, তার যে ভাবটা হয়, ফচুনাতোর ঠিক তাই হ’ল—সে কেবল আড়-চোখে ঘড়িটার পানে চাইতে লাগল। বেড়াল ঠাট্ট মনে করে থাবা বাড়াতে ভরসা করেন, আবার পাছে লোভটা বেশী হয়ে পড়ে বলে’ মাঝে মাঝে চোখ ফিরিয়ে নেয় ; কিন্তু ক্রমাগত জিভ দিয়ে মুখ চাট তে থাকে, আর যেন মনিবকে বলতে থাকে—“এ কিরকম নিষ্ঠুর ঠাটা তোমার ?” কিন্তু এক্ষেত্রে দলপতি গাম্বা সত্যি-সত্যিই ঘড়িটা তাকে দিতে চাইছে। ফচুনাতে হাত বাড়ালে না বটে, তবু একবার বললে “ঠাট্টা কর কেন!” “ঈশ্বর সাক্ষী ক’রে বলছি, ঠাট্ট নয়। শুধু, জানেত্তে৷ কোথায় আছে বলে’ দিলেই ঘড়িটা তোকে দিয়ে দেবো ।” ফচুনাতে তাই শুনে অবিশ্বাসের হাসি হাস্লে। সে দলপতির চোখের ভিতর কি যেন বেশ করে দেখে নিতে লাগ ল—অর্থাৎ তার কথায় যে বিশ্বাসের ভাব আছে, তার চোথেও তাই আছে কি না । তখন দলপতি বলে উঠল, “আমি যদি আমার কথা ন রাখি,তা' হলে চাকুরিতে আমার যেন অধঃপতন হয়। এই সব আমার লোকেরাই সাক্ষী রইল, যা বলেছি তা আর ঘুরিয়ে নেওয়ার যে নেই –বলতে বলতে ঘড়িটা তার মুখের এত কাছে নিয়ে গেল যে, প্রায় তার গালে ঠেকবার মত হ’ল। তার গাল দু’খানা তখন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে—দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছিল, ছেলেটার প্রাণে তখন,ধৰ্ম্ম অব লোভ—এই দু’য়ের লড়াই চলেছে। বুকটা ফুলে ফুলে উঠছে, গলার স্বরও যেন বদ্ধ হয়ে আসছে। এদিকে ঘড়িটা তার চোখের ঠিক উপরেই দুলছে, এক-এক বার ঘুরতে-ঘুরতে নাকের ডগায় এসে ঠেকৃছে। শেষকালে তার ডানহাতখানা একটু-একটু করে ঘড়িটার দিকে উঠতে লাগল, তারপর আঙ্গুলের ডগা দিয়ে সেটা ছুয়ে রইল, ক্রমে ঘড়িটার সব ভারটুকু তার হাতের উপর পড় ল—তখনও দলপতি চেনট।