পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

♥ፃ8 প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড জীবনকে বৃহত্তরভাবে দেখিতে আমি শিথিয়াছিলাম এবং তখন হইতে আজ পর্য্যন্ত সেই ভাবেই দেখিয়া আসিতেছি । বাৰ্দ্ধক্য সত্ত্বে ও আমার সে-দৃষ্টির প্রসারতা আরও বাড়িয়াছে। আমি নয়টি সস্থানের জননী । বৃহৎ একটি সংসার পরিচালনার উপর এতগুলি সস্তানের ভারবহন করা স্ত্রীলোকের পক্ষে প্রচুর শক্তিসাধ্য ব্যাপার ; এক-এক সময় ইহা আমার কাছে সাধ্যাতিরিক্ত হইয়া উঠিত । আমার সংসারের অন্যান্য কৰ্ত্তব্যের উপর মাসে দুইবার করিয়া বিশ্ব-বিদ্যালয়ের ছেলেদের বাড়ীতে আনার আরএক কৰ্ত্তব্য ছিল । আমি কিন্তু সাংসারিক বাঞ্চটে নিজেকে তলাইয়া যাইতে দিই নাই ; বরঞ্চ সঙ্গীত, সাহিত্য ও সমাজহিতৈষণার কার্য্যে আত্মাকে মুক্তির আনন্দ পাইতে দিতাম। নরওয়ের স্বৰ্গীয় কবি Rjornson ( বিয়বৃনসন । ও তাহার পত্নীর সহিত বন্ধুত্বের বন্ধন আমার আধ্যাত্মিক জীবনের অমূল্য সম্পদ ছিল। পুরুষেরাই যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমার আধ্যাত্মিক উন্নতির উপর অধিকতর প্রভাব বিস্তার করিয়াছিলেন ইহা আমাকে স্বীকার করিতেই হইবে । এবিষয়ে দুইটি ব্যতিক্রম ছিল । একটি আমার ভগিনী আর একজন ছিলেন প্রসিদ্ধ সাহিত্য-সেবিকা এলেন কেই (Ellen Key) আমার দৃষ্টির প্রসারত দানে কবি বিয়র্নসনের কৃতিত্বই সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক । মীজাতি ও তাহার সামাজিক প্রতিষ্ঠার প্রতি র্তাহার বিশ্বাসই আমাকে আত্মপ্রত্যয় দিয়াছিল । জনসাধারণের কাছে বক্তৃতা দেওয়ার কার্য্য যে গ্রহণ করে, তাহার পক্ষে এই আত্মপ্রত্যয়ের বিশেষ প্রয়োজন আছে, এবং ঠিক এই জিনিষটিরই অভাব বিশেষ ভাবে আমার মধ্যে ছিল । অনেককাল পর্য্যস্ত আমার দৃঢ়বিশ্বাস ছিল যে, আমি কোনো কর্শেরই নই। . স্বামীর মৃত্যুর চার বৎসর পরে আমি সুইডেনের রাজধানী ষ্টকহলমে বসবাস স্বরু করি। ১৯০১ খৃষ্টাব্দে আমি মহিলা শাস্তি সমিতির (Woman's Peace Association) isicaä footföö < পরের বৎসর মেয়েদের ভোট পাওয়ার আন্দোলন আমার স্কন্ধে বিষম এক কাজের বোঝা চাপাইয়া দিল, কারণ দেই বৎসর ষ্টকহলমের মেয়র কাললিগুহাগেন পালামেণ্টে মেয়েদের ভোট পাওয়ার অধিকার বিষয়ে একটি বিল উপস্থিত করাতে এই সমস্যাটি তখন লোকসমক্ষে প্রকট হইয়া উঠিয়াছিল। মেয়েদের একটি সংঘ (Woman Suffrage League) fo ol, wift হইলাম তাহার সহকারী সভানেত্রী । আমরা বুঝিলাম যে, লক্ষ্য-স্থানে পৌছিতে হইলে এবিষয়ে দেশব্যাপী সমস্ত নারীর আগ্রহ ও উৎসাহ জাগাইতে হইবে । কিন্তু টাক না থাকিলে এবং দেশময় ঘুরিয়া বেড়াইবার সময় আছে এমন বক্তা না থাকিলে একাজ করা সম্ভব হয় কি প্রকারে ? তখন আমার আটটি সন্তানই বড় হইয়া ঘর ছাড়িয়া বাহির হুইয়াছে । কাজেই আমাকে বাধা দিবার কিছু ছিল না ; তবে আমি নিজেকে বক্তৃতা দিবার সম্পূর্ণ অতৃপযুক্ত মনে করিতাম, এই একটা কারণ ছিল । বক্ততার মঞ্চে আরোহণ করা আমার কাছে বধ্যমঞ্চে ওঠার মতই ভয়ঙ্কর বোধ হইত ; অথচ আমার মনের ভিতর হইতে কে যেন কেবলি বলিত—চেষ্টা করা আমার কর্তব্য । আমি বেশ বুঝিয়াছিলাম যে, পুরুষের সহিত সমান দায়িত্ব লইয়া দেশশাসন কাৰ্য্য ও জনসাধারণের অন্যান্য কাৰ্য্যক্ষেত্রে প্রবেশ করিতে হইলে রাজনীতিক্ষেত্রে মেয়েদের ভোটের অধিকারই সর্বপ্রথমে প্রয়োজন । এবং এই সৰ্ব্বসাধারণের কার্য্যে মেয়েদের যোগদান তাহাঁদের নিজেদের পক্ষে এবং রাষ্ট্রের উন্নতির পক্ষে যে সমভাবেই প্রয়োজনীয় তাহ আমার স্থির বিশ্বাস ছিল । আমি একটা বক্ত তার খসড়া তৈয়রি করিলাম, আশা করিলাম সেটা জ্ঞানগর্ভ ও ভাবোদাপকই হইবে । তাহার পর ছেলে বলায় যেমন করিয়া গানের জন্য গল। সাধিতাম, তেমনি করিয়া গলার স্বরটা ঠিক করিয়া লইতে লাগিলাম। কয়েক মাস পরে মনে হইল কাজের উপযুক্ত হইয়াছি ; তখন নানা সহরে পরিচিত ও অপরিচিত বহু লোককে চিঠি লিখিলাম, তাহাদের সহরে আমার বক্ততার জন্য একটি হল ঠিক করিয়া দিতে এবং