পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধৰ্ম্ম ও জড়তা ঐ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজ প্রভাত করে ঘরে তিমির-দ্বার খুলে গিয়েছে ? যে চোখ খুলে আছে। সব চেয়ে দুঃখ তার, যে আলোকের মধ্যে থেকেও চোখ বুজে আছে ; যার চারিদিকে আঁধার নেই ; যে আপন আঁধার আপনি স্বষ্টি ক’রে ব’সে আছে । আজ পশ্চিমদেশ যুরোপ নানাজ্ঞান নানাবিধ কৰ্ম্মশক্তিতে নব-নব বলে চোপ খুলে এগিয়ে চলেছে, তার নিত্য নব-জাগরণ চলেছে । ভারত যে তার চোখ খুলতেই চাচ্ছে না। আপন চোখ বুজে মিথ্যা অন্ধকার স্থষ্টি ক’রে তার মধ্যে ব’সে ভাব চে, সে এমনি ক’রে তার আধ্যাত্মিক স্বৰ্গ পাবে। যুরোপের পন্থা হ’ল জ্ঞানবিজ্ঞান ; সেই পথটি সত্য ও বিশুদ্ধ রাখবার জন্য কত যত্নে, কত ধীরে, কত সাবধানে যুক্তি ও বিচার পরখ করে করে সে তার তত্ব নির্ণয় কর্চে। আমরা নাকি ধৰ্ম্ম প্রাণ জাতি ! তার পরিচয় হ’ল কেমন ধারা ? আজ ভারত তার ধৰ্ম্মের পস্থাকে পবিত্র রাখতে পারেনি ব’লে তার সব চেয়ে কঠিন সমস্ত। তার ধৰ্ম্মে । যা-কিছু ঘাড়ের উপর এসে পড়চে তাই নিৰ্ব্বিচারে ধর্মের নামে মেনে নেওয়ার নাম উদারতা নয়, তা হ’ল ভয়ঙ্কর অন্ধত, জড়তা । এই জড়তাকে যখন কোনো জাতি উদারতা মনে ক’রে পূজা করে তখন তার মরণ আসন্ন। ধৰ্ম্মের যথার্থ সত্য স্বরূপটিও অতি সাবধানে বৈজ্ঞানিকের সত্যের মত নানাদিক থেকে যাচিয়ে পরখ ক’রে নিতে হয় । ধৰ্ম্ম যুদি কোনো জাতির প্রাণ হয়, তবে সেই জাতির এই বিষয়ে যেন সাবধানতার ও শুচিতার শেষ না থাকে, কারণ একটু অন্ধ হ’লেই তার মৃত্যু এই দিকৃ থেকেই আসবে। যদি এ বিষয়ে একটুও জড়তা থাকে, তবে যত মিথ্য সংস্কার ক্ষুদ্র সম্প্রদায়-বুদ্ধি, নিরর্থক-আচার, অন্ধ-আবর্জন এসে ধৰ্ম্মের সিংহাসনকে অধিকার ক’রে ধৰ্ম্মকে চেপে মেরে ফেলে । ভারতের আজ এই দশা । সে আজ ভাল-মন্দ, মহৎক্ষুদ্র সবই এক সঙ্গে তাল পাকিয়ে মেনে নিচ্চে। ভারতের সমস্ত এইখানে ; এই দিক্‌ থেকেই তার মৃত্যুর আয়োজন চলেছে। তাইতে আজ দেখচি ধৰ্ম্মের নামে পশুত্ব দেশ জুড়ে বসেছে। বিধাতার নাম নিয়ে একে অন্যকে নিৰ্ম্মম আঘাতে হিংস্থ পশুর মতে মাবৃচে । এই কি হ’ল ধর্মের চেহারা ! এই আধ্যাত্মিকতা দিয়েই ভারত সব বিজ্ঞানবাদের উপর মাথা তুলে অমৃততত্ব লাভ করবে ? একে অন্যকে মারচে, এই কথাটিই সব চেয়ে দুঃখের কথা নয়—যদি এই মারাট জীবনের প্রাচুর্য্য, জীবনের চঞ্চলত থেকে হ’ত। যেখানে জীবনের প্রাচুর্য্য-শক্তির অজস্র লীলা, সেখানে চঞ্চলত দৌড়ধাপ মারামারি প্রভৃতির মধ্য দিয়ে ক্রমে সব ঠিক্‌ হ’য়ে আসে। শিশুর জীবন-লীলাব প্রাচুর্য্যে সে ওঠে পড়ে ভাঙে, আঘাত পায় ও আঘাত দেয়; তাতেই ক্রমে সব ঠিক হ’য়ে আসে। কিন্তু এতো তা নয়, এ সে নিজীবের হঠাৎ প্রচণ্ড হ’য়ে নিৰ্ম্মম হ’য়ে ওঠা । আচল পাথর যেমন হঠাৎ স্থলিত হ’য়ে সৰ্ব্বনাশ করে। সেই বুদ্ধিহীন জড়ধৰ্ম্মী নৃশংসতাকে দৈব-পূজার উপলক্ষ্যে ধর্শ্বের নামে পরিচিত ক’রে আপনাকে ও বিশ্বশুদ্ধ সকলকে ফাকি দেবার চেষ্টা । এর কি কোনো কৈফিয়ং থাকৃতে পারে ? এই মোহমুগ্ধ ধৰ্ম্মবিভীষিকার চেয়ে সোজাসুজি নাস্তিকতা অনেক ভাল। ঈশ্বরদ্রোহী পাশবিকতাকে ধৰ্ম্মের নামাবলী পরলে যে কি বীভৎস হয়ে ওঠে, তা চোখ খুলে একটু দেখলেই বেশ দেখা যায়। এর চেয়ে ভীষণ, এর চেয়ে কলুষিত অ:র কি হ’তে পারে ? সত্যের সঙ্গে মিথ্যা এসে জুটেছে। খাটির সঙ্গে কলঙ্ক মিশে গেছে। যুরোপ তার জ্ঞান-সাধনার পথে কোনো কলঙ্ককেই, কোনো মিথ্যাকেই সহ্য করতে পারে না, তাকে পরথের আগুনে পুড়িয়ে ফেলে । তাই তারা বেঁচে আছে।