পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা । জীবনদোলা 8ミ、> তার বাড়া পাপ যে নাই ! এই মানুষের কোলেই একদিন কন্যারূপে আপনার বক্ষের ধনটিকে তরঙ্গিণী তুলিয়। দিয়াছিলেন, নিশ্চিন্ত হইয়াছিলেন। আজ পুত্র হারাইয়া সেই কন্যারূপিণী অভাগিনী শিশুর জন্য তাহার মাতৃহৃদয় ত কাদিল না, বুকে তুলিয়া বুকের জালা জুড়াইতে চাহিল ন ; বিষাক্ত বাক্যের বাণে দহিতে চাহিল। হায়, এই তাহার আদরিণী গৌরীর ভবিষ্যৎ ! তরঙ্গিণী মনের ভয় চাপিয়া রাখিতে পারিলেন না । আজ না হউক দুইদিন বাদে গৌরীর কথা ত সেখানে পৌছিবেই। এই ঘটুকীই এখানে গৌরীর জন্য সহানুভূতি দেখাইয়া গেল, সেখানে গিয়া গৃহিণীদের কুটুম্বদ্বেষের গোরাক জোগাইবার জন্য পাচকথা রং চড়াইয়া কি আর বলিবে না ? তখন না জানি তাহারা কি নিষ্ঠুর বিধান করিবে ? সারাদিন অসোয়াস্তিতে র্তাহার সময় কাটিল । কোনো কাজে মন লাগে না । যতবার গৌরীকে দেখেন ততবার সমস্ত বুকটা যেন কাদিয়া উঠে । কতবার ভাবিলেন ছোট বেীকে দুটো কথা জিজ্ঞাসা করিবেন ; কিন্তু কথা মুখের ডগায় আসিয়া থামিয়া গেল। কি বলিবেন তিনি ? নিজের মেয়ের লাঞ্ছনার ভয়ে তাকে কি সে বাড়ীতে কন্যা দিতে মানা করিবেন ? এমন কথা কি কখনও বলা যায় ? রাত্রি অন্ধকার হইয়া আসিল । ছোট ছেলেদের খাওয়া-দাওয়ার হাঙ্গামে, শাশুড়ী ননদদের জল খাবারের ব্যবস্থা করিতে, কুচোকাচার দুধ জোগাইতে, পুরুষদের থাবার সাজাইয়া রাখিতে সময়ট যে কোথা দিয়া চলিয়া গেল তিনি টের পাইলেন না। সারাদিন কাজের চাপ হাস্কা ছিল তাই থাকিয়া থাকিয়া মনটা হাপাইয়া উঠিতেছিল দিন বুঝি আর কাটে না ; মনের বোঝাটা নামাইয়া হাল্কা করিবার একমাত্র অবসর সেই গভীর রাত্রি এখনও কত দূরে পড়িয়া। কিন্তু সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে সময়ের গতি যেন কাজের টানে দশগুণ বাড়িয়া গেল, মনটাকে চাপা দিয়া কলের মত শরীরটা কোনো-প্রকারে সময়ের দাবী মিটাইয়া ছুটিতেছিল। তখন অনেক রাত্রি; গ্রীষ্মাধিক্যে কেহ খোলা ছাদে, কেহ বারান্দায় মাদুর পাতিয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছে ; কেহ বা পরীক্ষার পড়া পড়িতে পড়িতে খোলা জানালার পাশে মুছ হাওয়ায় শ্রান্ত মাথাটা টেবিলের উপরই দিয়া ঝিমাইতেছে । কচি ছেলের মাদের ঘরের আলো অনেকক্ষণ নিভিয়া গেছে । পথের চলাচলও কমিয়া আসিয়াছে ; রাত্রির নিস্তব্ধত ভেদ করিয়া পাশের গলির সারাদিনের পরিশ্রমে শ্রান্ত থোটা পসারীদের রামায়ণ গান চারিদিকে ছড়াইয়া পড়িতেছে। এমন সময় নির্জন কক্ষে সারাদিনের পর তরঙ্গিণী প্রথম বিশ্রাম পাইলেন, হরিকেশবেরও দেখা এই প্রথম মিলিল । ঘরে না ঢুকিতেই তরঙ্গিণী রুদ্ধ নিশ্বাসে ছুটিয়া আসিয়া স্বামীকে বলিলেন, “ওগো শুনেছ, ময়নার ওরা আবার ওই বাড়ীতে বিয়ের কথা তুলেছে । কি হবে বল ত ?” হরিকেশব বিছানার উপর জামাটা ফেলিয়া পাশে বসিয়া পড়িয়া বলিলেন, “সত্যি ? সাধন ত আমাকে কিছু বলে নি ?” o তরঙ্গিণী বলিলেন, “তুমিও যেমন ! আগে-ভাগে তোমাকে বলতে যাবে কেন ? দরকার বুঝে ঠিক সময় বলবে ; এদিকে দিনও কিছু কেটে যাবে।” হরিকেশব তাড়াতাড়ি বলিলেন, “হ্যা, তা এ সময় আমাকে বঁচিয়ে চলাই সাধনের পক্ষে স্বাভাবিক । কিন্তু আমি যে বড় ভাবনায় পড়লাম দেখছি। গৌরীর কথা জানাজানি হ’লে সাধনের মেয়ের বিয়ের আবার অসুবিধা হ’তে পারে। কি করা যায় বলত ?” তরঙ্গিণী অশ্রুউচ্ছসিত-কণ্ঠে বলিলেন, “করা যাবে ছাই ; ওদের ত ভারি অস্থবিধা ! আমারই দুধের মেয়েটার প্রাণ যাবে । ওর কি এই নিয়ম আচার করবার বয়স না বুদ্ধি। চিরটা কাল আদর পেয়ে এসেছে, আজ এই বিয়ে বাড়ীর মাঝখানে সবাই ওকে দূর দূর করলে আর শ্বশুরবাড়ীর গালমন্দ কানে গেলে মেয়ে কি আমার ঠাচ বে ? ও মেয়েও যাবে।” হরিকেশব মাথায় হাত দিয়া বলিলেন, “নাঃ, সে চখন হ’তেই পারে না । গৌরীকে আমি ওদের কথা পালতে দেব না । সে যা হয় হোক । আমার মেয়ে নিয়ে আমি চলে যাব ।” তরঙ্গিণী বলিলেন, “দেখ, হিসেব ক’রে কথা বল । মেয়ের জন্যে কেউ কি কখনও