পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२२ দেশত্যাগী হয় না হয়েছে যে তুমি একটা অসম্ভব কথা ব’লে বস্লে ?” হরিকেশব বললেন, “কেউ কি করেছে না করেছে জানি না। আমি যা বুঝি, তা আমি করব। একট। মস্ত পাপ করেছি, আর পাপ বৃদ্ধি করতে পারব না। শিশুহত্যার মহাপাতক আর যেন এ জন্মে না করতে হয় । আমার প্রায়শ্চিত্ত হবে এমনি ক’রে । তার জন্তে যা দণ্ড নিজেকে দিতে হয় আমাকে তা দিতে হবে । পুণ্যের লোভে ধনের লোভে সথের খেলায় মত্ত হ’য়ে নিজের সন্তানকে বলি দিয়েছি, তার দণ্ড না দিলে চলবে কেন ?” তরঙ্গিণী আর কিছু বলিলেন না। দেখিলেন স্বামী এদিকে অনেক দূর পর্যন্ত ভাবিয়া মনে মনে অনেকখানি অগ্রসর হইয়াছেন। র্তাহার মনে কি একটা দৃঢসংকল্প জাগিয়াছে ; যত বাধা-বিপত্তির মধ্যে পড়িবে, ততই তাহা কঠিন হইতে কঠিনতর হইয়া উঠিবে। ( & ) গৌরীর পিতামাতা যখন র্তাহীদের আসন্ন পরীক্ষা ও কন্যার ভাগ্য-বিপর্য্যয়ের ভাবনায় ভাঙিয়া পড়িতে ছিলেন, হরিসাধন তখন সস্ত্রীক অচির ভবিষ্যতের সুখস্বপ্নে মাতিয়া কাজে কথায় ও চিস্তায় যেন চারিদিকে আনন্দ বিকীরণ করিতেছিলেন । সে আনন্দচ্ছটার তাপে পাছে গেীরীর মনে হঠাৎ আঁচ লাগিয়া যায় এই আশঙ্কায় তরঙ্গিণী শঙ্কিত হইয়া উঠিয়াছিলেন। এমনি ভাবে একই পরিবারের মধ্যে মুখ দুঃখ আশা আশঙ্কার খেল নানারূপে নানাদিন দেখা দিতে লাগিল । সে খেলা আর লুকোচুরির খেলার মত আড়ালে আড়ালে চলে না, স্বম্পষ্ট প্রয়োজন তাহাকে মুখোমুখি আনিয়া ফেলিল । সেদিন সন্ধ্যায় হরিকেশবের আপিসঘরে বাহিরের লোক ছিল না । একলা · ঘরে বসিয়া তিনি টেবিলের উপর রাশীকৃত ছিন্ন-মলাট কতকগুলি কি সংস্কৃত শাস্ত্রগ্রন্থ উণ্টাইতে ছিলেন। এমন সময় হরিসাধন পায়ের চটিজুতা দরজার কাছে খুলিয়া রাখিয়া নিঃশব্দে নতমস্তকে ঘরে আসিয়া ঢুকিলেন। ঘরে লোক আসাটা নূতন ব্যাপার মোটেই নয়, স্বতরাং কে যে কথন কি উদ্দেশ্যে প্রবাসী-আষাঢ়, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড আসিতেছে, হরিকেশব নিতান্ত বাধ্য না. হইলে প্রায়ই তাড়াতাড়ি চোপ্ত তুলিয়া দেখেন না । হরিসাধন অগত্য দুৰ্ব্বোধ্য সংস্কৃত গ্রন্থই দুচারখানা টানিয়া কিছুক্ষণ মন দিয়া পড়িবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। কিন্তু যে রসের সাগরে তাহার মন ডুবিয়াছিল, হরিকেশবের ছিন্ন-মলাট জীর্ণ পুথির স্থান সেখানে কোনো দিন হয় না । কাজেই বেশীক্ষণ পারা গেল না। বই হইতে মুখ তুলিয়া তিনি দাদার মুখের দিকে তাকাইয়া বসিয়া রছিলেন, কখন অকস্মাৎ তাহার দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়া যায়। মনের কথাট বলিয়া মনটা হালকা করিয়া না ফেলিলে আর চলে না। হরিকেশব স্থলিত চশমাট ঠিক করিয়া লাগাইতে লাগাইতে হঠাৎ একবার চোথ চাহিয়া ভ্রাতার উদগ্রীব মুখ দেখিয়া বলিলেন, “সাধন, কিছু চাও?’ সাধন মাথাটা একটু নীচু করিয়া একবার ঢোক গিলিয়া বলিলেন, “দাদা, আপনাকে এতদিন কি যে বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। হ্য, আমার বড় অন্যায় হ’য়ে গেছে। কিন্তু কি করি বলুন, উপায় ছিল না।” হরিকেশব তাহার ভূমিকার কিছু মাত্র অর্থ হৃদয়ঙ্গম করিতে না পারিয়া বলিলেন, “কি অন্যায় হয়েছে সাধন ? আমি ত কিছু অন্যায়ের কথা শুনি নি।” হরিসাধন ব্যতিব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “অন্যায় বই কি ! আপনাকে আমার আগেই বলা উচিত ছিল। ময়নার বিবাহ দেবার কথা কি আর আমার ? সেত আপনারই কাজ। আপনার অনুমতি ব্যতীত কোনো কাজ করতে যাওয়াই আমার বাতুলতা। তবে আপনার মনের এমন অবস্থাতে বাধ্য হয়ে আমাকেই ভার নিতে হয়েছে। যাক, ভগবানের কৃপায় একরকম প্রায় সব ঠিক হ’য়ে এসেছে। এখন দুটো চারটে যা বাধা বিপত্তি আছে, সেগুলোকে কোনোরকমে কাটিয়ে উঠতে পারলেই হয়।” হরিকেশব ব্যাপারটা বুঝিয়। বলিলেন, “ইn, তুমি যখন অল্প বয়সেই বিবাহ দিতে চাও তখন নিজে অগ্রসর হ’য়ে ভালই করেছ । আমার পক্ষে এজীবনে ও কাজটা আর শোভন হ’ত না। কিন্তু তবু তোমার স্ববিধ অসুবিধাগুলো আমাকেই দেখতে হবে ত । খরচপত্রের জন্য আমি ভাবছি না ; সে আমরা ক’ভাই মিলে’ যেমন