পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8&&. ছুটিয়া গেল ; সে বিছানা ছাডিয়া অৰ্দ্ধপরিহিত ছোপানে শাড়ীখান মাটিতে লুটাইতে-লুটাইতে একেবারে বাহির বাড়ীতে দৌড় দিল। শৈলর বিদ্রোহের কোলাহলে ময়না, ট্যাব, টিনি সবাই বিস্ময়ে বড় বড় চোখ মেলিয়। ঝাকুড়া মাথা তুলিয়| বিছানার উপর সার দিয়া উঠিয়া বসিল । মা শৈলর পিছনে তাড়া করার চেষ্টা ছাড়িয়া দিয়া নিদ্রাকাতর ও বিস্মিত ট্যাবাকেই টানিতে-টানিতে জ্যাঠাইমার দরজায় দাড় করাইয়। নিজের শিক্ষিত বুলি আবৃত্তি করাইবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। লক্ষ্মীছাড়া ছেলেমেয়েগুলার জালায় তাহার কাজের বেল হইয়। যাইবার জোগাড় হইল। বেলা বাড়িবার সঙ্গে সঙ্গে হুড়াহুড়ি পড়িয়া গেল । কাজ করিবার লোক বিছানা ছাড়িয় অনেকেই উঠিল বটে, কিন্তু কাজ যেন তাহা অপেক্ষা সহস্ৰ গুণ বাড়িয়া গেল । চাকর গুলা একটা জিনিস আনিতে বাজারে যায় ত আর ফেরে না, অন্য অন্য জিনিস যে কে আনিয় দেয় তাহার ঠিক নেই। চাকরদের ডাকিয় আনিতে বাড়ীর ছেলেগুলা পৰ্য্যন্ত একে একে বাহির হইয়া গিয়াছে । দরজার গোড়ীয় উৎকণ্ঠিত দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যদি বা তাহার দল বাধিয়া ফেরে ত অৰ্দ্ধেক গুলারই শুধুহাত! কারণ কিনা, ঠিক যে জিনিসটি ও যে দামটি বলিয়া দেওয়৷ হইয়াছিল, বাজারে তাহা মিলে নাই। হতভাগাদের যদি মাথায় এক ফোটাও বৃদ্ধি থাকে ! একটা না পাইলে যে আর একটা আনিতে হইবে ইহা ও আবার তাহদের বলিয়া দিতে হইবে! বলা হয় নাই বলিয়। এত ঝঞ্চাটের উপর আবার কৰ্ত্তার মুর্থনাড় । মৃণালিনীর চোখে জল আসিয়া গেল । এদিকে দেখা গেল তুচ্ছ জিনিষের জন্য সব কট খুচরা টাকা খরচ করিয়া সব কয়জন লোককে বাহিরে পাঠাইঃ আসল ফরমাসী মিষ্টান্ন ও অসময়ের ফল আনিবার জন্যই কৰ্ত্ত টাকা ও লোকের ব্যবস্থা করিতে ভুলিয়া গিয়াছেন। সে ব্যবস্থা হউক বা না হউক গৃহিণী এই স্থযোগে কৰ্ত্তার পুরুষালি বুদ্ধিকে বেশ দুই চারিট চোথা চোখা কথা শুনাইয়া লইলেন। যত দোষ মেয়ে মানুষের, আর বুদ্ধির ধ্বজা পুরুষের সাত খুন মাপ! প্রবাসী আষাঢ়, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড যাহা হউক, ছেলে বুড় বউঝি চাকর বাকর সকলের মিলিত চেষ্টায় গণ্ডগোল অনেক বাড়িল বটে, কোনে আয়োজন হিসাবের ভুলে দুইবার হইল,কোনোটা মোটেই হইয়া উঠিল না ; তবু মোটের উপর বেলা তিনটার আগে বহিরের ঘরের উংসব সজ্জা একরকম সমাপন হইল। তাহাতে রুচির পরিচয় থাকুক বা না থাকুক আড়ম্বরের পরিচয়ট নিতান্ত কম হয় নাই । ভিতর বাড়ীতেও বৈকলিক আহারের জন্য ফল, মিষ্টান্ন, সরবং লুচি তরকারিতে যাহা জমিয়া উঠিল, বাড়ীর ভিন্ন ভিন্ন গৃহিণী গু কৰ্ত্তার মনোমত ফদের সব কটি তাহাতে না থাকিলেও এই দারুণ গ্রীষ্মের দিনে সৃষ্টিধর ও র্তাহার সাঙ্গোপাঙ্গকে তাহার সব কটি কেবল আস্বাদন করিতেই গলদঘৰ্ম্ম হইতে হইত, এবং বাড়ী ফিরিবার সময় প্রত্যেকের ওজন আস্থত পক্ষে দুষ্ট সের করিয়া বাড়িয়া যাইত । ভোর হইতে তরঙ্গিণী যেন পক্ষীমাতার মতন গৌরীকে বুকের আড়ালে লুকাইয়। রাখিবার চেষ্টা করিতেছিলেন ; কিন্তু আনন্দ-কোলাহলের মধ্যে আদুরে ছোট মেয়েটিকে কি আটক করিয়া রাখা যায় ? মা বার বার ডাকাডাকি করিয়া তাহাকে একটা বাজে খেল কি কাজে লাগাইতে যান, সে বার বারই মলের শব্দে পথ কাপাইয়া ভিড়ের মাঝখানে গিয়| হাজির হয় । ময়নাকে সাজানো হইতেছিল । আজিও সেই কয়মাস আগেকার উংসবের দিনের মত প্রসাধন-নিপুণ লাবণ্যের হাতেই ময়নার রূপের উৎকর্ষসাধনের ভার পড়িয়াছিল । ঠিক তেমনই গহন কাপড়ের স্ত,পে ও তেল এসেন্সের শিশির অরণ্যে লাবণ্যের গৃহতল ও পালঙ্ক কণ্টকিত,তেমনই সখীজনের মস্তব্যে গৃহ মুখরিত, হাসে কলহে ও বচসায় আসল কাজের গতি রুদ্ধপ্রায । সেদিনকার কথা হয়ত এক আধবার কাহারও মনে পড়িতেছে, কিন্তু বৰ্ত্তমান আনন্দের স্রোতের মাঝখানে অতীত দুঃখ শোকের দিকে . মানুষ সহজে ফিরিয়া তাকাইতে চায় না। হাসির হিল্লোলে তরুণীরা বিশেষ করিয়া অতীতকে যেন জোর করিয়া ঠেলিয়া ভাসাইয় দিতেছিল। শুধু লাবণ্যের মুখখানা থাকিয়া থাকিয়া গম্ভীর হইয়া উঠিতেছিল। সে ধে নিজের হাতে নিজের ক্ষুদে ননদটিকে এমনি করিয়াই