পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8રાઇ ’ গলায় চুনট করা ঢাকাই চাদর দড়ির মত করিয়া পাকাইয়া জড়াইয়া আতরের গন্ধে দিক আমোদিত করিয়া সদলে স্বষ্টিধর আসিয়া উদিত হইলেন। উঠাইয়া, বসাইয়া, হাটাইয়া, চলাইয়া, রুমাল দিয়া মুখের পাউডার ঘসিয়া তুলিয়া, সাম্নে পিছনে খুরাইয়৷ নানারকমে ময়নাকে পরীক্ষণ করা হইল, তারপর তাহাকে দুই চারিট প্রশ্ন করিয়া বিদায় দিয়া বিপুল আহারপৰ্ব্ব চলিল। হরিসাধন ও হরিকেশব যখন ইপি ছাড়িয়া মনে করিতেছেন যে, এইবার বুঝি তাহদের ব্রত উদযাপন হইয়া মুক্তি লাভ হইবে তখন স্বষ্টিধর হঠাৎ বলিলেন, “আমাদের বোমাকে একবার দেখে যাব।” হরিসাধন শিহরিয়া উঠিলেন, হরিকেশল কিছুক্ষণ গম্ভীর হইয়া বসিয়া শেষে বলিলেন, “একটু অপেক্ষ করুন, আনছি।” তরঙ্গিণীর কাছে গিয়া হরিকেশব যখন বেহাইএর ইচ্ছ। জ্ঞাপন করিলেন, গৌরী তখনও কাদিতেছে । হরিকেশব তাহার কান্নার কারণ সংক্ষেপে শুনিয়। মুখটা বিকৃত এবং আরো গম্ভীর করিলেন । তারপর গৌরীকে বলিলেন, “এস মা, তোমাক একবার ওরা দেখতে চাইছেন। প্রণাম ক'রে চলে আসবে । তরঙ্গিণী বলিলেন “রোসো, একটু ঠিকঠাক ক’রে দি ” তিনি গৌরীর পায়ের ঝর্ণঝ মল জোড়া খুলিয়া লইলেন, গায়ের গহনাও কিছু কমাইয়া লইলেন । গৌরী নিজের গহনা দিয়া ময়নাকে সাজাইতে গিয়া আজ বড় অপমানিত হইয়াছে। তাহাকেও ইহারা দেখিতে চাহিয়াছেন শুনিয়া সে স্বর্থী হইয়া প্রতিশোধ লইবার জন্য ব্যগ্র হইয়া উঠিল । সে বলিল, “মা, ময়নাটা নাই বা পৰ্বল আমার গয়না! ওর বিচ্ছিরি গয়নাই থাক ; আমার সব ভালগুলো আমাকে পরিয়ে দাও।” মা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, “না, মা, আজ থাক। আর একদিন দেব।” গৌরী চটিয়া কাদিতে ১লাগিল, “কেন তোমরা সবাই মিলে আজ আমার সঙ্গে লাগ ছ? অমন করলে আমি থাকৃব না তোমাদের বাড়ীতে ।” মা কিছু না বলিয়া একখানা সাদাসিধা কাপড় আনিয়া গৌরীকে পরাইতে গেলেন। গৌরী টান মারিয়া সেখানা প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড ছিড়িয়া ফেলিল। হরিকেশব মুখখান ফিরাইয়া বাহিরের দিকে চাহিয়া রহিলেন ; তারপর বলিলেন, “ও যা চাইছে, তাই না হয় দাও পরিয়ে ।” তরঙ্গিণী বলিলেন, “সে হয় না।” আবার একখানা সাদা কাপড়ই বাহির করিলেন। গৌরী কাদিয়া মাটিতে লুটাইয় পড়িল । হরিকেশব নিজের হাতে আলমারি হইতে একখানা দামী রঙ্গীন শাড়ী বাহির করিয়া গৌরীকে পরিতে দিলেন। গৌরী যথেষ্ট খুলী না হইলেও উঠিয়া সেইখান। পরিল । তরঙ্গিণী স্বামীর ধরিয়া বলিলেন, “ওগো, অমন কোরো না বলছি।” হাত হরিকেশব সে কথা না শুনিয়া গৌরীকে তুলিয়া লইয়া ভুলাইঃ বলিলেন, “আজ তার এক্ষুণি চলে যাবে, গয়ন, টয়না থাকৃগে মা ; আর একদিন হবে ।” গৌরী গম্ভীর হইয়৷ পিতার সঙ্গে চলিল। পিছনে শুনিল, কে যেন বলিল, “বাবা, এত সাজ কিসের ?” স্বষ্টিধর গৌরীকে দেখিয়া গম্ভীর হইয়া উঠিলেন, সঙ্গীরা মুচকিয়৷ হাসিল । গৌরীকে যাহা কিছু জিজ্ঞাসা করা হইল সে ভাল করিয়া কিছুরই উত্তর দিল না, মুখ হাড়ি করিয়া রহিল। শেষ পৰ্ব্বট কেমন যেন সব বেস্থর বাজিতে লাগিল । স্বষ্টিধর তাড়াতাড়ি যাইবার জন্য ব্যস্ত হইলেন । হরিসাধন আমৃত আমৃতা করিয়া বলিলেন, “মেয়ে কি পছন্দ হয়েছে ?” স্বষ্টিধর পরম গম্ভীর মুখ করিয়া বলিলেন, “পরে বলে পাঠাব।” হরিসাধনের মুখ একেবারে অন্ধকার হইয়া গেল । সকলে চলিয়া গেল। গৌরী ঘরে আসিয়াই আবার হাত পা ছুড়িয়া কান্না জুড়িয়া দিল । হরিকেশব তাড়াতাড়ি ঘর ছাড়িয়া হরিসাধনের কাছে গিয়া বলিলেন, “সাধন, আমি কালই রাত্রে গৌরীদের নিয়ে তীর্থে যাচ্ছি। ময়নার বিয়ের জন্য যত টাকা দরকার হবে অামায় জানিও, আমি চেক দেব । কোনো রকম চেষ্টার ত্রুটি কোরো না। আমার জন্য যদি বাধে ত, আমাকে অনায়াসে সামাজিকভাবে প্রকাশ্যে বাদ দিতে পার।” 会 ( ক্রমশ: )