পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হজরত মোহম্মদ ও মোস্লেম জগতের ইতিহাস • শ্রীরমাপ্রসাদ চন্দ পাদটীকায় উল্লিখিত দুইখানি গ্রন্থের রচয়িত খান বাহাদুর হাজি অtহ ছান উল্লা সাহেব শিক্ষাবিভাগের সহযোগী অধ্যক্ষ এবং বিশেষ ভাবে এদেশীয় মোসলমানগণের শিক্ষার তত্ত্বাবধাশের ভারপ্রাপ্ত । তিনি একজন নিষ্ঠাবান মোসলমান। স্বীয় গুরুর আদেশে গ্রন্থকার হজরত মোহম্মদের জীবনের ঘটনাবলী বিশেষভাবে অনুশীলন করিতে এবৃত্ত হইয়াছিলেন ; এবং “বঙ্গবাসী মোসলমানের উপর হজরতের পবিত্র জীবনের বিশেষ কোন প্রভাব দেখা যায় না’ বলিয়া তিনি ব্যথিত আছেন । বঙ্গলার দরিদ্র এবং সাধারণ লোক যে এক সময় বহু পরিমাণে ইস্লাম গ্রহণ করিয়াছিল (ইতিহাস ৩•• পৃঃ) এবং বাঙ্গাল ভাল যে উহার ‘মাতৃভাষা" একথা স্বীকার করিতে গ্রন্থকার কিছুমাত্র কুষ্ঠিত নহেন । তঁহীর মজ্জিত এবং স্বখপাঠ্য গদ্য রচনা, ভাষা-জননীর প্রতি তাহার স্বধৃঢ় ভক্তির পরিচয় প্রদান করে। এই রচনায় নিবদ্ধ মূল্যবান তথ্য ছাড়াও এইরূপ একজন ব্যক্তির কথার একটা থঠস্থ মূল্য আছে । দুই কোটির অধিক বাঙ্গালী মোসলমানের যাই প্রাণের কথা যে কথা তাইরি। সচরাচর ভাষায় প্রকাশ করিতে অসমর্থ, হাজি আহু ছন উল্ল সাহেবের গ্রন্থে তাহার সন্ধান পাওয়া যlঠতে পারে। এই নিমিত্তই স্থানধিকারী হইলেও আমি তাহার গ্রন্থদ্বয়ের পরিচয় দিতে সাহসী হইলাম । এক দুইগনি গ্রন্থ স্বতন্ত্র প্রকাশিত হইলেও এই দুইখানিকে একখানি গ্ৰ:স্থর হিসাবে গ্রহণ করাই কৰ্ত্তব্য । মোসলেম জগতেল ভিত্তি হজরত মোহাম্মল । মোহম্মদের জীবন-বৃত্তান্তও মোসলেম জগতের ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় এবং প্রধান অধ্যায়। মোহম্মদের জীবন-বৃত্তাস্তে মোসলেম জগতের ইতিহাসের সকল নীতি-সূত্র নিহিত আছে । ইতিহাস আলোচনার উপকারিত-সম্বন্ধে গ্রন্থকার দ্বিতীয় গ্রন্থের মুখবন্ধের গোড়ায় লিখিয়াছেন— ইতিহাস জাতীয়-জীবনের প্রধানতম উৎস এবং স্বীয় ইতিহাসআলোচনা জাতীয় উন্নতির স্বপ্রশস্ত সোপান। ইতিহাস অতীতের আবরণ উন্মোচন করিয়৷ আমাদের পুর্বপুরুষগণের জীবনযুদ্ধের ধারার সন্ধান বলিয়া দেয়, এবং তাহদের গুণগরিমার এবং বীরত্ব ও মহত্ত্বের আদর্শে অনুপ্রাণিত করিয়া আমাদিগকে সেই সংগ্রামে জয়লাভ করিবার শক্তি প্রদান করে। বঙ্গদেশে কোটি কোটি মোসলমানের বাস, অথচ মোগলেন ইতিহাস-সম্বন্ধে বঙ্গভাষায় কোন বিশ্বস্ত পুস্তক দৃষ্টিগোচর হয় না। প্রধানতঃ ইহারই অভাবে বঙ্গীয় মোসলমান অন্য দেশীয় মোসলমান অপেক্ষ অনুন্নত ও হীনবল ।” ইতিহাসের মাহাস্থ্য সম্বন্ধে গ্রন্থকার যাহা বলিয়াছেন, তাহা স্বীকার না করিয়া উপায় নাই। ইতিহাসচর্চা জাতীয় আত্মজ্ঞান লাভের, জাতীয় জীবনের গতিবিধির সহিত স্বপরিচিত হইবার প্রধান উপায়। যে জাতি আপনাকে চিনে না, জাতীয় জীবনের ধারা কোথা হইতে উৎপন্ন হইয়া —w

  • (১) ইছলাম ও আদর্শ মহাপুরুষ’ (২) মোছলেম জগতের ইতিহাস, বঙ্গদেশের শিক্ষা বিভাগের এদিষ্টান্ট ডিরেক্টর, কলিকাতা ও ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ের সদস্ত, খান বাহাদুর আল হজ্জ মৌলবী আহ ছান উল্লা এমূ-এ ; এমূ. আর, এস, এ ; আই, ই, এস্ গ্রণীত, ১৯২৫ ।

কোন খাতে প্রবাহিত হইতেছে তাহ জানে না, সেই জাতি আপনার ভবিষ্যতের পথও ঠিক চিনিয়া লইতে পরিবে না। পুর্বপুরুষগণের গুণগরিমার এবং বীরত্ব ও মহত্ত্বের আদর্শই যে শুধু আমাদিগকে জীবন-যুদ্ধে জয় লাভ করিবার সহায়তা করিতে পারে তাহা নয়, পুৰ্ব্বপুরুষগণের খলন-পতনের কথাও আমাদিগকে স্থলন-পতন হইতে রক্ষা করিতে পারে। মুখবন্ধের অপর অংশে গ্রন্থকার ভারতবাসী হিন্দুমুসলমানের পরম্পরের ইতিহাসের আলোচনার উপকারিত-সম্বন্ধে আরও একটি গুরুতর কথা লিখিয়াছেন । যথা— “ভারতে হিন্দু ও মোসলমানের একতা লইয়া ইদানীং চতুর্দিকে একটা বিষম রোল উঠিয়াছে। যে পর্যন্ত হিন্দু ও মোসলমান পরস্পরের ইতিহাস ও পুৰ্ব্বগৌরব অনবগত থাকিবে, সে পৰ্য্যন্ত হিন্দু মোসলমানের মধ্যে প্রীতি সম্ভবপর হইবে বলিয় মনে হয় না। উহারা যে একই, মাতৃগর্ভজাত যমজ ভাই, উহাদের প্রত্যেকেরই যে উজ্জ্বল গৌরবমণ্ডিত ইতিহাস আছে, তাহ পরস্পরের জান একান্ত আবখ্যক । উভয়েরই এক আর্য্য আদি-পুরুষের বংশধর এবং মধ্য এশিয়া যে উভয়েরই আদিম আবাস ভূমি, এ কথা স্মরণ করিয়া পরস্পর ঐতিহূত্রে আবদ্ধ হইয়| বাস করাই উভয়ের কৰ্ত্তব্য। এই কৰ্ত্তব্যে বিমুখ হইলে বিধাতার বিধানেরই প্রতিকূল আচরণ করা হইবে এবং তাহতে ভারতের অমঙ্গল ব্যতীত মঙ্গল সংঘটিত হইবে না।” (থ পৃঃ) হিন্দু মোসলমানের একতা সম্বন্ধীয় বাগ বিতও হইতে একটা কথা বেশ বুঝা যায়। কথাট। এই, হিন্দু মোসলমানের মধ্যে একতার অভাব এখন অনেকেই তীব্র ভাবে অনুভব করিতেছেন। এখন জিজ্ঞাস্য, এইরূপ অবস্থা কি বরাবরই ছিল ? আমাদের পিতৃপিতামহেরাও কি হিন্দুমোসলমানের একতার অভাব অনুভব করিয়া গিয়াছেন ? আমাদের এবং আমাদের পিতৃপুরুষদিগের হিসাবকিতাবের ( angle of vision) মধ্যে একটা মস্ত প্রম্ভেদ আছে । আমরা পাশ্চাত্য শিক্ষাভিমানী সহরবাসী, স্বরাজ-প্রয়াসী। আমাদের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন পল্লীবাসী, পল্লীর বাহিরের জগৎ সম্বন্ধে উদাসীন, পল্লীর প্রচলিত বাদ-গ্ৰবাদ ও রীতি-নীতির একান্ত অমুরক্ত। এই রীতি-নীতির মধ্যে পল্লীর স্বরাজ একটা জীবন্ত পদার্থ ছিল। হিন্দু-মোসলমানের শাস্ত্রমূলক ধৰ্ম্ম পৃথক হইলেও একই গ্রাম্য লৌকিকধৰ্ম্মে উভয় সম্প্রদায়ের অল্পবিস্তর আস্থ৷ ছিল । গ্রামের গাজন, গ্রামের গাজীর গীত, গ্রামের পীরের সিন্নি, গ্রামের বারোয়ারী কালীপূজা, গ্রামের শীতল-পুঞ্জ উভয় সম্প্রদায়ের সহায়তাই সম্পন্ন হইত। উনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয়পদে ওয়াহাবী আন্দোলনের ঢেউ আসিয়া এদেশীয় মোসলমানগণকে গ্রাম্য দেবদেবীর পুজা বিষয়ে উদাসীন করিয়া তুলিয়াছে। প্রাচীনকালে গ্রামের একতার ভিত্তি ছিল “গ্রাম-দম্বন্ধ”। গ্রামের সকল শ্রেণীর সকল সম্প্রদায়ের লোক আপনাদিগকে পরস্পরের সহিত সম্পর্কিত একপরিধারভুক্ত জান’ করিতেন এবং কোথাও কোথাও এখনও করেন। বাঙ্গালার প্রাচীন ঐতিহাসিক গ্রন্থে দেখা যায় এই গ্রাম-সম্বন্ধ একবার নবদ্বীপ নগরকে গুরুতর বিপদ হইতে রক্ষা করিয়াছিল । খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম পাদে সোলতান সৈয়দ হুসেনশাহ যখন গৌড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন তখন যে মহাপুরুষ সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়৷ শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্য নামে পরিচিত হইয়াছিলেন, নবদ্বীপের সেই নিমাইপণ্ডিত নবদ্বীপে খোল