পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] হজরত মোহম্মদ ও মোসলেম জগতের ইতিহাস 890 _------- মহাপুরুষ তরবারির সহায়তায় ইসলাম প্রচার করেন নাই এবং বেড়ায় ওঁহার লোকক্ষয় করিয়া সাম্রাজ্য গড়িতেও চাহেন নাই । লমদের আলোচ্য প্রথমোক্ত গ্রস্থে হাজি আহছান উল্লা সাহেব অসিসাহায্যে ইসলাম বিস্তৃতির অপবাদের তীব্র প্রতিবাদ করিয়াছেন (১৭৭১৭৮ পূঃ ; ২২১-২২৪ পৃ: )। মোহম্মদের প্রচারক-জীবনের দুই যুগ। প্রথম যুগে ( ৬১০-৬২২ খষ্টাব্দ ) তিনি মক্কায় শক্র কোরায়েশগণের মধ্যে থাকিয় ইস্লাম প্রচার করিয়াছিলেন । তখন র্যাহারা ইসলাম গ্রহণ করিয়াছিলেন উtহার কেহই প্রাণের ভয়ে ইস্লাম গ্রহণ কবেন নাই, তাহার প্রাণের মtয় ত্যাগ করিয়াই ঐ পথ অবলম্বন করিয়াছিলেন। হিজব বা মদিনায় আশ্রয় লওয়ার পর হইতে মৃত্যু পৰ্য,স্থ ( ৬২২-৬৩২ থষ্টাব্দ ) মোহম্মদের প্রচারক-জীবনের দ্বিতীয় যুগ । মদিনবাসী অন্দার বা সহায়কারিগণ স্বেচ্ছায় মোহম্মদ এবং তাহার সহচর মুহাজিরুল বা হিজরাকারিগণকে আশ্রয় দিয়া গুরুতর বিপদ স্বন্ধে লইয়ছিলেন । মোহম্মদ মদিনীয় আশ্রয় লইয়। কোরায়েশগণের সহিত যুদ্ধ আরস্ত করিয়াছিলেন কিন্তু সে যুদ্ধ ধৰ্ম্ম-বিস্তারের জন্ত নহে প্রাণের দায়ে । ছয় বৎসর ব্যাপী যুদ্ধের পর মোহম্মদ মক্কার কোরায়েশ গণেৰ সহিত হোদয়বিয়ায় যে সন্ধি ( সোল্হে ) করিয়াছিলেন তাহ বিজয়ী যোদ্ধার সন্ধি নহে, “তৃণাদপি স্বনীচেন তরোরিব সহিষ্ণুন৷” সম্পাদিত সন্ধি ( “ইছলাম ও আদর্শ মহাপুরুষ, ১৪৭-১৪৯ পৃ: ) । ওমর এই সন্ধির তীব্র প্রতিবাদ করিয়াছিলেন। বিচক্ষণ আবুবকর বলিয়ছিলেন, “আমাদের বুদ্ধি এ বিষয়ে প্রবেশ করিতে পারে না । ইহাব গৃঢ় কৌশল আল্লা ও তাহার রস্কলই জানেন।” হেদায়বিয়ায় BBBBBK BBB BBS BBBBB BB BBBBBBB BBB ইস্লাম প্রচারের পথ পরিষ্কার করিয়া দিয়াছিল। কথিত আছে হোদয়বিয়ায় সন্ধির পর মেহম্মদ রূমের ( I onatantinople ) সমাট পারসোর সাহ এবং অস্তান্ত নৃপতিগণের নিকট দূতের মারফত ফারমাণ পাঠাইয় তাহাদিগকে ইসলাম গ্রহণের জন্ত আহবান করিয়াছিলেন ( ১৪৯.১৫ , পৃঃ ) । এই প্রবাদ সম্বন্ধে অধ্যাপক বেভেন লিথিয়াছেল,— "But the evidente for this slory is hy no means satisfactory, and the details present so many susLicious features that it may be doubted whether the narrative rests on any real basis.” এই ফরমাণের সঠিত হোদায়বিয়ায় সোলাহনামার সামঞ্জস্ত বিধান করাও কঠিন । মোহম্মদের উত্তরাধিকারী খালিফাগণও ইসলামের বিস্তারের জন্য তরবারি ধারণ করিতেন না । অধ্যাপক বেকার ( C. H. Becker, Professor of Oriental History in the Colonial Institute of Hamburg, The Cambridge Medieval History, vol. H. chapter X 1. fifolio R– “It was not the religion of Islan which was by that time disseminated by the sword, but inerely the political sovereignity of the Arabs. The acceptance of Islam by others than Arabians was not Only not striven for, but was in fact regarded with disfavour.” -- o অর্থাৎ তরবারির সহায়তায় ইসলাম প্রচারিত হয় নাই ; তরবারির সহায়তায় আরবগণের আধিপত্য বিস্তুত হইয়াছিল। খলিফাগণের সময়ে আরব ছাড়া অন্ত কোন জাতির লোকের মধ্যে ইসলামের বিস্তার কর্তৃপক্ষ পছন্দ করিতেন না । আরবগণের আধিপত্য বিস্তৃত

করিবার জগুও মহাত্মা আবুবকর ও ওমর ব্যস্ত ছিলেন না । যে সকল যুদ্ধের ফলে পারসীক সাম্রাজ্য এবং সিরিয়৷ ( সাম ) খলিফার পদানত হইয়াছিল, সেই সকল যুদ্ধ আদেী সাম্রাজ্য-বিস্তারের জন্ত আরস্ত করা হয় নাই। সিরিয়৷ বিজয় সম্বন্ধে অধ্যাপক লিথিয়াছেন— “It was not the sagacity of the Caliphs, wanting to conquer the World, that flung Muslim host on Syria, but the Christian Arabs of the Border districts who applied to the powerful organisation of Medina for assistance.” ইস্লামের অভু্যদয়ের পূর্বাবধিই মরবাসী আরবগণ দলে দলে গিয়া রোমের সম্রাটের বা পারস্যের শাহের এলাকার অন্তর্গত উৰ্ব্বর প্রদেশে উপনিবেশ স্থাপন করিতে অীরস্ত করিয়াছিলেন এবং উভয় সাম্রাজ্যের সীমাস্তবাসী আরবগণের সহিত সীমান্তরক্ষকগণের বরাবরই বিবাদ বিসম্বাদও চলিতেছিল। মদিনীর মোসলেম শক্তির অভু্যদয়ের এবং আরব জাতির মধ্যে ইসলাম বিস্তার লাভের পর সীমান্তবাসী আরবগণ সৰ্ব্বদাই মদিনার দরবার হইতে সাহায্য প্রার্থনা করিতেন। পারসীক সাম্রাজ্যের (ইরাকের ) সীমান্তবাসী বামুসাইবান বংশীয় আরবগণের দ্বারা পুনঃ পুনঃ অনুরুদ্ধ হইয়াও অনেক ইতস্ততঃ করিয়া পরিশেষে খালিফা ওমর পারস্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-ঘোষণা করিতে সম্মত হইয়াছিলেন । খালিফা ওমরের পর খিলাফতে বংশগত স্বার্থপরতার কীট প্রবেশ করিয়াছিল । সুতরাং তথনকার ইতিহাসের ধার স্বতন্ত্র খাতে প্রবাহিত হইতে থাকে। সেই ইতিহাসের আলোচনার অবকাশ আমাদের নাই । মোসলেম আভু্যদয়ের যুগের মোসলেমগধের সহিত যুরোপীয়গণের তুলনা করিয়া অধ্যাপক বেকার দেখাইয়াছেন, যুরোপ অপেক্ষ মোসলেম জগতে তখন পাপাচারণের মাত্র কোনও ক্রমে বেশী ছিলনা, কিন্তু মোসলেম জগতে তথন জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা যেরূপ উৎকর্ষ লাভ করিয়াছিল য়ুরোপে তাই লক্ষিত হইত না । যুরোপে তৎকালে জ্ঞানবিজ্ঞানের যে কিছু চর্চা ছিল, তাহীর জন্ত যুরোপ মোসলেমজগতের নিকট ঋণী ছিল । যুরোপের ইতিহাসের যে যুগকে মধ্য-যুগ বলে সেই যুগে সভ্যতার বা শিক্ষাদীক্ষার হিসাকে মোসলেম-জগৎ যুরোপ অপেক্ষ উন্নত ছিল । তার পর— “It was later on that the western land produced from its own inner self a new world, whilst the Fast has never since attained a higher pitch of excellence than that which immediately followed the Saracen expansion.” ( Caìnhri lge Medieval History, vol. I 1. (Xhapter X | } ) খৃষ্টীয় ১৪৫৩ খৃষ্টাব্দে ওস্মাণ বংশীয় সোলতান দ্বিতীয় মোহম্মদ কর্তৃক কন্‌ষ্টাণ্টনোপল অধিকৃত হইবার পর গ্রীকৃ শিল্প, গ্রীকৃ সাহিত্য, গ্রীকৃ দর্শন ও বিজ্ঞানের অনুশীলন ফলে পশ্চিম যুরোপে যে নবজীবন সঞ্চারিত হইয়াছিল তাহার প্রেরণায় গত চারি শত বৎসর যাবৎ য়ুরোপ উন্নতির পথে দ্রুত অগ্রসর হইগেছে, কিন্তু মোসলেম-জগং তৎপুর্বে যেখানে দাড়াইয়াছিল এখনও যেন সেইখানেই দড়িাইয়া আছে । তদবধি যে তুর্ক জাতি মোসলেম জগতে প্রাধান্ত করিয়া আদিতেছেন র্তাহারা সামরিক বিদ্যায় য়ুরোপের সমকক্ষ হইলেও, অসামরিক বিদ্যনিচয়ের (arts of poace) অনুশীলনে যুরোপের সমকক্ষতা লাভ করিতে পারেন নাই। যদি মোসলেম জগৎ আবার অভু্যদয় কামনা করে তবে যে যুরোপ এক সময় অসামরিক বিদ্যার অনুশীলনে তাহার সাগরেদী করিয়াছিল, মোসলেম জগৎকে বর্তমানে শ্রদ্ধা-সহকারে সেই যুরোপের সাগরেদী করিতে হইবে । -