পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8७९ প্রবাসী-আষাঢ়, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড কবিকল্পনা বলিতে আমরা যাহা বুঝি, তাহার কতটুকু ধারণ এই বিচারে ধরা পড়ে, তাহ বুঝিয়া লইতে। অতি প্রাচীনকাল হইতেই—“শব্দার্থে সহিতে কাব্যং —কাব্যের এই সংজ্ঞানির্দেশ অলঙ্কার শাস্ত্রে প্রচলিত আছে। কাব্য অর্থে মূলতঃ শব্দ ও অর্থের মিলনাত্মক রচনা। শব্দার্থের ব্যাকরণ ও দর্শন ঘটিত মীমাংসা হইতেই কাব্যালোচনার আরম্ভ—তাই সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্রের যতকিছু মতবাদ সব এই শব্দার্থের উপরেই প্রতিষ্ঠিত। ‘সাহিত্য’ শব্দটিও এই ‘শব্দার্থে সহিতেী’ হইতে নিপন্ন হইয় থাকিবে । ইহার পর শব্দথ ঘটিত অলঙ্কারই কাব্যের নিদান বলিয়। এ সম্বন্ধে বহুতর সিদ্ধান্ত অলঙ্কার শাস্থের পুষ্টি বিধান করে । ইতিমধ্যে অলঙ্কার ব্যতীত রীতি’ ও ‘দোষ-গুণ কাব্যকলায় স্থান পাইল । রীতি’ অর্থে বিশিষ্ট পদরচনা বা বাক্যবিন্যাস (diction) i są:, zinti e মাধুৰ্য্য এই তিনটিই কাব্যের প্রধান গুণ এবং কতকগুলি দোযও সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট হইল। এজন্য, অতঃপর কাব্যের সংজ্ঞানিদেশে অলঙ্কারের সঙ্গে রাতি ও দোষ-গুণ ধরা হইত। বিদ্যানাথের মতে, ধাহ “গুণালঙ্কার সহিতে শব্দার্থেী দোষবজিতে।” তাহাই কাব্য। শব্দার্থকে কাব্যশরীর ধরিয়া তাহার অঙ্গশোভা দোয-গুণ ইত্যাদি নির্ণয় করিয়া, শেষে কাব্যের আত্মা কি, তাহার সন্ধান আরম্ভ হইল। বামনের মতে রীতিরাত্মা কাব্যস্ত’—রতিষ্ট অর্থাৎ এই বাক্যবিন্যাস ভঙ্গিই কাব্যের আত্মা। বক্রোক্তিজীবিত’-কার কুস্তলের মতে অলঙ্কার নিহিত বক্রোক্তিই কাব্যের জীবিত বা প্রাণ। অর্থাং সোজা কথাকে বাকা করিয়৷ বলিবার যে ভঙ্গি হইতে কাব্যের অলঙ্কারগুলির স্থষ্টি হয়—তাহাই কাব্যের মূল উৎস, কাব্যের সর্বস্ব। 'রস' নামক আর একটি উপাদান পূৰ্ব্ব হইতেই (ভরতের ‘নাট্যস্বত্র হইতে ) কাব্যের প্রাণ বলিয়া উল্লিখিত হইলেও, উত্তরকালে তাহার যে মূল্য দাড়াইয়াছিল এখনও তাহ সুনির্দিষ্ট হয় নাই ; 'রস'কে, অন্য সকল উপাদানের উপজীব্য বলিয়, কাব্যবিচারে একটা সাধারণ মূল্য দেওয়া হইত। অলঙ্কার, রীতি ও দোষগুণই ছিল প্রধান আলোচনার বিষয়, এবং তাহ লুইয়। জটিল সিদ্ধান্তের অবধি ছিল না। ক্রমশঃ যখন ‘ধ্বনি', বা ব্যঙ্গ্যার্থ, কাব্যের আত্মা বলিয়া একটা নূতন মত প্রবল হইয়া উঠিল, তখন কবি-কৌশলের সকল অঙ্গই ধ্বদ্যাত্মক বলিয়া ধারণ হইল ; উৎকৃষ্ট কাব্যের বস্তু, অলঙ্কার, রস প্রভৃতির উৎকর্মের শেষ প্রমাণ হইল এই ধ্বনি। পরিশেষে সকল ধ্বনিই এক রসধবনিতে আসিয় দাড়াইল ; তথন এক আলঙ্কারিকের মতে কাব্যের স্বরূপ হইল—“বাক্যং রসাত্মকং”, অর্থাং রস যে-বাক্যের আত্মা, তাহাই কাব্য । উপরি-উদ্ধত অতি সংক্ষিপ্ত পরিচয় হইতে ব্যাপারটা বেশ স্পষ্ট হইয়| উঠিল না, জানি। ‘রস” কথাটির তাৎপৰ্য্য যথাস্থানে নির্দেশ করিব । ‘ধ্বনি’ কথাটির মোটামুটি *—oj4:ll, as suggested sense I এই সকল সিদ্ধান্ত, কাব্যের আদশ-বিচারে, তত্ত্ব-ষ্টিসাবে যতই মূল্যবান হউক—কবিকল্পনা বা কবিকৰ্ম্ম সম্বন্ধে আমার মূল জিজ্ঞাস, এই অলঙ্কারাদির বাহিরে বেশীদূর অগ্রসর হইতে পারিবে না । শেষ পর্য্যন্ত কাব্যের সংজ্ঞালিদেশে অলিঙ্কারিক যাহা স্থির করিয়াছেন, তাহাতে কাব্য “রমণায়ার্থ প্রতিপাদক শব্দ” ; অর্থাৎ, কাব্যে শব্দার্থের রমণীষার্থ প্রতিপাদন আবশ্যক। তথাপি কাৰ্য্যতঃ সেই সালঙ্কার ও নির্দোষ পদরচনাই কবির প্রত্যক্ষ কীৰ্ত্তি । এই কৌশল যে অভ্যাসের দ্বারাও আয়ত্ত করা যায়, আলঙ্কারিক তাহ স্বীকার করেন ; কারণ, শব্দার্থগত কবিকৰ্ম্মকে যে রীতিমত শিক্ষাশাস্ত্রে পরিণত করা যায়, অলঙ্কার-শাস্ত্র রচনার একটি প্রধান কারণই এই । আলঙ্কারিকগণের মতে কবি প্রতিভা সহজ হইলেও ‘ঔপদেশিকী’ও বটে। কবি-প্রতিভার “নবনবোল্লেখশালিনী” শক্তি ও অপূৰ্ব্ব বস্তুনিৰ্ম্মাণক্ষমত্বের পরিচয় স্বরূপ একটি শ্লোক এখানে উদ্ধৃত করিলাম, ইহা হইতে আলঙ্কারিকের মতে কবিকৰ্ম্মের প্রসার যে কতটুকু, তাহঃ বুঝিতে বিলম্ব হইবে না । হতসারমিবেন্দুমণ্ডলং দময়ন্তীবদনায় বেধস । দ্রুতমধ্যবিলং বিলোকাতে ধুতগম্ভীরথনিখনীলিম ৷ [ দময়ন্তীর মুখনিৰ্ম্মাণ জন্য বিধি চন্দ্র হইতে কিয়দংশ হরণ করিয়াছিলেন তজ্জন্ত চন্দ্রমণ্ডলের মধ্যভাগে অতি গভীর আকাশ নীল