পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] ইয়ুরোপীয় সাহিত্যে, প্রাচীন কাব্যকলার যে Imitation অথবা অংকুতির কথা পূৰ্ব্বে বলিয়াছি, তাহাই কবিকল্পনার আদর্শ ছিল । মধ্যযুগের কাব্য ও আখ্যানআখ্যায়িকায় কবিকল্পনা কোনও নিয়ম মানে নাই, অবাধে আপন প্রবৃত্তি চরিতার্থ করিয়াছে,—ভাববিলাসের আতিশয্য এবং অবাস্তবের ধাহা কিছু আনন্দ, তাহাকেই বরণ করিয়াছে। কল্পনার এই স্বাধীন ফৰ্ত্তি মানবমনের অতি সহজ ও অদিম প্রবৃত্তি। পরবর্তীকালে এই অতিচারী কল্পনাকে রোমাটিক(Rouantic) বলা হইত— তাহার কারণ, এ সাহিত্য যে-ভাষায় রচিত হইয়াছিল, তাহা ( যুরোপের*সংস্কৃত' ) ল্যাটিন নহে ; এ সাহিত্য ‘ভাষা-সাহিত্য’—রোমাটিক শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থও তাই । ইহা হইতে বুঝ। যাই ব থে, এ-সাহিত্য পাণ্ডিত্যবজিত সরল লোকসাহিত্য, এবং এ-কল্পনা স্বাভাবিক কবিব্যাপার। সৰ্ব্বদেশের লোকসাহিত্যে এই কল্পনার প্রসার লক্ষ্য করা ধায় । কিন্তু ক্রমে এই ‘রোমাণ্টিক’ শব্দটর অর্থ দাড়াইল— অবাস্তব, অতিপ্রাকৃত, বালকেচিত, এমন কি ছন্নমতি বা উন্মাদ পর্য্যন্ত । ইয়ুরোপীয় সভ্যতায় যখন বিজ্ঞানের যুক্তিবাদ প্রবল হইয়া উঠিল, তখন সাহিত্যের আদর্শও বদলাইয়া গেল। তখন কবিকল্পনাকে যুক্তিবিচারের শাসনে সংযত রাখাই উৎকৃষ্ট প্রতিভার পরিচয় বলিয়া গণ্য হইল। এই বিচারবুদ্ধিই হইল কবিতার প্রাণ, ‘কল্পনা’ অলঙ্কার দি দ্বার কাব্যের প্রসাধন করিবে মাত্র । তখনকার কবি ও দার্শনিক উভয়েরই মতে, কল্পনা একটি উচ্ছ স্থল মনোবৃত্তি, উহার ফলে বাতুলতা, ভ্রান্তি ও চিত্তাহ উপস্থিত হয় ; কিন্তু এই বৃত্তিকে বিচারবুদ্ধির শাসনে রাখিলে, স্মৃতি-ভাণ্ডার হইতে নানা দৃষ্টান্ত ও উপমা আহরণ করিয়া জ্ঞান-গর্ভ রচনার শোভা বৃদ্ধি করা যাইতে পারে। তখন উৎকৃষ্ট কাব্যকে যুক্তিযুক্ত ও 8 iar s' (reasonable and judicious ) afail প্রশংসা করা হইত। কিন্তু ক্রমশঃ প্রায় একই কালে, কবিকল্পনা সম্বন্ধে আর একটি ধারণ ফুটতর হইয়া উঠিতেছিল—আটে কল্পনার যথার্থ স্থান ও প্রকৃত মূল্য নিরূপণ আরম্ভ হইয়াছিল। যাহা অসঙ্গত বা অপ্রাকৃত কাব্যকথা 8や22 অথচ মনোমুগ্ধকর, তাহারই নাম হুইল ‘রোমাণ্টিক । প্রাচীন কথা, কাব্য ও কাহিনীর মধ্যে যে ধরণের কল্পনাছিল তাহাই উপাদেয় বলিয়া স্থির হইল । জ্যোৎস্ন রাত্রি, নির্জন বনভূমি, সমুদ্র সৈকত প্রভৃতি প্রাকৃতিক দৃশ্যের যেখানে যাহা কিছু অবাস্তব-রমণীয় এবং চিত্ত-চমৎকারী বলিয়া বোধ হইল, তাহ প্রাচীন কাব্যোদ্ধত রসরাগে রঞ্জিত বলিয়া 'রোমাটিক’ শব্দটি নুতন অর্থে ব্যবহৃত হইতে লাগিল। যুক্তি-বিচার দ্বারা প্রকৃতির অনুসরণ কাব্যের আদর্শ বলিয়া আর গ্রাহ হইল না । কল্পন}, প্রকৃতির মধ্যে একটা চমৎকারের সন্ধান পাইল—যাহt স্বন্দর তাহার মধ্যে একটা ‘কি-জনি-কি?-ভাব ( সংস্কৃত অলঙ্কারিকের ‘অবিচারি তরমণীয়' ) রহিয়াছে দেখা গেল। জ্ঞানবুদ্ধির অতীত এই সুন্দর-রহস্ত কল্পনার প্রধান উপজীব্য হইয়া দাড়াইল । মধ্যযুগের কাব্য-সাহিত্য হইতেই কল্পনার এই অঞ্জন মানুষের চেপে নূতন করিয়ু৮ লাগিল, কাব্য প্রকৃতিকে অনুসরণ না করিয়া যেন প্রকুতির উপরেই আপন প্রভাব বিস্তার করল । এখন প্রকৃতিই যেন কল্পনার বশ হইল। কল্পনার এই স্বাধীন বৃত্তি, কবিগণের আস্তরগত বাসনা-সংস্কারের প্রভাব, কাব্যস্বষ্টিতে যে নূতনত্ব আনিল, তাহা তত্ত্বের দিক দিয়৷ নয়, কবি কল্পনার দিক দিয়া সংস্কৃ • আলঙ্কারিকের 'রস' নামক বস্তুরই প্রেরণ । অতঃপর ইয়ুরোপীয় সাহিতে্যু যুক্তিবাদী ও ভাববাদীর মধ্যে যে তুমুল সংগ্রাম আরম্ভ kặā, Romanticism 8 Classicism HfH4 CHỆ Hog কাব্য-সমালোচনায় আজিও অব্যাহত রহিয়াছে—তাহার ইতিহাসে এক্ষণে আমাদের প্রয়োজন নাই । ইয়ুরোপীয় কাব্যের এই আদৰ্শই বাংলা কাব্যে প্রতিষ্ঠ} লাভ করিয়াছে। কাব্যকলাব এই আদর্শের পরিচয় ইংরেজী কাব্যসাহিত্যের মধ্য দিয়। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করিয়াছে। এই আদর্শ কোনও মতবাদ নয়, ইহা জাতিযুগ-ধৰ্ম্ম-নির্বিশেষে দিব্যশক্তিদায়িনী-ইহার প্রভাবে কবিকল্পন। উদার, উন্মুক্ত ও ‘নবনবোল্লেখশালিনা’। যাহা সাৰ্ব্বজনীন, যাহ। সৰ্ব্ব মানবের রসপিপাসা চরিতার্থ করিবার উপযুক্ত, সেই স্বাভাবিক ভাব-প্রেরণা বাংলা কাব্যকে বিশ্বসাহিত্যের হইতে