পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] বাংলার নূতন চিত্রকলা সম্বন্ধে কয়েকটি কথা প্রীতি, মনঃকল্পিত কাব্যশোভা, রূপ-অরূপের দ্বন্দ্ব, বর্ণনাভঙ্গি, কবির অন্তর্গত ভাবোল্লাস প্রভৃতি কতকগুলি সাধারণ কবি-ব্যাপারের নমুনা আছে। কিন্তু কবিপ্রতিভার যে আর একটি লক্ষণ আধুনিক কাব্যবিচারে 8୯୬ତ বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছে সেই স্বষ্টি-শক্তির একটু পৃথক আলোচনা না করিলে প্রসঙ্গ অসম্পূর্ণ থাকিয়৷ যাইবে । সে আলোচনা পরবর্তী প্রবন্ধের জন্য রাখিয়া দিলাম। বাংলার নূতন চিত্রকলা সম্বন্ধে কয়েকটি কথা শ্ৰী মণীন্দ্রভূষণ গুপ্ত আজিকাল বাংলার মাসিক পত্রে ছবির ছড়াছড়ি । প্রতিমাসেই রঙিন ছবি অন্ততঃ একথান করে’ না থাকলে চলে না। অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল-প্রমুখ প্রতিভাবান শিল্পীগণ প্রথম যখন ভারতীয় চিত্রকলার পুনঃপ্ৰবৰ্ত্তন করেছিলেন, তখন মাসিক পত্রে একেবারে ঢ়ি টি পড়ে’ গিয়েছিল। 'প্রবাসী ছাড়া অধিকাংশ কাগজই মুখবিকৃতি করেছিল ; নব-প্রচলিত চিত্রকলা তাদের মনোমত ন। হওয়ার দরুণ বিরুদ্ধ সমালোচনা করেছিল। এখন দেখি সব সয়ে গেছে । তথাকথিত ‘ভারতীয় চিত্রকলার’ ছবি সব কাগজই ছাপ তে আরম্ভ করেছে। এই বৈপরীত্যের কারণ কি ? একি আর্টের প্রতি ভালবাসা, না ফ্যাসান ? এখন সকল আর্টিষ্টই চেষ্টা করে, “ইণ্ডিয়ান আট” আকৃতে হবে । তার চার পাশে যা দেখে, যা ভাবে, তা আঁকবে না ; আকৃবে কষ্টকল্পিত কিছু। ঘর-দুয়ার, গ্রাম, লোকজন, ধারা আমাদের আশে-পাশে নিত্য নিয়ত চলাফেরা করছে, তার ভিতর থেকে কিছু আঁকূলে কি ইণ্ডিয়ান আর্ট হয় না ? আমাদের আশে পাশে যে জীবনের প্রবাহ চলেছে, তা কি আমাদের কল্পনাকে উদ্বুদ্ধ করে না ? সকলেই চায় জোর করে কবিত্ব করতে, প্রথমেই একেবারে লিরিক্যাল বিষয় আকৃতে । লিরিক্যাল বিষয়ই বা কি ?—নিতান্ত মামুলি ধরণের ছবি ; যাতে মৌলিকতার ছিটে-ফোটা নেই। যেমন— এক মেয়ে, কোমর বাকা কলসী কঁাথে দাড়িয়ে আছে। ছবির নীচে নাম লেখা "যমুনার তীরে'। ওমরধায়াম, সাকি, পেয়াল প্রভৃতির শ্রাদ্ধও কম হয় না। অনেক ছবির নীচে দু’ছত্তর কবিতা আছে তা না হ’লে 'ছবিত্ব’ পূর্ণ হয় না। দু লাইন নীচে থেকে যেন, চোখে আঙুল দিয়ে পরিষ্কার বলে’ দিচ্ছে “এ ছবি যে-সে ছবি নয়, এর ভিতর অনেক কবিত্ব আছে’ । ছবির সঙ্গে ওরকম কাব্যের সম্বন্ধ থাকা উচিত কি না ভেবে দেখবার বিষয় । আর্টিষ্টদের যে কবিদের অনুসরণ করে বা হাত ধরে চলতে হবে, তার কোনো মানে নেই। তাদের ভিন্ন একটা ব্যক্তিত্ব আছে। আর্টিষ্ট কবির স্বষ্টিকে অনুসরণ ন ক’রেও আর্ট সৃষ্টি করতে পারে। প্ৰাগঐতিহাসিক যুগে আদি শিল্পী যখন গিরিগহ্বরে ছবি একেছিল, তখন কোনে। কাব্য বা সাহিত্য স্বষ্টি হয়নি। তখন চিত্রের প্রধান উদেশ্ব ছিল ডেকোরেশন বা অলঙ্কার । অবসর-সময়ে মনোরঞ্জন করার জন্যে প্রস্তর-যুগের মানবের তাদের গুহার দেওয়ালে ছবি একেছিল । এদের চিত্রের বিশেয ত্ব হ’ল সামঞ্জস্য, রং ও রেখা। এরা তাদের চারপাশে জন্তু-জানোয়ার যা দেখেছিল তাই একেছিল। মানুষ ঢুকেছিল পরে। সৌন্দৰ্য্য-বোধ ছাড় এদের আর্টের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। চারদিকে প্রকৃতির নানা রহস্য অবলোকন করে', যখন আদি মানবের মনে একটু-একটু করে’ ধৰ্ম্মবোধের উৎপত্তি হ’তে লাগল তখন থেকে আটের ভিতর চিহ্নাত্মক বা সিম্বলিক্যাল ব্যাপার ঢুকতে আরম্ভ করেছিল।