পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ግ• প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড প্রাচীন মিশর বা চীনের সাহিত্য অনুধাবন করলে দেখতে পাব, তাদের সাহিত্য চিত্র থেকে আরম্ভ হয়েছে। মিশরের হায়রোগ্লিফিকু লিপি,আইডিওগ্রাফ বা চিত্রলিপি থেকে উৎপন্ন হয়েছে । এই লিপির কোনো ধ্বনি ছিল না, এবং তার আকার বিশেষ-বিশেষ বস্তুর সাদৃশ্য অতুযায়ী ছিল । বহুপরে ইহা ধ্বনিদ্যোতক এবং চিত্র থেকে পৃথক হয়েছিল। কাজেই আমরা বলতে পারি চিত্র সাহিত্যকে অল্পসরণ করে নিই ; পরস্তু সাহিত্যই চিত্রকে অতুসরণ করেছে । আমরা যদি চিত্রকে সাহিত্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে আঁকি, তাতে কিছু গৌরবের বাড়তি বই কম্‌তি হবে না। চীনের চিত্র বিশেষ করে টেঙ যুগ থেকে কাব্যের পাশাপাশি চলতে থাকে। তার কারণ আছে ; চীনের চিত্র রেরা শুধু শিল্পী নয়, তার দার্শনিক, সাহিত্যিক এবং কবিও বটে। টেঙ যুগের প্রতিভাবান শিল্পী ওয়াং ওয়ে, লিটারারী স্কুল অব আর্টিষ্টস্ বা ‘সাহিত্যিক শিল্পীসঙ্ঘ' স্থাপন করেন। ওয়া ওয়ে শুধু চিত্রকর ছিলেন না, কবি এবং দার্শনিকও ছিলেন । তার সম্বন্ধে চীনের সমালোচকের লিখেছে ‘তার ছবি হ’ল কবিতা, আর কবিতা হ’ল ছবি।’ শিল্পীর যে-পরিবেষ্টনের ভিতর, যেদর্শনের ভিতর, এগনসটিসিজম্ বা শূন্তবাদের ভিতর গড়ে উঠেছে, সে অনুযায়ী ছবি একেছে। চীনা চিত্র এবং কবিতা পাশাপাশি চলার আর-এক কারণ, সেখানে লেখনী বা কলম হচ্ছে তুলি ; কাজেই কবি যারা কবিতা লেখে, তুলি ব্যবহারের জন্তে নানা প্রকার রেখা অঙ্কনে দক্ষতা লাভ করে। এই লিপি-কৌশলের ইংরেজী নাম ক্যালিগ্ৰাফী । এই কৌশলের জন্যে কবি সহজেই চিত্রকর হ’য়ে পড়ে । চিত্রকর ও অনেক সময় কবি হয় । ছবি একে তার উপরেই কবিতা লেখে । চীনের শিল্প রসিকের। অনেক সময় ভাল হাতের-লেখাকে ছবির সমান মূল্য দেয় । আমাদের চিত্রের ভিতর ক্যালিগ্রাফীর অভাব খুব বেশী । শ্ৰীযুক্ত নন্দলাল বস্থ মহাশয়ের অনেক চিত্রে ক্যালিগ্রাফীর পরিচয় পাই । এবারকার ওরিয়েণ্ট্যাল আর্ট সোসাইটির একৃজিবিশনে প্রদর্শিত বস্থ মহাশয়ের আঁকা বুদ্ধার ছ’ব এই বিষয়ের প্রকৃষ্টতম উদাহরণ। আমরা অনেক সময় অর্টের প্রধান গুণ গুলি গ্রহণ না করে তার বহিরঙ্গ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকি । এষ্টজন্যেই ছবির ষ্ট্যাগুড়ি অনেক নীচে নেবে গেছে। অনেক ছবিষ্ট ইণ্ডিয়ন আট বলে’ চলে’ যাচ্ছে ; বিশেষ করে অনুধাবন করলে দেখা যাবে যে, তার ভিতর ইণ্ডিয়ানত্ব কিছু নেই, আছে শুধু তার খোলস । এর ভিতর অন্য কিছু না থাকুক ভারতীয় চিত্রকলার শীলমোহরটা আছে জোব । এ যেন কলকা তার বড়বাজারে বিলাতী মাল আমদানীর মত, বিলাতী মাল কলকাতার দোকানে এসে ‘Made in India’ ষ্ট্যাম্পে স্বদেশী বলে’ পরিচিত হ’য়ে যায়। ‘ই গুয়ান আর্ট” আঁকৃতে অনেকে সহজ পন্থ অবলম্বন করে’ থাকেন। যেমন অজন্তার ষ্টাইল—বুকে কাপড় জড়ানো, কোমর থেকে কতকগুলি ন্যাকডার ফালি বলিয়ে দেওয়া, পটল-চেরা চোখ, এবং বাক চাহনী । এ যেন ইণ্ডিয়ান আর্ট আঁকার সহজ ফবমুল । ইণ্ডিয়ান আর্টের—অর্থাং অজস্ত, রাজপুত, মোগল প্রভৃতি চিত্রকলার রঙেব এবং রেখার যে জোর আছে, তা চিংকরেরা অনুসরণ করবে না। হালেব অধিকাংশ ছবির রঙ এত ফিকে যে, ছবি জল দিয়ে আঁকা বললেই হয়। ছবিতে যেন গোধূলির ধোয়টে অন্ধকার । এ জাতীয় ছবি যেন লবণহীন ব্যঞ্জন, কোনো রকম স্বাদ নেই। দিন রাত্রির চব্বিশ ঘণ্টার ভিতর কত রয়ের খেলা চলেছে ; আকাশে, জলে, অরণ্যে, গাছের পাতায়, ফুলে ফলে, পাখীর ডানায়, কীট পতঙ্গে কত বিচিত্র রঙের ব্যঞ্জন!! আর্টিষ্টের তুলিকায় ংএর সে অপূৰ্ব্ব সৌন্দর্য্য কি প্রকাশিত হবে না ? আমরা এ রকমের পাতল রংয়ের ছবি শিখেছি বিলাতি বুক ইলাষ্ট্রেশন এবং জাপানী ছবি থেকে । অবনীন্দ্রনাথ অনেক সময় পাতলা রংয়ের ছবি একে থাকেন। অনেকে তার ষ্টাইল নকল কবৃতে গিয়ে অর্থহীন অস্পষ্ট কুত্মটিকা হষ্টি করেন। অবনীন্দ্রনাথের ছবি লক্ষ্য করলে এটা বোঝা যাবে যে, তার ছবি পাতলা রংয়ের বা মোনোক্রোম ( monochrome ) অর্থাৎ একরঙা ছবি হ’লেও তার ভিতর এমন দু একটি উজ্জল রংয়ের “টাচ”