পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] মৃত্যু-দূত 8b"> বিষম ক্রোধে তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ জালা করিতে লাগিল ; বুক ফুলিয়া ফুলিয়া উঠিল। কিন্তু সে পৈশাচিক রাগ শুধু আত্মনিগ্রহেরই কারণ হইল । জর্জ শান্তভাবে বলিল, “আমাদের আগেকার বন্ধুত্বের খাতিরে তোমাকে একটি কথা শুধু বুঝিয়ে বলতে চাই ডেভিড । তুমি জানো যে প্রত্যেক মানুষের জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন তার স্থলদেহ নষ্ট হয় অথবা এমন জীর্ণদশা প্রাপ্ত হয় যে দেহবাসী আত্মা দেহ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এক অজানা নতুন রাজ্যে প্রবেশ করার আগে আত্মা যন্ত্রণায় ছট্‌ফট্‌ করতে থাকে ; ঠিক শিশুরা তীরে দাড়িয়ে সমুদ্রের প্রচণ্ড ঢেউ দেখে জলে নামৃতে ভয় পেয়ে যেমন কাপে তেমনি । জলে ঝাপ দিয়ে পড়বার আগে তারা আজান কারো কাছ থেকে যেন আশ্বাসবাণী শুনতে চায়—কেউ যেন বলবে, ‘এস কাপ দাও, কোনো ভয় নাই’,—তারপরে সে জলে ডুব সেবে । মৃত্যুতীর্থ পথের পথিকদের কাছে আমি গত বংসর সেই অজানা আশ্বাসবাণী ছিলাম ডেভিড়,—এই বছরে তোমাকে সেই আশ্বাস জোগাতে হবে । আমার একমাত্র অনুরোধ যে নিজের অদৃষ্টের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ল! ক'রে শান্তভাবে তা মেনে নাও—না হ’লে তোমার জু:খের অবধি থাকুবে না। আমারও কষ্ট হবে।” এই বলিয়া জর্জ নত হইয়া ডেভিডের চোথের দিকে চাহিয়৷ রহিল। কিন্তু সে দৃষ্টিতে নিদারুণ ক্রোধ ও বি:দ্রাহ দেখিয়া সে ভয় পাইল । সে আরো নম্রভাবে বলিল, “তুমি শত চেষ্টা করলেও এর থেকে আর নিস্কৃতি পাবে না এটা মনে রেখে ! ইহলোকের পরপার রাজ্যের সমস্ত খবরাখবর আমি এখনো ঠিক জানিনা, আমি সবে মাত্র দুই রাজ্যের সন্ধিস্থলে এসেছি। যতটুকু এখানকার সঙ্গে আমার পরিচয় তাতে দেখছি এখানে দয়া নাই, মায়া নাই, স্নেহ মমতা নাই—ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক এখানে তোমাকে তোমার অদৃষ্টের হুকুম মেনে চলতেই হবে ।” ডেভিডের চোখের দিকে চাহিয়া জর্জ তখনো অন্ধকার ছাড়া কিছু দেখিল না। সে বলিল,“স্বীকার করছি যে, ওই গাড়ীতে বসে লোকের বাড়ীর দরজায় ঘোড়া ক্টাকিয়ে ফেরার মত জঘন্য কাজ মানবের পক্ষে আর কিছু হ’তে পারে না। এই দুর্ভাগ্য চালক যেখানে যাবে সেখানে চোখের জল আর হাহাকার তাকে অভ্যর্থন করবে, তাকে অহরহ দেখতে হবে—রোগ-যন্ত্রণা, ধ্বংস, ক্ষত, রক্ত আর বীংসতা । এই পেশার মধ্যে এইটেই সব চাইতে কম ভয়ানক ; চালকের অন্তরের মধ্যে যে বীভৎস ভাব তার সঙ্গে এর তুলনা হয় না—ভবিষ্যতের গভীর বেদন অমুতাপ আর ভয় নিরন্তর তাকে পীড়া দেবে। আমি বলেছি যে মৃত্যু-যানের চালক দুই রাজ্যের সন্ধি স্থলে আছে—সে মানুষের মত কেবল, অবিচার, হতাশা, ভগ্নোদ্যম আর অরাজকতা দেখে । অন্ধকার পরলোক রাজ্যের ততদূর সে দেখতে পায় না যাতে সে ভগবানের কার্যের অর্থ বুঝে তার স্থবিচার বুঝতে পারে। কচিং কথনও হয়তো সে তার আভাস পায় কিন্তু প্রায়ই তাকে অন্ধকার ও সন্দেহের ভিতর দিয়ে চলতে হয় ; আরো মনে রেখে। ডেভিড, মাত্র এক বৎসর তার এই মেয়াদ হ’লেও এখানে পৃথিবীর হিসাবে ঘণ্টমিনিট গোণা হয় না— নিদিষ্ট সমস্ত জায়গায় একে যেতে হয় বলে এর পক্ষে সময়ের অসীম বিস্তুতি—মানুষের এক বছর এর কাছে সহস্ৰ সহস্ৰ বৎসরের সমান। গাড়োয়ানকে যদিও সমস্তই উপর গুয়ালার আদেশ অনুসারে করতে হয় তবু তার মনে মনে যে ঘৃণা ও যন্ত্রণ হয় তা বর্ণনাতীত – সে নিরন্তর এই কাজের জন্য নিজেকে ধিক্কার দেয় । আর সব চাইতে তার যন্ত্রণার কারণ হয় তখন, যখন কৰ্ত্তব্য সমাধা করতে গিয়ে সে নিজের কৃত পাপের ফল প্রত্যক্ষ করে ; নিজের ঐহিক জীবনের অনুষ্ঠিত কাজের ফলকে সে এড়াতে পারে না ।” জর্জের স্বর অস্বাভাবিক রকম সুহ্ম হইয়। উঠিল, বেদনায় তাহার দেহও কম্পিত হইতে লাগিল ; কিন্তু ডেভিডের ভাবান্তর হইল না সেই ঘৃণা, ক্রোধ ও বিরক্তিতে সে এখনও জলিতেছে । জর্জ যেন শীতাৰ্ত্ত হইয় তাহার মাথার আবরণ টানিয়া দিয়া বলিল “ডেভিড, তোমার কপালে যত দুঃখই থাকু তুমি বিদ্রোহ করো না, তাতে তোমার দুঃখের মাত্রা বাড়বে বই