পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ) ধ্রুবতারা 6 o X হরিকেন লণ্ঠনটা লইয়া পা উপর দিকে করিয়া উলটাইয়৷ পড়িয়া আছে। ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা খোলা কfiশবাক্স দুই হাতে চাপিয়া ধরিয়া একটি মানুষ পড়িয়া আছে । তাহার সর্বাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন, দুই চোখ খোল, কিন্তু তাহাতে দৃষ্টি নাই। ব্যাপার বুঝিতে নরেনের কিছু মাত্রও দেরি হইল না। অ ভয় নন্দীর ধনের খ্যাতি এবং তাহার রূপণতার অখ্যাতি কলিকাতায় সকল চোর এবং গুণ্ডারই জানা ছিল । কেবল মাত্র অতিরিক্ত সাবধানতায় এতকাল সে ধনপ্রাণ রক্ষা করিয়া আসিয়াছে। আজ কোন ছিদ্রপথে শনি প্রবেশ করিয়া একসঙ্গে দুইই হরণ করিয়া লইয়া গেল, নরেন ভাবিয়াও পাইল না। রাত্রি এমন বেশী কিছু নয়, গল্পভাড়ার বাড়ী বলিয়, বাড়ীপানি ভদ্র পাড়ায় নয়, তবু চারিদিকে মানুষ ত আছে ? একটা মানুষের প্রাণবধ করিয়া কি এমনই নিঃশব্দে পলায়ন করা যায় যে, কেহ তহি। জানিতেও পারিল না ? কিন্তু ভয়ে ও উত্তেজনায় তাহার পা তখন ঠক্ ঠক্‌ করিয়! কাপিতেছে। সে আর দেরি না করিয়া অন্ধকার সিড়ি দিয়া হুড়মুড় করিয়া নীচে নামিয়। পড়িল এবং একছুটে বাহিরে আসিয়া দাড়াইল । সভয়ে চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, লোকজন বড় কেহ কোথাও নাই। ইন্‌ইন্‌ করিয়া সে চলিতে আরম্ভ করিল, নিহত বৃদ্ধের মূৰ্ত্তি যেন পিছন হইতে তাহাকে তাড়া করিয়া লইয়া চলিল। তাহদের পরিবারের সহিত নন্দীর বিবাদ বহু দিনের এবং তাহা সকলেরই জান । এ হেন সময় নন্দীর বাড়ী হইতে বাহির হইয়া তাহাকে পথে দৌড়াইতে দেপিলে লোকের মনে প্রথমেই যে কি সন্দেহ হইবে তহি বুঝিতে নরেনের বাকি ছিল না। গলি প্রায় ছাড়াইয়া আসিয়াছে এমন সময় একজন লোক হুমুড়ি খাইয় তাহার ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়িল। নরেন ভয়ে একেবারে দশবারে হাত ছিটুকাইয়া গিয়া একটা ল্যাম্প পোষ্ট ধরিয়া কোনোক্রমে - নিজেকে সামলাইয়া লইল । যে লোকটি তাহার ঘাড়ে সুসিয়া পড়িয়াছিল সে বলিয়া উঠিল, “আরে নরেন যে । সাজ ফিরে ফিরে কেবল তোমারই দেখা মিলছে। এত রাতে এখানে কি মনে ক’রে ? নদীর সন্ধানে এসেছিলে বুঝি, মিলল কিছু ?” অমরের কথায় অস্ফুট স্বরে “না” বলিয়াই নরেন একরকম দৌড় দিল। প্রায় আধমাইল পথ এই রকম দ্রুত গতিতে চলিয়া সে শেষে একেবারে শ্রাস্তিতে অভিভূত হইয় ফুটপাথের উপর গড়াইয়া পড়িল । একটা ঔষধের দোকানের সিড়িতে ঠেস দিয়া কিছু পরে সে উঠিয়া বসিল । মাথার ভিতর তথন ও যেন তাহার ঝড় বহিতেছে। এ তাহার হইল কি ? তিন ঘণ্ট আগে সে যখন পথে বাহির হইয়াছিল, তখন দারিদ্র্য ছিল তার একমাত্র দুঃখ । কিন্তু কিছুমাত্র অপবাধ না করিয়া সে এই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফেরারী আসামীর স্থানে আসিয়া পৌছিল কি করিয়া ? নন্দীর খুন এতক্ষণ নিশ্চয়ই জানাজানি হইয়। গিয়াছে, না হইলেও আর রাত্রিটুকু শেষ হওয়ার মাত্র অপেক্ষ। সে যে সন্ধ্যারাত্রে একবার নদীর খোজে গিয়াছিল তার সাক্ষ্য অনেকেই দিতে পরিবে, অন্ততঃ বুড়ীঝি ত দিবেই। সে নরেনের গলার স্বর চিনে, এবং সদর দরজার কপাট দুটি ছিদ্র পথে সকল আগন্তুককে দেপিয়া রাখিবার হুকুমও তাহার উপর ছিল। সাড়ে দশটার সময় গলির মুখে অমর তাহাকে দেখিয়াছে, এবং নরেনের চেহারা নিশ্চয়ই তখন প্রকৃতিস্থ দেখায় নাই! সুতরাং পুলিশ হইতে আরম্ভ করিয়া সব মাহুষেই এই হত্যাব্যাপারের সঙ্গে তাহাকে নিঃসংশয়িতরূপেই জড়িত করিবে। নরেনের কপাল বাহিয়া দর-দর করিয়া ঘাম ছুটিতে লাগিল, সে এখন করিবে কি, যাইবে কোথায় ? পলায়ন ছাড়া তাহার নিষ্কৃতি পাইবার কোন উপায় নাই। কিন্তু সে যে কপর্দকহীন, নিঃসস্থল। আর তাহার সহায়হীন বিধবামাতা, ছোট ভাইবোন ? তাহাদেরই বা উপায় হইবে কি ? পলায়ন না করিলেও আর সে তাহাদের কোনে কাজে আসিবে না ? ফণসীর আসামীর কাহাকেও সাহায্য করিবার কোনো পথ ত থাকিবে না ? ভগবান তাহাদের দেখিবেন। নরেন উঠিয়া দাড়াইল। মা ভাই বোনের সঙ্গে আর