পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6:e 8 সে এখন একরকম হাল ছাড়িয়া দিয়াছিল। মা তাহাকে বিক্রয় করিয়া ঘদি অন্য সন্তান গুলিকে কিছু স্থখ স্থবিধা দিতে পারেন, তাই না হয় দিন। নরেন বাচিয়া নাই বলিয়াই সে ধরিয়া লইয়াছিল, কারণ এ দুবছর তাহার কোনো সন্ধানই পাওয়া যায় নাই। ধীরেন আজকাল এক প্রেসে কাজ করে, তাহার মা পাড়ায়-পাড়ায় সেলাই শিখান, দেশের কোনো এক আত্মীয় কিছু সাহায্য করেন, এমনি করিয়া তাহাদের দিন কোনো প্রকারে চলিয়া যায়। তাহারা ও নরেনকে ফিরিয়া পাইবার অাশা একরকম ছাড়িয়া দিয়াছে। মায়ের কথায় সরযু হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, “আচ্ছা মা, মুকুমারী আসুক, তখন উঠে সাজগোজ করা যাবে, এখন একটু শুয়ে নিই আমার বড় মাথা ধরেছে।” তাহার মাতা আর বাক্যব্যয় না করিয়া চলিয়া গেলেন। স্বকুমারী খানিক পরে আসিয়া উপস্থিত হইল। সাজসজ্জার সর্বপ্রকার সরঞ্জাম সে সঙ্গে করিয়াই আসিয়াছিল। সরযুর মা কেবল পাড়াপ্রতিবেশীর কাছে চাহিয়া চিন্তিয়া গুটিকয়েক গহন সংগ্ৰহ করিয়া দিয়াছিলেন। স্বকুমারীর সাজাইবার হাত ছিল ভাল। বাহার করিয়া চুল বাধিয়া, পাউডার রুজ ঘষিয়া হাল্কা বাসন্তী রঙের শাড়ী, জামা পরাইয়া সরযুকে সে দিব্য সুত্ৰ করিয়া সাজাইয়া তুলিল। সরযুর মায়ের ইচ্ছ ছিল যে ধার করিয়া আন সব গহনাগুলিই সরযুর অঙ্গে চড়ানো হোক, কিন্তু স্বকুমারীর প্রবল আপত্তিতে তাহা আর ঘটিয়া উঠিল না। মাথা নাড়িয়া সে বলিল, “সে হবে না মামীম। এত করে সাজালাম, এখন একরাশ সোণ রূপে চড়িয়ে আপনি ওকে মাড়োয়ারীন বানিয়ে দিতে চান ?” সরযুর মা অগত্যা গহনা তুলিয়াই রাখিলেন। সরযুর মাড়োয়ারীন সাজিতে বিশেষ কিছু আপত্তি ছিল না, আয়নায় নিজের ছায়ার দিকে তাকাইয়া ভয়েই তাহার প্রাণ শুকাইয়া উঠিতেছিল। তাহার কুরূপ তাহাকে শেয অবধি বৰ্ম্মের মতন রক্ষা করিবে প্রবাসা—আষাঢ়, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড বলিয়া তাহার একটা ভরসা ছিল, সে ভরসাও যাক্টতে বসূিয়াছে বা। বরপক্ষ আসিয়া পৌছিল এবং কন্যাকে পছন্দ হইতেও তাহাদের বিলম্ব হইল না । পাড়ার দু এক জন ভদ্রলোককে সরযুর মা কন্যাপক্ষ হইবার জন্য পূৰ্ব্ব হইতেই জোগাড় করিয়া রাখিয়াছিলেন, কারণ সতীশের সাংসারিক বুদ্ধির উপর তাহার বিন্দুমাত্রও আস্থা ছিল না। রূপে পছন্দ হইবার পর সরযুকে লইয়। যাওয়া হইল । দেনা-পাওনার কথা তখন উঠিয়া পড়িল । বরপক্ষ পূৰ্ব্ব হইতে আশ্বাস দিয়াছিলেন যে, তাহার। কিছুই দাবী করিবেন না, কিন্তু তাহারা বিবাহের খরচ স্বরূপ এখন কয়েক শত টাকা দাবী করিয়া বসিলেন । মেয়ে দিব্য বয়স্থা দেখিয় তাহীদের এই আশাট। হইয়াছিল যে, নিতান্ত অসম্ভব না হইলে যে কোনে। সৰ্ত্তেই রাজী হইবে, কারণ ইহাদের জাত যাইতে বসিয়াছে। মেয়ে তাহাদের পছন্দও হইয়াছিল ; এতটা তাহারা আপনাদের গুণবান পাত্রের জন্য অাশ করে নাই, কিন্তু সে কথা তাহারা প্রকাশ করিল না । অন্তত চারিশত টাকা চাই শুনিয়া সরযুর মা প্রথমে কপাল চাপড়াইয়া কাদিবার জোগাড় করিলেন। সরযুর আশা হইল হয়ত বা এই স্থত্রে সে নিষ্কৃতি পাইতেও পারে। কিন্তু দু’একবার স্বর তুলিয়াই তাহার মা চুপ হইয়া গেলেন, এবং বলিয়া পাঠাইলেন যে, চারিশত র্তাহার ক্ষমতার অতীত হইলেও তিন শত দিতে তিনি প্রস্তুত আছেন। বরপক্ষ আর দ্বিরুক্তি করিল না, মহোল্লাসে প্রস্থান করিল। ধার-করা সাজসজ্জা খুলিয়া ফেলিয়া, এতক্ষণে সরযু জিজ্ঞাসা করিল,“রাজী ত হ’লে, তিনশ’ টাকা পাবে কোথা থেকে ? আমাদের সকলকে বেচলেও ত হবে না।” তাহার মা বলিলেন, “রাজী না হ’য়ে কি করব ? জাত যে যেতে বসেছে ? দেখি ভাস্কর ঠাকুরের কাছে লিখে, এমন বিপদে পড়েছি জানলে কি আর কিছু সাহায্য ন| করবেন ?” সরযু স্নান হাসি হাসিয়া বলিল, “তবেই হয়েছে মা জাত যাওয়া যত বড় বিপদই হোক, সেটা না খেয়ে