পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& e V. সতীশ নির্জন পথ বাহিয়। ইন্‌ হন করিয়া চলিয়াছিল। কোথায় সে সে যাইতেছিল তাই সে নিজেই জানিত না । হঠাৎ পিছন হইতে তাহার পিঠের উপর হাত দিয়া কে চাপা গলায় ডাকিল, “সতীশ ।” ভয়ানক চমকাষ্টয় সতীশ স্থির হইয়া দাড়াইল সে যেন নিজের চোখ-কানকে বিশ্বাস করিতে পারিতেছিল না । কয়েক মিনিট পরে বলিল, “নরেন । এতকাল পরে তুমি কোথা থেকে ?” নরেন বলিল, “কোথা থেকে যে ত| ত বলা শক্ত । দুনিয়ায় কম জায়গা আছে যেপানে আমি যাইনি। কিন্তু টিকতে পারলাম না। জানি যে এপানে ফাসীর কাঠ আমার জন্যে অপেক্ষা ক’রে আছে, তবু না এসে পারলাম মা ! কে যেন অদৃশু হাতে আমায় টেনে নিয়ে এল । তোমরা সব ভাল ত ?” সতীশ হাসিয়া বলিল “ভালই বটে। আমাদের মধ্যে যার ভাল থাকাটা তুমি সব চেয়ে চাও, তাকেই উদ্ধার করতে এই রাত একটায় কলকাতার পথে ভূতের মত ঘুরছি।” নরেনের মুখ কালে হইয়া গেল, সে বলিয়া উঠিল, “কি হয়েছে সরযুর ?” সতীশ বলিল, “তাঁকে নিয়ে আমাদের জাত যেতে বসেছে । আজ তার বিয়ের রাত্রি । সভার থেকে বর উঠিয়ে নিয়ে তারা চলে গিয়েছে, আমরা টাকা দিতে পারিনি ব’লে। অার একট লগ্ন আছে, ঘণ্টা থানেকের মধ্যেও যদি নিজেকে বেচেও টাকার জোগাড় করতে পারি তারই চেষ্টায় চলেছি ।” নরেন হাসিবার চেষ্টা করিয়৷ বলিল, “তোমাকে এত রাতে কিনবে কে ?” সতীশ বলিল, “একটি মাত্র মানুষ আছে যে কিনতে পারে। এ গলির ভিতর এক ভদ্র লোকের বাড়ী, তার একটি বোবা এবং এক-চোখ-কানা মেয়ে আছে । তাকে কেউ নামে মাত্র বিয়ে করলেই তিনি সে পাত্রকে এক হাজার টাকা দিতে রাজী আছেন। আমার কাছে তিনি ইতিপূৰ্ব্বেও লোক পাঠিয়েছেন, কিন্তু বিয়েকে ব্যবসা ব’লে মনে করি না ব’লে আমি রাজী হইনি। আমি ঐ প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩১৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড মেয়েকে বিয়ে ক’বে আবার চোখ কানওয়ালা অন্য বড় ঘরে নিয়ে এলে প্রথম কন্যার বাবা কিছুই মনে করবেন না, কিন্তু আমি ত পারব না । একে বিয়ে করলে একে নিয়েই আমার চির জীবন সন্তুষ্ট থাকৃতে হবে। এমন ক’রে নিজের গলায় নিজে ফাসী দিতাম না, কিন্তু উপায়ু নেই। সমাজটি আমাদের রক্তপিপাস্থ দেবতা, তার চরণে নিজেকে বলি দিতে চললাম।” নরেন বলিল, “তুমি ভদ্র লোকের বাড়ী ঘুরে এস, এই রাস্তার মোড়ে আমি তোমার জন্তে দীড়াচ্ছি।” সতীশ দ্রুতপদে অগ্রসর হইয়। চলিয়া গেল । নরেএকটা বাড়ীর দেয়ালে ঠেশ দিয়া দাড়াইয়। রহিল, কিসের যেন বেদনায় তাহার জীর্ণ বক্ষপঞ্জর থাকিয়া থাকিয়। দীর্ঘ নিশ্বাসে দুলিয়া উঠিতে লাগিল । পাচ মিনিটের মধ্যেই সতীশ ফিরিয়া আসিল । নরেনের সামনে আসিয়া হাফাইতে হাফাইতে বলিল, “আমার বলি গ্রাহ্য হ’ল ন নরেন, সে ভদ্রলোক অন্য পাত্র ঠিক ক’রে ফেলেছেন, বললেন। ঘরে ঢুকতে শুদ্ধ আমায় দিল না, কুকুরের মতন পপ থেকে বিদায় ক’লে দিল। এখন গলায় দড়ি দিয়ে পরিবার শুদ্ধ মরুতে যদি পারি সেইটাই একমাত্র বুদ্ধির কাজ হবে । ভাগ্যের সঙ্গে যুদ্ধ ক’রে ক’রে হাড় গুড়ে হ’য়ে এসেছে, সমাজের চাবুক আর এ পিঠে সইবে না।” নরেন এতক্ষণ পরে কথা বলিল, “আমার সঙ্গে চল সতীশ, আমি টাকা জোগাড় ক’রে দিচ্ছি।” সতীশ অবাক হইয়া বলিল “তুমি দেবে ? কি করে?” রাস্ত দিয়া একখানা খোলা ভাড়াটে গাড়ী যাইতেছিল নরেন তাহাকে ডাক দিল । দুই বন্ধুতে গাড়ীতে উঠিয় বসিলে দরজাট বন্ধ করিয়া নরেন বলিল, “চলে, লালবাজার থানামে ।” গাড়োয়ান একবার বিস্মিত দৃষ্টিতে আরোহীদের প্রতি তাকাইয়া গাড়ী চালাইয়। দিল । সতীশ চীৎকার করিয়া উঠিল “এই রোকে, রোকে। নরেন তুমি কি পাগল হয়েছ ? তুমি কি আমাকে জল্পীদের assistant করতে চাও? আমি যাব না।” নরেন বজ্ৰমুষ্টিতে তাহার হাত চাপিয়া ধরিয়া বলিল,