পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] এমন সময় কোথাকার কে একজন আসিয়া জুটিলেন । তিনি চণ্ডীদাস ।" যে-জনশ্রুতির উপর নির্ভর করিয়া সত্যবাবু লিখিলেন, শালতোড়ীর নিকটে চণ্ডীদাসের বাসস্থল, সেই জনশ্রুতি শুনিয়াই রায় বাহাদুর লিখিলেন “কোথাকার কে।”ঞ্চ ব্রাহ্মণ-পুজারী সম্বন্ধেও দুইজনের গবেষণা পড়িবার বিনয় ! বীরভূমকে এড়াইবার কৌশলও দ্রষ্টব্য। বিদ্যানিধি মহাশয় পাদটীকায় লিথিয়াছেন—“আমার মনে হইয়াছে, - শ্ৰীকৃষ্ণকীৰ্ত্তন কীৰ্ত্তন আদৌ নহে, ঝুমুর।” বিদ্যানিধি মহাশয়ের স্মরণ থাকিতে পারে, অtiমই উtহাকে সৰ্ব্বপ্রথম এ কথা নিবেদন করি এবং স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করিয়াই (শ্ৰীকৃষ্ণকীৰ্ত্তন যে আদৌ কীৰ্ত্তন মহে, ঝুমুব ) ইহা উহার “মনে হইয়াছে।” কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাহার বাদবাটীর অতি নিকটেই ঝুমুরের দল থাক। সত্ত্বেও এপর্য্যন্ত তিনি সে সম্বন্ধে কোনো অনুসন্ধান করেন নাই। অথবা করিলেও “মস্তব্যে দে বিষয়ে কোনো আলোচনা লিখেন নাই। বীরভূমে কেন চণ্ডীদাসের এত পদ আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহার কারণ নির্দেশ করিতে গিয়| বিদ্যানিধি মহাশয় বীরভূমের স্বৰ্গীয় নীলরতন মুখোপাধ্যায়, বি-এ, মইfশয়ের একনিষ্ঠ সাধনার উল্লেখ করিয়ছেন। অমর জিজ্ঞাপ করি, সংবাদপত্রে তাড়াতাড়ি জাহির হইতে না দিয়া তিনি কি সঙ্গ্যবাবুকে একাৰ্য্যে সাধনীর উপদেশ দিতে পারিতেন না ? বাঁকুড়ায় এখনো এত পুরানো পুথি পাওয়া যায় যে, খুজিলে সেইসমস্ত কাঠচাপর কবলবদ্ধ কীট দষ্ট পুস্তকস্তপ হইতে অনেক রহস্তের সন্ধান মিলিতে পারে । সত্যবাবু অর্থশালী ব্যক্তি, বহু উকিল থেস্তিারের সঙ্গে আলাপ ; এইসমস্ত উকিল-মোক্তারগণের মক্কেলদের সাহাবো, বাঁকুড়ার স্কুল-কলেজের ছাত্রগণের সাহায্যে ও বিদ্যানিধি মহাশয়ের পরিচিত ও গুণমুগ্ধ লোকদের সাহায্যে, এবং সৰ্ব্বোপরি :িণর বেতন-ভোগী ( বিশেষ ভাবে এই কাৰ্য্যে নিযুক্ত ) কৰ্ম্মচারীর স{চায্যে অতি অনায়াসে তিনি এই কায্যে সাফল্যলাভ করিতে পারেন। উপযুক্ত উপকরণ ও প্রমাণাদি সংগৃহীত হইলে অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণের সমক্ষে পৰিষদ-মন্দিরে অথবা অপর কোথাও এfষয়ে আলোচনা চলিতে পরে এবং তখনই সেইসমস্ত উপকরণ ও আলোচনাদি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইলে তবে সত্য নিৰ্দ্ধারণের উপায় সহজ ও মুগম হইয় স্বাসে । অতি অল্প মাত্রায় হইলেও বাঁকুড়ায় আমি অমুসন্ধানের চেষ্ট৷ করিয়াছি। বিষ্ণুপুরের সাব ডেপুটি কালেক্টর প্রিয় কুহ শ্ৰীযুক্ত উমেশচন্দ্র শীলের সহায়তায় এবং তথাকার ভদ্রলোকগণের আমুকূল্যে আমি যতদূর সম্ভব বিষ্ণুপুরের ঘরে ঘরে পুরাণে পুথির সন্ধান করিয়া ছ। গুই এক ব্যক্তি নানারূপ ছল করিয়া বিদায় দিলেও অনেকেই আগ্রহ সহকারে পুথিগুলি দেখাইয়াছেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়—শ্ৰীকৃষ্ণকীৰ্ত্তলের একটি পদ এমন-কি প্রচলিত পদাবলীর কোনে উল্লেখযোগ্য পদ প্রাপ্ত হই নাই। যে দুই একটি পদ পাইয়াছি তাহা "দীন চণ্ডীদাসের’ ভণিতাযুক্ত। নীলরতন-বাবুর সংগ্রহে দ্বীন চণ্ডীদাসের কয়েকটি পদ আছে, এগুলি যে পদাবলী-রচয়িত স্বপ্রসিদ্ধ চণ্ডীদাসের নহে তাহ জোর করিয়া বলিতে পারা যায়। ইতিপূৰ্ব্বে ভারতবর্ষ পত্রিকায় এ বিবয়ে পদাবলী সাহিত্যে স্থপরিচিত প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক #মুক্ত সতীশচন্দ্র রায়, এম-এ মহাশয়ের সহিক্ত আলোচনা হইয়৷ গিয়াছে । সত্যবাবুর একবার সে-সব পড়িয় লওয়া উচিত। ইতিপূৰ্ব্বে মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়

  • রায় বাহাদুর ও সত্যবাবু একসঙ্গেই ছাতনায় গিরছিলেন। সত্যবাবু শুনিলেন শালতোড়ার নিকটে, আর রায় বাহাদুর শুনিলেন

গ্রামের আদ্যে ম! কত মিল ৷ আলোচনী---“ছাতনায় চণ্ডীদাস" সম্বন্ধে বক্তব্য © ᎼᏱ চণ্ডীদাস দুইজন বলিয়া সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন। বিদ্যানিধি মহাশয় কি জঙ্ক এই মতে উপেক্ষ প্রদর্শন করিতেছেন বুঝিতে পারিতেছি না আমাদের মনে হয়, চণ্ডীদাস দুই বা ততোধিক ছিলেন। শ্ৰীকৃষ্ণকীৰ্ত্তনের অনন্ত নামধারী গায়ক চণ্ডীদাস, পুৰ্ব্বকথিত দ্বীন চণ্ডীদাস, রাগাস্থিক পদের ভণিতার চণ্ডীদাস ইহার একজন না হওয়াই সম্ভব। মহাপ্ৰভু স্ত্রীচৈতন্য যে-চণ্ডীদাসের পদের রসাস্বাদ করিয়াছিলেন, তঁহারই পদ বৈষ্ণব-সংগ্ৰহ-গ্রস্থে সংকলিত হইয়ছে ; আমাদের মতে তিনিই বীরভূম নান্নরের স্বপ্রসিদ্ধ পদাবলী রচয়িত কবি চণ্ডীদাস। এই পদাবলীপ্রণেতার গানে একটা নিজস্ব চণ্ডীদাসত্ব আছে, এবং তাঁহা কি কীৰ্ত্তনীয়াগণের মুখে মুখে প্রচলিত, আর কি সম্পূর্ণ নুতন অধুনা আবিষ্কৃত সকল গানেই পাওয়া যাইতেছে। এই ছাপ নীলরত্ন-বীবুর সংগৃহীত প্রায় নয় শত গানের মধ্যে অন্ততঃ ছয় শত গানে পাওয়া যায়, কিন্তু শ্ৰীকৃষ্ণকীৰ্ত্তনে এমন কুড়িটি গানও পাওয়া যাইবে না, যাহা চণ্ডীদাসের বলিয় পরিচিত হইতে পারে । ভারতবর্ষ পত্রিকায় চণ্ডীদাসের যে নবাশিল্পত পদ প্রকাশ করিয়ছিলাম, জনৈক ডেপুটিমাজিষ্ট্রেট স্ত্রীযুক্ত দক্ষিণারঞ্জন ঘোষ তাহ ন বলিয়। গ্রহণ করিয়াছেন এবং তাহর সম্পাদিত বৈষ্ণব গীতাঞ্জলি কি এইরূপ কোন পুস্তকে প্রকাশ করিয়াছেন। উক্ত পদ কয়টির মধ্যে একটি পদের প্রথন কয়েকটি চরণ শ্রীচৈতন্যচরিতামুতে পাওয়া যায় । দক্ষিণীবাবু, না কি অনেক বাছিয়া পদ গ্রহণ করিয়াছেন। বল বাহুল্য নবাবিষ্কৃত পদগুলি উহার বাছাইয়ের মধ্যেই পড়িয়াছে, স্বতরাং এই পদে চণ্ডীদাসের ছাপ যে সুস্পষ্ট তাহ অস্বীকার করিবার উপায় নাই, শ্ৰীযুক্ত সতীশচন্দ্র রায় মহাশয়গু তাহ৷ স্বীকার করিয়ছেন। তাহা হইলেই তথাকথিত শ্ৰীকৃষ্ণকীৰ্ত্তন ও পদাবলীর মধ্যে ব্যবধান যে কত বাড়িয়া উঠিয়াছে তাহ আর বিশদ না করিলেও চলে। এখন হয়তে সত্যবাবু বুঝিতে পরিবেন যে, কেবল ছাতন, বাসলী, তুনু, নাছর লইয়। প্রবন্ধ রচিলেই সত্য আবিষ্কৃত হইবে না। পদাবলী ও শকুষ্ণকীৰ্ত্তনের সমস্ত আরো জটিল ৷ পণ্ডিত বিদ্যানিধি মহাশয় তাহ জানেন, আর জানেন বলিয়াই মস্তব্যে সে-প্রসঙ্গটার উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন । বিদ্যানিধি মহাশয়ের অবগতির জন্য নিবেদন করিতেছি যে, আমি তথাকথিত শ্ৰীকৃষ্ণকীর্তনের জন্মভূমি কঁকিনীয় গিয়াও শ্ৰীকৃষ্ণকীৰ্ত্তনের কোনো পদ সংগ্ৰহ করিতে পারি নাই। ছাতন রাজবাড়ীতেও গিয়াছিলাম, কিন্তু কপাল-দোষে রাজবাড়ীতে যে-ভাবে অভ্যর্থত হইয়াছিলাম তাহাতে কবিকঙ্কণের সেই “তেল বিনা করি স্বান, উদক করিনু পান” কবিতাটি বারবার মনে পড়িয়ছিল, ইহার অধিক আর পাঁচজনকে ডাকিয়া শুনাইবার মত নহে। অতএব গোদ বাসলীর অধিষ্ঠান ভূমিতেও চণ্ডীদাসের পদের কোনো সন্ধান মিলে নাই। জীবন দেঘরিয়া মহাশয়ও স্পষ্টতঃই স্বীকার করিয়াছিলেন যে-চণ্ডীদাসের পদ-লিখিত কোনো পুরানো পুথি-পাতার সন্ধান তিনি জানেন না । এখন পাদটীকায় চণ্ডীদাসের মালাপের নাম লেখা যে কাগজপত্রের বিষয় বিদ্যানিধি মহাশয় উল্লেখ করিয়াছেন সে-সব একটু সাবধানে গ্রহণ করিলেই ভাল হয়। অবখ্য “প্রমাণ” যখন “বিচারাধান আছে’ এবং “পরে প্রকাশ করা যাইবে” তখন সে-সম্বন্ধে পুৰ্ব্বাহ্নে কিছু না বলাই তাল। তবে এ অনুরোধ দশবার করিব যে বিচার যেন তিনি সত্যবাবুকে লইয়াই না করেন, একল করেন সে বরং ভাল, কিন্তু লোক লইতে হইলে যেন অন্ত লোক বাছিয়া লয়েন । অন্যথায় সাকালিপুর শাঁখারিপুকুরের ইঙ্গিতটা হয়তো ঐ বিচারেই সত্য হইয় উঠিবে, আর লোকে কৃত্তিবাস পণ্ডিতের ভাষায় বলিবীয় অবসর পাইবে— “সে করে মাই ‘তিন কৰ্ম্ম এই বা ক’রে যায়” । আর একটি নিবেদন, বীরভূম সাহিত্য-সম্মিলনে চণ্ডীদাসের পদাবলী