পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ こぐり প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৩ ['২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড মুসলমানগণের এই ভ্রান্ত ধারণ আছে, যে, তদ্বারা আবার ভারতীয় মুসলমানদের প্রাধান্ত প্রমাণিত বা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। তাহ৷ সত্য নহে । আহমদ শাহ আবৃদালী ভারতীয় মুসলমান ছিলেন না, এবং তিনি পানিপথে জয়লাভ করিয়া দিল্লীতে রাজত্বও করেন নাই। র্তাহার জয়লাভের ফলে ভারতবর্ষ নূতন করিয়া বিদেশীর অধীন হয় নাই। কেবলমাত্র একটা যুদ্ধে বিদেশী কেহ জিতিলেই দেশটা ঐ বিদেশীর বা তাহার সধৰ্ম্মীদের করায়ত্ত হওয়া অবতম্ভাবী নহে। স্কুলের ছেলেরাও জানে, যে, খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে হল্যাণ্ডের নৌসেনাপতি ট্রম্প এক সমুদ্রযুদ্ধে ইংরেজদিগকে পরাজিত করিয়া নিজের জাহাজের মাস্তুলে বাট বাধিয়া টেম্স্ নদী দিয়া উজান বাহিয়া আসিয়াছিলেন। তাছাতে ইংরেজদের খুব অপমান হইয়াছিল বটে, কিন্তু ইংলণ্ড হল্যাণ্ডের পদানত হয় নাই। সেইরূপ পানিপথে মরাঠারা আফগানদিগের নিকট পরাস্ত হইয়া থাকিলেও, ভারতবর্য নুতন করিয়া আফগানের পদানত হয় নাই, এবং ভারতীয় মুসলমানরাও দিল্লীতে বা অন্যত্র নূতন করিয়া দেশের রাজা হয় নাই । ইংরেজদের হিন্দুদিগকে পছন্দ না করিবার অনেক কারণ আছে। ভারতীয়ের কোন কোন দিকে কি পরিমাণে ইংরেজদের কতকটা সমকক্ষ হইবার দিকে অগ্রসর হইয়াছে, তাহার আলোচনা এখানে অনাবশ্যক। এখানে ইহা বলিলেই যথেষ্ট হইবে, যে, সাহিত্যে, বিজ্ঞানে, শিল্পে, বাণিজ্যে, রাজনীতিক্ষেত্রে, ংবাদপত্র পরিচালনে এবং আরও নানাদিকে হিন্দুরা ইংরেজদের সহিত যতটা প্রতিযোগিতা করিয়াছে, মুসলমানেরা ততটা করে নাই, করিবার সামর্থ্য তাহাদের ততটা এখনও হয় নাই। প্রতিযোগীকে কেহ পছন্দ করে না। এইজন্য শিক্ষিত হিন্দু অনেক ইংরেজের চক্ষুশূল । ভারতীয়দের রাষ্ট্রীয় অধিকার লাভের যে-চেষ্টা গত শতাব্দী হইতে চলিয়া আসিতেছে, তাহা প্রধানতঃ হিন্দুদের চেষ্টা। পারসীরা সংখ্যায় মোটে একলক্ষ হইলেও তাহারাও এই চেষ্টায় যত নেতা জোগাইয়াছেন, সাত কোটি মুসলমান তাহাদের সংখ্যার অনুপাতে সে পরিমাণে জোগান নাই। সম্প্রতি কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে ভারতীয় রাজনীতিক্ষেত্রে মুসলমানদিগকে যে একটু বেশী সংখ্যায় দেখা গিয়াছিল, তাহ দেশের স্বাধীনতা বা স্বরাজের জন্য নহে, বিদেশের খিলাফতের জন্য। হিন্দুদের রাষ্ট্রীয় অধিকার লাভ চেষ্ট নানা আকার ধারণ করিয়াছে। ইহার উগ্রতম রূপ শাক্ত বিপ্লববাদ । মুসলমান নেতার গৌরব করিয়া বলিয়া থাকেন, যে, ইহাতে মুসলমানের যোগ দেয় নাই। যাহাকে বৈধ আন্দোলন বলা হয়, তাহাতেও মুসলমানের তাহাদের সংখ্যার অনুপাত অনুসারে কখনও যোগ দেয় নাই । তাহাদের প্রবলতম আন্দোলন হুইয়াছিল খিলাফত সম্পর্কে, যাহার সহিত ভারতীয় রাষ্ট্রীয় স্বাধীনত। লাভের সম্পর্ক নাই। এইজন্য, ইহা বলিলে ভুল হইবে না যে, ভারতের বৃহৎ ধৰ্ম্মসম্প্রদায়গুলির মধ্যে হিন্দুরাই বিদেশী ইংরেজদের প্রভুত্ব লোপ করিয়া ভারতীয়দের অধিকার স্থাপন করিতে সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক চেষ্ট{ করিয়াছে। রাজনৈতিক প্রভুত্ব ইংরেজদের থাকায় বাণিজ্যিক সুবিধাও তাহাদের খুব হইয়াছে। রাজনৈতিক প্রভুত্ব কমিলে, বাণিজ্যিক সুবিধার যতটুকু রাজনৈতিক শক্তির অপব্যবহার দ্বারা লব্ধ হইয়াছে, তাহাও কমিবে বা লুপ্ত হইবে । এই কারণে, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষতির আশঙ্কা যাহাদের হইতে জন্মিয়াছে, সেই হিন্দুদিগকে দেখিতে না পারা ইংরেজদের পক্ষে স্বাভাবিক । প্রধানতঃ হিন্দুদের চেষ্টায় যখনই কিছু রাষ্ট্রীয় অধিকার বা উচ্চ চাকরী ভারতীয়দের হস্তগত হইবার উপক্রম হইয়াছে, মুসলমানেরাও তখন তাহার একটা বড় ভাগ পাইবার জন্য উপস্থিত হইয়াছে বটে ; কিন্তু আন্দোলন দ্বারা অপ্রিয় হইবার সময় তাহার তত বড় ভাগ লইবার জন্য সাধারণতঃ উপস্থিত হয় নাই । তা ছাড়া এবিষয়ে হিন্দুমুসলমানে আরও একটা তফাৎ আছে। হিন্দুরা নিজেদের দাবী প্রধানতঃ যোগ্যতার ভিত্তির উপর স্থাপিত করিয়াছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ, তাহার বলিয়াছে, সিবিলসার্ভিস ও অন্য সব রকম বড় চাকরীর জন্য এদেশে অবাধ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হউক । তাহারা ইংরেজের বা অন্ত কাহারও অনুগ্রহ চায় নাই, তাহাদের প্রতিযোগিতাকে ভয় করে নাই। কিন্তু