পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] “নোংরা জড়োপাসক” কয়েক দিন পূৰ্ব্বে ধৰ্ম্মতলা ও চৌরঙ্গির মোড়ে এক ময়রার দোকানে সত্যনারায়ণের পূজা উপলক্ষ্যে কলিকাতার ডেপুটী মেয়র মিঃ শহীদ মুহাবাদী হিন্দুদের প্রতি “ডার্টি আইডলেটার” অর্থাৎ “নোংরা মূৰ্ত্তিপূজকৃ” কথাগুলি প্রয়োগ করেন, খবরের কাগজে এইরূপ সংবাদ বাহির হয় । তাহাতে ডাঃ আবদুল্লা মুহাবাদী ঠিকই বলেন, যে, ভিন্নধৰ্ম্মাবলম্বীদের প্রতি এরূপ অবজ্ঞাস্বচক কটু বাক্য প্রয়োগ করা উচিত নয় । প্রবাসী ধৰ্ম্মমতের আলোচনার কাগজ নয় । কিন্তু ধৰ্ম্মমতের আলোচনা না করিয়াও এই প্রসঙ্গে অনেক কথা বলা যাইতে পারে । সত্যনারায়ণের পূজা মূৰ্ত্তির সাহায্যে করা হয় না ; র্তাহার কোন মূৰ্ত্তি নাই। হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের সামঞ্জস্য সাধনের জন্য মুসলমান-রাজত্বকালে যে-সব চেষ্ট হইয়াছিল, সত্যপীরের পূজা, সত্যনারায়ণের পূজা তাহার অন্তর্গত। এই পূজ। এখনও প্রচলিত আছে। তদুপলক্ষ্যে সত্যনারায়ণের পুথি পঠিত হইয়া থাকে। মুক্তির পূজা বা মুক্তির সাহায্যে পূজা করিলেই মাকুয নোংরা বা অবজ্ঞেয় হয় না, এবং মুক্তিপূজা বা মূৰ্ত্তির সাহায্যে পূজা যে-সকল ধৰ্ম্ম-সম্প্রদায়ের মতের আন্তর্গত নহে, তাহদের অন্তর্গত হইলেই যে-কোন মাহ্য মূত্তিপূজকদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয় না । চৈতন্যদেব কোন না কোন সময়ে মুক্তির সাহায্যে পূজা করিয়াছিলেন ; ভক্ত রামপ্রসাদ, পরমহংস রামকৃষ্ণ প্রভৃতিও তাহা করিয়াছিলেন । র্তাহারা ভিন্নধৰ্ম্মী ঋষ্টিয়ানদেরও শ্রদ্ধাভক্তি লাভ করিয়াছেন । হয় ত মিঃ শহীদ মুহাবাদী মনে করেন, তিনি ইহাদের চেয়ে উচ্চতর আধ্যাত্মিক অবস্থা লাভ করিয়াছেন । কিন্তু বাস্তবিক তাহা করিয়! থাকিলে তিনি কাহাকেও অবজ্ঞা করিতেন ন । মুসলমান সম্প্রদায় নান শাথায় বিভক্ত। তাহাদের প্রধান কোন কোন মত এক হইলেও অবাস্তর বহু বিষয়ে তাহাদের মধ্যে মতভেদ আছে। ভারতবর্ষের মুসলমানদের মধ্যে মহরমের সময় তাজিয়ার প্রতি ও তদ্রপ অন্যান্য বস্তুর প্রতি যে-সম্মান প্রদর্শিত হয়, এবং মক্কায় হজ্জ করিতে গিয়া যে কাবা প্রদক্ষিণ করা হয় এবং জমজম নামক কুপকে পবিত্র মনে করা হয়, তাহা জড়পূজার সমজাতীয় আচরণ। বহুসংখ্যক মুসলমান কবর-পূজা করিয়া থাকে স্বলতান ইবন সাদ প্রমুখ ওয়াহাবী মুসলমানগণ ইহার বিরোধী। সম্ভবতঃ এই কারণে ইবন সাদ বা তাহার অমুচরদিগের '93=Sty বিবিধ প্রসঙ্গ—মসজিদের সামনে গীতবাদ্য (\రిష్క్రి দ্বারা হজরত মহম্মদের পরিবারবর্গের কবর ধূলিসাৎ হইয়াছে । আমরা তাহদের এরূপ বর্বরতার বিরোধী । তাহার হয়ত অন্য মুসলমানদিগকে “নোংরা জড়োপাসক” মনে করিয়া এইরূপ করিয়াছে ; কিন্তু আমরা এরূপ মনোভাব গর্হিত মনে করি । মেথর, ধাঙ্গড় প্রভূতির সমাদর কলিকাতা প্রেমচাঁদ বড়াল ষ্ট্রীটে সে-দিন বড়ালদিগের ভবনে মেথর, ধাঙ্গড় প্রভৃতির সম্বৰ্দ্ধনা করা হয় । যেসকল লোক গত দাঙ্গা-হাঙ্গামার সময় মন্দিরাদি রক্ষা করিয়াছিলেন, মেথর, ধাঙ্গড়ের তাহদের অন্তর্গত। ইহাই তাহীদের অভ্যর্থনার কারণ। এরূপ অভ্যর্থনা দ্বারা কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন ঠিকই হইয়াছে। যে-সব মেথর, ধাঙ্গড় মন্দির রক্ষা করিয়াছিলেন, প্রাচীন কালে কোন হিন্দু রাজার আমলে যদি তাহার এরূপ কোন ক্ষত্রিয়োচিত কাজ করিতেন, এবং যদি রাজার পরামর্শদাতা ঋষিগণ র্তাহাদিগকে ক্ষত্ৰিয়ত্ত্বে উন্নত করিতেন, তাহ হইলে তাহা আশ্চর্য্যের বিষয় হইত না । মন্দির রক্ষার কথ। ছাড়িয়া দিলেও, যে-সব কাজ মেথরদের দ্বারা হয়, তাহ সমাজের স্থিতি ও রক্ষার পক্ষে একান্ত প্রয়োজনায় । এইজন্য কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ১৩১৬ সালের শ্রাবণের প্রবাসীতে নিম্নমুদ্রিত কবিতাটি লিখিয়াছিলেন । — - মেথর কে বলে তোমারে, বন্ধু, অস্পৃষ্ঠ অশুচি ? শুচিত| ফিরিছে সদ। তোমারি পিছনে : তুমি আছ, গৃহবাসে তাই আছে রচি, নহিলে মানুষ বুঝি ফিরে যেত বনে । শিশু-জ্ঞানে সেবা তুমি করিতেছ সবে, ঘুচাইছ রাত্রিদিন সৰ্ব্ব ক্লেদ গ্লানি ; ঘুণীর নাহিক কিছু স্নেহের মানবে,— হে বন্ধু ! তুমিই এক জেনেছ সে বাণী । নির্বিচারে আবর্জন বহ অহৰ্নিশি, নিৰ্ব্বিকার সদ শুচি তুমি গঙ্গাজল ! নীলকণ্ঠ করেছেন পৃথুরে নিৰ্ব্বিষ ; আর তুমি –তুমি তারে করেছ নিৰ্ম্মল। এস বন্ধু, এস বীর, শক্তি দাও চিতে,— কল্যাণের কৰ্ম্ম করি” লাঞ্ছন। সহিন্তে । মসজিদের সামূনে গীতবাদ্য মসজিদের সাম্নে গীতবাদ্য সম্বন্ধে বঙ্গের লাট সাহেব যে-হুকুম জারী করিয়াছেন, তাহা যুক্তিসঙ্গত ও সমীচীন হয় নাই ।