পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6:8 e মসজিদের সম্মুখস্থ রাস্ত দিয়া কেহ গীতবাদ্য সহকারে কোন সময়েই যাইতে পারিবে না, কিম্বা কেবল নামাজের সময়েই যাইতে পরিবে না, কোরান শরীফ হইতে বা অন্য কোন ইসলামীয় ধৰ্ম্মশাস্ত্র হইতে ঈশ্বরের এরূপ কোন আদেশ কোন মুসলমান উদ্ধৃত করিতে পারিয়াছেন বলিয়া আমরা অবগত নহি। কিন্তু যদি এরূপ কোন আদেশ থাকিত, তাহ কেবল মুসলমানেরাই পালন করিতে বাধ্য থাকিতেন ; অমুসলমানরা তাহা পালন করিতে বাধ্য হইত না । মৌলবী ওয়াহেদ হোসেন মডার্ণ রিভিউ কাগজে দেখাইয়াছেন, যে, খলিফা ওমার এই আদেশ করিয়াছিলেন, যে, পাচ ওক্ত নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময়ে অমুসলমানের মসজিদের নিকটবর্তী রাস্ত দিয়া গীতবাদ্য সহ মিছিল করিয়া যাইতে পরিবে। মুসলমান যে-দেশের রাজা, সেখানে অগত্যা এই নিয়ম পালিত হইয়া থাকিতে পারে ; অন্যত্র হইতে পারে না। বস্তুত: যে-দেশে নানা ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের বাস, সেখানে কেবল কোন একটি ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের সুবিধা দেখিলে চলিতে পারে না। কোন ধৰ্ম্ম ভাল, কোন ধৰ্ম্ম মন্দ, তাহার বিচারও সেদেশের গবর্ণমেণ্টের অধিকারবহির্ভূত। উহ কোন ধৰ্ম্মকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্য কোন ধৰ্ম্মকে অশ্রেষ্ঠ স্থান দিতে পারে না। সকল ধৰ্ম্মসম্প্রদায়েরই স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষা করিতে এরূপ দেশের গবর্ণমেণ্ট বাধ্য। এইজন্য এবিষয়ে প্রিভি কৌন্সিল এবং তৎপূৰ্ব্বে ভারতীয় কোন কোন হাইকোর্ট ষেরূপ রায় দিয়াছেন, তাহা অতি সমীচীন। একবার মোকদ্দমা • হইয়াছিল মুসলমানদেরই শিয়া ও স্বল্পী সম্প্রদায়ের মধ্যে। শিয়ার স্বল্পীদের মসজিদের সাম্নে দিয়া বাদ্যসহকারে তাজিয়া আদি লইয়া যাওয়ায় স্বল্পীর নামাজের ব্যাঘাত হইতেছে বলিয়। আপত্তি করে, এবং মোকদমা হয়। তাহ বিলাতের প্রিভি কৌন্সিল পৰ্য্যন্ত গড়ায় । রায়ে এই মৰ্ম্মের কথা লেখা হইয়াছে, যে, শিয়াদের পূজাও পূজা। স্বল্পীদের ধৰ্ম্মকৰ্ম্মে ব্যাঘাত হয় বলিয়া শিয়ারা তাহাদের ধৰ্ম্মকৰ্ম্ম স্থগিত রাখিতে বাধ্য নহে। ইহাই ঠিক নীতি। যদি উভয় পক্ষ আপোষে কোন মীমাংসায় উপনীত হন, তাহ ভালই। নতুব। শিয়া বা অন্য যাহারা মসজিদের সামনে দিয়া মিছিল লইয়া যান, র্তাহারাও ত বলিতে পারেন, “আমাদের মিছিল চলিয়া গেলে তাহার পর আপনার নামাজ সমাপ্ত করিতে পারেন, এখন স্থগিত রাখুন।” ধৰ্ম্মকৰ্ম্ম স্থগিত রাখিতে হইলে শিয়াদিগকে বা অমুসলমানদিগকেই রাখিতে হইবে, এরূপ আদেশ করিবার কোন কারণ নাই। প্রবাসী-আষাঢ়, ১৩ee [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড ভদ্রভাবে অনুরোধ করিলে ভদ্রতা ওপ্রতিবেশী-উচিত সহানুভূতির খাতিরে একধৰ্ম্মাবলম্বী অন্যধৰ্ম্মাবলম্বীর অনুরোধ স্থানকালবিশেষে রক্ষা করিতে পারেন ; কিন্তু আইন, সরকারী হুকুম, বা গায়ের জোরে অন্যধৰ্ম্মাবলম্বীকে বশ্বতা স্বীকার করাইবার চেষ্টা বর্জনীয়। বৰ্ত্তমান সময়ে বাংলা দেশে বৈষ্ণব ও অন্তান্ত সম্প্রদায়ের হিন্দু, ব্রাহ্ম, আৰ্য্যসমাজী এবং কোন কোন খৃষ্টিয়ান মণ্ডলী নগরকীৰ্ত্তন করিয়া থাকেন। মনে করুন, তাহাদের কোন কীৰ্ত্তনের দল হরিনাম, ব্ৰহ্মনাম বা যিশুর নাম ভক্তি সহকারে করিতে করিতে রাস্ত দিয়া যাইতেছেন। কীৰ্ত্তন সাধারণতঃ অপরাহ্ল হইতে সন্ধ্যার পর পর্য্যন্ত হয়। এই সময়ের মধ্যে মুসলমানদের নামাজ তিন বার হয়। পথে যত জায়গায় মসজিদ আছে, সব জায়গাতেই যদি ধৰ্ম্মসঙ্গীত বন্ধ করিতে হয়, তাহ হইলে কখনও ভক্তিভাব-সহকারে কীৰ্ত্তন হইতে পারে না ; তাহা হইলে রসভঙ্গ-হেতু উহ জমিতে পারে না। অথচ এইরূপ কীৰ্ত্তনও নিশ্চয়ই ধৰ্ম্মকৰ্ম্ম, নিশ্চয়ই ভগবানের আরাধনার অঙ্গ। তাহাতে বাধা দিবার অধিকার মুসলমানদের নাই, গবর্ণমেণ্টেরও নাই। মুসলমানের যখন রাস্তার ধারে মসজিদ নিৰ্ম্মাণ করেন, তখন ইহা জানিয়া বুঝিয়াই করেন, যে, রাস্তায় নানাপ্রকার গোলমাল হইবে ও নামাজাদিতে তজনিত ব্যাঘাত সহ করিতে হইবে। ট্রাম, বাস, মোটরগাড়ী, ঘোড়ার গাড়ী, বাইসিকূল প্রভৃতির ভেপু, ফেরীওয়ালার চীৎকার, মহরমের ঢাক, মাদার শার মিছিলের গোলমাল, এই সমস্ত কোলাহল বহু ছোট বড় মসজিদের সম্মুখে হইয়া থাকে মুসলমানের তাহা সহ করিয়া স্ববুদ্ধির পরিচয় দিয়া আসিতেছেন। এবং এইরূপ কোন না কোন গোলমাল ভোর হইতে রাত্রি এগারটা পৰ্য্যস্ত প্রায় আঠার ঘণ্টা রোজই হয়। তাহাতে যখন মুসলমানদের ধৰ্ম্মহানি হয় না, তখন কখন কদাচিৎ কয়েক মিনিটের জন্য হিন্দুদের গীতবাদ্যের মিছিল গেলে তাহাতে আপত্তি করা এবং বাধা দিতে গিয়া রক্তপাত পৰ্য্যস্ত করা ধাৰ্ম্মিকের লক্ষণ নহে, যুক্তিসঙ্গতও নহে ; খলতা এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে জিদেরই লক্ষণ মাত্র। আমাদের বিবেচনায়, শুধু ধৰ্ম্মসংক্রান্ত মিছিল নহে, অন্য সব মিছিলও অবাধে সব রাস্তা দিয়া যাইতে দেওয়া উচিত। পুলিশকে কেবল ইহাই দেখিতে হইবে, যে, মামুষের ভীড়ে পথিকদের ও যানবাহনের যাতায়াত বন্ধ না হইয়া যায় এবং শাস্তিভঙ্গ না হয়। মিছিলের লোকেরা মসজিদ মন্দিরাদির সামনে দাড়াইয়া গোলমাল যাহাতে না করে, তাহাও পুলিসের দেখা উচিত। সকলের স্বাধীনতা ও অধিকার সমভাবে রক্ষার জন্য আমরা যেমন মুসলমানদিগকে অন্যান্য গোলমালের মত