পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6.8b. মনে বিরুদ্ধ ভাব নাই । দেবমন্দির দেখিলে এবং শঙ্খঘণ্টাধ্বনি শুনিলে স্বভাবতই আমার মনে শ্রদ্ধার ভাব উদিত হয়। তদ্রুপ, প্রত্যুষে এলাহাবাদে, কার্সিয়ঙে ও অন্যত্র যখনই মুসলমানদের আজান শুনিয়াছি, তখনই তাহা ভাল লাগিয়াছে এবং তা হাতে মনের মধ্যে ধৰ্ম্মভাবের উদ্রেক হইয়াছে । আমার সমালোচনায় দোষক্রট থাকে, কিন্তু তাহ হিন্দু ধৰ্ম্ম বা মুসলমান ধৰ্ম্ম কোনটিরই প্রতি অবজ্ঞা বা বিদ্বেষ প্রস্থত নহে, ইহাই আমার বক্তব্য । ] কাশ্মীরের মহারাজা হিন্দু। কিন্তু তাহার অধিকাংশ প্রজা মুসলমান। অথচ সেখানে গোবধ নিষিদ্ধ। কিন্তু সবাই জানে, ভারতবর্ষের সাত শত দেশী রাজ্যের মধ্যে যতগুলি রাজ্য খুব অকুন্নত, কাশ্মীর তাহার অন্তর্গত। ভূপাল মুসলমান রাজ্য। সেখানে মুসলমানী সব নিয়ম পালিত হয়। কিন্তু ভূপাল সাহিত্য, বিজ্ঞান, মুসলমানী ধৰ্ম্মতত্ত্ব, শিল্প, বাণিজ্য, প্রভৃতিতে কি উন্নতি করিয়াছে, নূতন কি করিয়াছে, জিজ্ঞাসা করিলে উত্তর সন্তোষজনক হইবে না। নিজামের হায়দরাবাদ খুব বড় দেশী মুসলমান রাজ্য। তাহার মুসলমান অধিবাসীর সংখ্যা হিন্দু অধিবাসীদের অষ্টমাংশেরও কম! অথচ সরকারী চাকরীর খুব বেশী অংশ, শতকরা নব্বইটিরও বেশী, মুসলমানদের হাতে। এইত গেল ন্যায় বিচার। নিজামের রাজ্যে খুব জীকাল একটি উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় আছে—যদিও শতকরা প্রায় নব্বই জন প্রজার ভাষা উর্দু নহে ; কিন্তু বড় বড় দেশী রাজ্যগুলির মধ্যে শিক্ষার বিস্তার হায়দরাবাদে সৰ্ব্বাপেক্ষা কম, এবং প্রজাদের কোন অধিকার নাই । হিন্দু মুসলমানরা অপর কাহার ও অধিকার খৰ্ব্ব না করিয়া নিজেদের আচার অনুষ্ঠান যতটা বজায় রাখিতে পারেন, তাহার চেষ্টা অবশ্যই করিবেন । কিন্তু এইসব বাহ জিনিযকে জীবনের সার বস্তু মনে করা মহাভ্রম। ইহা লইয়া ঝগড়া করায় প্রধানত: বিদেশী প্রভুদের ও ধনশোষকদেরই সুবিধা হইতেছে । নূতন গুণ্ডা আইন কলিকাতায় কিছু দিন আগে যেরূপ দাঙ্গাহাঙ্গামা হইয়া গিয়াছে, তাহ দমন করিবার মত ক্ষমতা গবন্মেণ্টের হাতে ছিল না, এই ওজুহাতে সৰ্বকার নূতন গুগু আইন করিয়াছেন। অনেক আইনজ্ঞ লোক লিখিয়াছেন ও বলিয়াছেন, যে, নূতন আইনটা হইবার আগেও ম্যাজিষ্ট্রেটু ও পুলিসের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা ছিল । যাহা হউক, ঐ ক্ষমতা যথেষ্ট ছিল না ধরিয়া লইলেও, ক্ষমতা যতটুকু ছিল তাহার যথোচিত ব্যবহার যে শাসকেরা ও পুলিস করে প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৩ ایه داد و تا پایان یا নাই, সে-বিষয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নাই। দাঙ্গাহাঙ্গামার পর মুর্শিদাবাদের নবাব, স্তার আবদার রহিম, বৰ্দ্ধমানের মহারাজাধিরাজ, স্যার প্রভাস মিত্র প্রভৃডি লোক ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান এসোসিয়েশনে সমবেত হইয়া একবাক্যে বলিয়াছিলেন, যে, গবন্মেটি নিজের কর্তব্য করেন নাই। ইহঁারা "পেশাদার আন্দোলনকারী” নহেন। গবন্মেণ্ট আত্মদোষক্ষলনার্থ নূতন আইন আবশ্বক বলিয়াছিলেন কি না, জানি না। কিন্তু আত্মদোষক্ষালন নুতন আইন ব্যবস্থাপক সভায় পেশ করিবার অন্যতম উদ্দেশ্য হওয়া অসম্ভব নহে। ইহা নিশ্চিত, যে, মানুষ নিজের হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা যত বেশী লইতে পারে, ততই তাহার উদ্দিষ্ট কাজ করিবার স্থবিধা বাড়ে। কিন্তু ইহাও ঠিকৃ, যে, এরূপ ক্ষমতা যত বাড়ে, ভ্রমের ও জুলুমের সম্ভাবনাও তত বাড়ে। লাট লিটন নূতন আইনটার খসড়া পেশ হইবার পূৰ্ব্বে কৌন্সিলে গিয়া বক্তৃতা করিয়া “নখর-রাজ” (rule of claw) 8 “afra-ots” (rule of law) āwo of প্রকাশ করেন । তিনি বলেন, নাগরিকদিগকে আইন অনুসারে অস্ত্রসংগ্ৰহ করিয়া আত্মরক্ষা করিতে দিলে, সভ্যসমাজ সোজমজি জঙ্গলের অবস্থ প্রাপ্ত হইবে, যেখানে নথরের রাজত্ব বিদ্যমান। কিন্তু স্বাধীন দেশ মায়েই নাগরিকদের অস্ত্র রাখিয়া . আত্মরক্ষার্থ তাহ। ব্যবহার করিবার অধিকার আছে ; কিন্তু সেইসব দেশ জঙ্গলের অবস্থা প্রাপ্ত হয় নাই। পক্ষান্তরে, কলিকাতায় আইনসঙ্গত উপায়ে অস্ত্রসংগ্রহ সহজ না হইলেও ইহার অবস্থ একমাস ধরিয়া হিংস্রশ্বাপদসঙ্কুল জঙ্গল অপেক্ষা নিকৃষ্ট হইয়াছিল । বস্তুতঃ মানুষ আত্মরক্ষায় সমর্থ থাকিলেই হিংস্র জন্তুর মত হইয়া উঠিবে, এবং আত্মরক্ষায় অসমর্থ হইলেই আইনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হইবে, মনে করা মহাভ্ৰম । অবশু নখরের রাজত্বের উচ্ছেদ করিয়া আইনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করা বাংলা গবন্মেণ্টের প্রকৃত ও প্রধান উদেশ্ব কি না, পরচিত্ত সম্বন্ধে অজ্ঞ আমরা বলিতে পারি না। কিন্তু ইহাই সম্ভব বলিয়া মনে হয়, যে, গবন্মের্ণট চান, যে, নখরট পুলিসের ও তদ্বিধ অন্ত সরকারী লোকদেরই একচেটিয়া থাকে, এবং যে-কেহ নখর চায় ও রক্ষিত হইতে চায়, তাহাকে পুলিসের ও শাসকদের একান্ত কৃপাপ্রার্থী হইতে হয়। এরূপ ব্যবস্থায় দেশের লোকদের মনুষ্যত্ব সংরক্ষিত ও বৰ্দ্ধিত হইবার সম্ভাবনা অতি কম। যে-কোন উপায়ে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করা ও রাখ| গবন্মেটের একমাত্র বা প্রধান উদ্বেগু হইতে পারে না – তাহা মানুষদের হাত পা কাটিয়া ও দাত তুলিয়া দিলে সকলের চেয়ে শীঘ্র ও ভাল করিয়া হইতে পারে। কি