পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] কাটিয়া গেল। তিনি বিনা ভূমিকায় জিজ্ঞাসা করিয়া পলিলেন, “হ্য। গ, চটু করে যে তীর্থে বেরোবে বলে’ বসলে, কথাট একবার ভাল করে’ ভেবে দেখেছ ?” হরিকেশব বলিলেন, “বেশী ভেবে দেখলে সংসারে কোনে কাজ করা যায় ন! ” তরঙ্গিণী অসহিষ্ণুভাবে বলিলেন, “বুঝলাম হয় না ; কিন্তু এই ঘর সংসার কাজকৰ্ম্ম আপিস আদালত সব একদিনের মধ্যে ছেড়ে বেরোনো কি কখনও সম্ভব ?” হরিকেশব হাসিয়া বলিলেন, “সম্ভব হ’বে না কেন ? আজ যদি যমে ডাক দিত, তা হ’লে কি বেশ অনায়াসেই যেভাম না ?” তরঙ্গিণী রাগিয়া উঠিয়া বলিলেন, “দেখ, যা নয় তাই সুবালো না । তাতে এতে অনেক প্রভেদ । তোমাকে যাবার ব্যবস্থা কবৃতে হবে, ভাবতে হবে সেখানে গিয়ে কেমন করে’ কি ভাবে কোথায় থাকৃবে আবার এখানকার ব্যবস্থাও তোমাকেই করতে হবে। যে সংসার তোমার মুখ চেয়ে আছে, সে ত তুমি ঘাচ্ছ বলেই আজই নিজের পায়ে দাড়িয়ে যাবে না। ফিরে এসে তার সব অব্যবস্থার বঙ্কি তোমাকেই ত পোয়াতে হবে। কেন তবে আগে থেকে একটু ভেবে চিন্তে কাজ কর না ?” হরিকেশব বলিলেন, “জীবনে অনেক ভেবেছি । সমস্ত সংসারের জন্য ভাবতে হ’লে আজ আর আমার চলবে না। আজ আমার মনে সস্তানের যে ভাবনাটা সব-চেয়ে বড় হ’য়ে উঠেছে আমি কেবল সেই দিকেই দৃষ্টি রাখতে চাই। যদি অন্য দশ দিকে তাকাই তা হ’লে এত ভাববার এত দেখবার জিনিষ সাম্নে এসে পড়বে যে আমার কৰ্ত্তব্য হ’তে আমায় তা চু্যত না করে ছাড়বে না। সেজন্তে ওসব দিকে আমি চোখ বুজেই থাকুব ।” তরঙ্গিণী বলিলুেন, “কিন্তু সস্তান ত তোমার আর পাঁচটিও আছে ; তথ্যের প্রতি কি তোমার কৰ্ত্তব্য নেই ? তাদের তুমি ফেলে যাবে কি করে? বড় ছেলেট। সবে আদালতে বেরোচ্ছে, তাকে তুমি ফেলে গেলে সে দাড়িয়ে উঠবে কি করে’ ? মেজটার আজ ক’বছর বিয়ে দিয়েছ, কিন্তু বৌটি আনবার কোনো ব্যবস্থা করে দিলে وی حس- ۹ জীবনদোলা ৫৭১ না। তার অল্প বয়স, চারধারে সকলের সঙ্গে মিশছে, নিজের একটা সাধ-আহ্লাদ কি হয় না ? তুমি যদি তা না বোঝ ত সে কি বেহায়ার মত নিজেই সব জোগাড় করতে যাবে? আর পাৰ্ববেই বা কি করে সে ছেলেমাছুষ ? ছোট ছেলেগুলো বাপ মা ছেড়ে কোনো দিন থাকেনি, পড়াশুনা নিয়ে থাকে, জানে মা বাবা তাদের সব স্থখ দুঃখের ভার নিয়ে রয়েছে, কোনো ভাবনা নেই। হঠাৎ তাদের এমনি আচমকা ফেলে চলে গেলে তোমার কৰ্ত্তব্যের কি কোনো ত্রুটি হবে না ?” * , -" হরিকেশব এককথায় বলিলেন, “কিন্তু তারা ষে পুরুষ। সংসারে তারা লড়তে জন্মেছে, সংসার তাদের লড়বার অধিকারও দিয়েছে। আর এ অসহায় শিশু বালিকা ; মেয়ে হয়ে জন্মানোই এদেশে তার এক পরম দুর্ভাগ্য, তার উপর নূতন একটা দুর্ভাগ্যের বোঝা আজীবনের জন্য তার কচি মাথার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে মুক্তি পাবার কি চাইবার তার কোনো অধিকার নেই। আমি তাকে যদি তার মুক্তি অর্জন করে” নেবার ক্ষমতা না দি, তাকে যদি নিজের জীবনটুকু নিজের বলে’ পাবার অধিকারী হতে সাহায্য না করি, তা হ’লে আমার নিজ পাপের এবং পূৰ্ব্বপুরুষের জমানে সমাজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত ত হবে না। একটা মাহুষ সব কাজ করতে পারে না, তরু ! ছেলেদের জন্তে আমরা অনেক পুরুষ ধরে অনেক করেছি। আমি নিজেও কিছু কিছু করেছি। কিন্তু মেয়েকে কেবল বন্ধনের পর বন্ধনের জালে জড়িয়ে ভালবাসার সব দায়িত্ব শেষ করেছি। আজ যদি আমার সে দায়িত্ব-বোধ একটু জেগে থাকে, তা হলে আমার অন্ত কৰ্ত্তব্যের ক্রটি হ’লেও তুমি আমাকে ক্ষমা কোরে, তরু ! আমার হাতে-গড়া এই ঘর-সংসার, আমার নিজের সস্তান-সন্ততি, বৃদ্ধ মাকে ছেড়ে যেতে আমার কি কষ্ট হচ্ছে না মনে কর ? আঞ্জ তীর্থ বলে পথে বেরচ্ছি, কিন্তু কবে যে ফিরতে পার্ব তা ত জানি না ।” . তরঙ্গিণী নিরুপায় হইয়া স্বামীর হাত ধরিয়া বলিলেন, “ঘরে থেকে কি তুমি তোমার মেয়েকে মুক্তি দিতে, শিক্ষাদীক্ষা দিতে, সকল অধিকার দিতে পার না ?”