পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] জীবনদোলা ¢ፃ¢ দিল । তরঙ্গিণী ছেলেদের দেখিয়াই তাড়াতাড়ি রান্না ঘরে ছুটিয়াছিলেন জলখাবারটা নিজের হাতে সাজাইয় দিতে। সকলে আসিল, শঙ্কর আসিল না দেখিয়াই তিনি প্রমাদ গণিয়াছিলেন। মৃণালিনীর ছেলে ট্যাবাকে দৌড় করাইলেন শঙ্করকে ডাকিয়া আনিতে । সে আসিয়া বলিল, “শঙ্করদ, বাজার থেকে খাবার আনিয়ে খেয়েছে। সে বললে তার অনেক পড়া বাকি, এখন আসতে পারবে না।” তরঙ্গিণীর মুখ শুকাইয়া গেল । তিনি সেজ ছেলে মহেশকে বলিলেন, “একবারটি ডেকে আন, বাবা । এই কি রাগ করবার সময় ! পড়া যে কত করছে, তা আমি বেশ জানি । এতক্ষণে কেঁদে বালিশ ভেজাচ্ছে । এমন কচি ছেলেটাকে কার কাছে কোন ভরসায় যে ফেলে যাচ্ছি, ভগবান জানেন ।” মহেশ বিরক্ত হইয়া বলিল, “আমি পারি না তোমার স্থ কী ছেলেকে ড:কৃতে । তেধেড়েঙ্গা একটা তালগাছের মত লম্বা ছেলে, একমুখ দাড়ি গজালেই হয় ! তিনি এখন নোলকপর খুকীর মত প্যান প্যান করবেন, আমার দায় পড়েছে ডাকৃতে । তোমাদের জালায় বাড়ীতে পড়াশুনো করাই শক্ত হ’য়ে উঠেছিল । আমার ত ভালই হ’ল, আমি এবার হষ্টেলে চলে’ যাব, তোমাদের ওসব নাকেকাদা ছেলে-টেলে সাম্লাতে পার্ব না।” ম বুঝিলেন, এই রুক্ষপথেই মহেশের অভিমানও উপচিয়া পড়িতেছে। সে যে র্তাহাদের কোনো তোয়াক্কা রাখে না এইট। জোর করিয়া দেখাইয়াই সে আপনার অভিমান চাপা দিতেছে । মহেশ এক এক গ্রাসে অনেকখানি করিয়া খাবার মুখে পূরিয়া আর বেশী বাক্যব্যয় না করিয়া কোনোদিকে না তাকাইয়াই ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল। তরঙ্গিণীর মনে হইল, মহেশের মুখখানা আজ বড় কালো আর শীর্ণ দেখাইতেছে। এতদিন তিনি ছেলের মুখের দিকে ভাল করিয়া তাকাইবারও যে অবসর করিতে পারেন নাই ইহার,জন্ত মনে ধিক্কার জন্মিতে লাগিল। আজ ত আর সময় নাই । আপন হইতেই তাহার চোখ আর কয়টি ছেলের মুথের উপর বুলাইয়া গেল ; মায়ের চোখে সকলকেই রুক্ষ বিমর্ষ নিরানন্দ বলিয়া বোধ হইল । তাহারা যেন আজি সকলেই কথা বলিতে ভুলিয়া গিয়াছে। তরঙ্গিণী ভুলিয়া গেলেন যে, প্রতিদিনই তাহারা প্রায় এমূনি নীরবেই আহার সমাধা করিয়া চলিয়া যায়। আজ তাহার আপনার অন্তরের ব্যাকুলতাই যে নীরবতাটাকে এত দুঃসহ করিয়া তুলিয়াছে এবং তাঁহাদের রুদ্ধ বেদন যে তাহ আরো প্রগাঢ় করিয়া তুলিতেছে সে-কথা ভাবিয়া দেখিবার শক্তি তখন তাহার নাই। ছেলেরা চলিয়া গেল। মা'র ইচ্ছা করিতেছিল আর কিছুক্ষণ তাহাদের চোখের সাম্নে বসাইয়া একটু আদর করিয়া গায়ে মাথায় হাত বুলাইয়া কোনোপ্রকারে আপনার বিচ্ছেদ ব্যথাট। তাহাদের বুঝ:ইয়া দেন। কিন্তু গম্ভীর প্রকৃতির বিজ্ঞ ছেলের অনেক কাল এসব আদর-আবারের ' বাহিরে চলিয়া গিয়াছে, তাই আজ মনে ইচ্ছা জাগিলেও কাজে তিনি কিছু করিতে পারিলেন না। কেবল যাহাকে পারিতেন সেই তাহার উনিশ বৎসরের শিশুপুত্র শঙ্কর আজ কেবলি পলাইয়া বেড়াইতেছে। অন্য দিন হইলে সে এর মধ্যে দুই একবার আসিয়া তাহার গলা জড়াইশ যাইত । কিন্তু আজ সমস্ত সংসার যে তাহার বিধি-ব্যবস্থার আশায় চাহিয়া আছে ; তরঙ্গিণীকে ছেলের মায়া ভুলিয়া, উঠিতে হইল । বধুকে দেখিয়া বৃদ্ধ শাশুড়ী কাদিয়া ফেলিলেন, “ম, এই কি তোমার তীর্থ থিধন্মের সময়, মা ? আমি বুড়ী ঘরে পচ ব আর আমার বাছার পথে পথে ঘুরে বেড়াবে? ওই কেশবের হাত ধরে কত দুঃখ সয়ে এই সংসার গড়ে’ তুলেছিলাম। মা রাজরাণী যখন ঘরে এলে তখন কত আশা করেছিলুম তোমাদের কোলে মাথা দিয়ে চোখ বুজ ব। আজ কার হাতে সোনার সংসার ফেলে দিয়ে জোড়ে আমার ঘর আঁধার করে দিয়ে যাচ্ছ মা ? ঐসব কচি কাচা ছেলে বেী ঝি ওদের কার মুখের দিকে তাকিয়ে বুকে বল পাব বলে। ত ?” তরঙ্গিণী বলিলেন, “মা, তোমার ভাবনা কি ? মেজবেী ছোটবেী রয়েছে, তারা তোমার কত যত্ন-আদর করবে, দেখে। তখন আমার কথা মনেই পড়বে না। আজ