পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sேe প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩ee [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড গিয়াছে। রবি কবির আজকালকার অধিকাংশ পাঠকই উহার অস্তিত্বমাত্র অবগত নহেন। ঐ সংস্করণটির অভাবে মহাকবির সুবিশাল কাব্য-সাহিত্য অকুশীলনের অশেষবিধ ক্ষতি হইতেছে—এই কথাটি আমি সাহিত্যরসিকগণকে স্মরণ করাইয়া দিবার অনুমতি চাই। যিনি উহা প্রকাশ করিবেন তিনি এই নিদারুণ অভাব দূর করিয়া সাহিত্যের একটি বিশেষ কল্যাণ সাধন করিবেন। রবীন্দ্রনাথের কাব্যের চার জাতীয় সমালোচনা হইয়াছে, বলিয়াছি। প্রথম অন্ধ-নিন্দামূলক। বহুংখ্যক লোক আছে যাহারা এই কাব্য বুঝিতেও পারে না এবং ইহাতে কোনো রসও পায় না । ইহার অনেক কারণ। প্রথমত: অস্তুত পক্ষে শত করা ৬০ জন লোকের সাধারণ কার্ষ্য বুঝিবার প্রাণ, জ্ঞান, কল্পনাশক্তি এবং রসাচুভূতির অভাব। অবশিষ্ট ৪০ জনের মধ্যে বোধ হয় অস্তুত ৩৫ জনের রবি-বাবুর কাব্য যে প্রকৃতির তাহা বুঝিবার প্রাণ, জ্ঞান, কল্পনাশক্তি এবং রসামুভূতি নাই। এই ৩৫ জনের মধ্যে পাচ ছয় জন সংস্কৃত বিদ্যায় পারদর্শী। এদের আবার কালিদাস ছাড়িয়া ভবভূতিতে গেলেই গোলমাল ঠেকে। কারণ ভবভূতি সংস্কৃত কবিদের মধ্যে সব-চেয়ে রোমাণ্টিকৃ। আবার কালিদাসেরও শকুন্তল ছাড়িয় বিক্রমোর্কশীতে এমন কি কুমার ছাড়িয়া মেঘদূতে গেলেই .বাধ-বাধ বোধ হয়। যাহা হোক এইসমস্ত পাঠক রবি-বাবুকে বুঝিতে না পারিয়া প্রাণ ভরিয়া গালাগালি দিয়া থাকেন। ধারণার, কল্পনার, চিস্তার ও ভাবের আমাদের যে-সমস্ত গভীর দাগ-কাটা লাইন আছে, যেসমস্ত বাধা পাকা সড়ক’ আছে—সেইসব লাইনে চলিলে রবি-বাবুর কাব্যের অর্থ পাওয়া যায় না। অথচ পণ্ডিতবর্গ এবং তৎপথগামী ব্যক্তিগণ সেইসব ধারা কিছুতেই ত্যাগ করিতে পারেন না। এইসব লক্ষপদচিহ্নাঙ্কিত চিরপুরাতন চিন্তা পথনিচয় ব্যতিরেকেও আরো শত শত পথ আছে, ইহা তাহারা কল্পনাও করিতে চান না। ফলে রবি-বাৰু ইহাদের কাছে এক চিরবিরক্তিকর রহস্য-নিলয় হইয়া রহিয়াছেন । আবার বহু লোক আছেন, রবি-বাবুর এক বর্ণও ন পড়িয়াই ভৎসনামূলক সমালোচনা আরম্ভ করিয়া দেন। অধ্যয়ন করার কষ্টটুকু ইহারা চান না ; নিন্দ করার আনন্দটুকু ছাড়িতে পারেন না । তারপর অন্ধ-প্রশংসা-মূলক সমালোচনা । নীতিবিচারের দিক্ হইতে দেখিলে যে-কোনো প্রকারের নিন্দার চেয়ে যে-কোনো প্রকারের প্রশংসা অনেক ভাল জিনিষ। কারণ, নিন্দ অসতের স্বভাব আর প্রশংসা সতের স্বভাব। কিন্তু সাহিত্যে দুই-ই সমান ভাবে অবহেলার যোগ্য । অন্ধ প্রশংসাটি হইতেছে "আহ! মরি মরি !" ভাব । কি সুন্দর । কি গভীর ! কি ভাব ! কিন্তু সৌন্দর্য্য, গভীরতা এবং ভাব কোথায় এবং কেমন, তাহার কোনে ঠিকানা পাইবার উপায় নাই। অর্থাৎ আমার খুব ভাল লাগিয়াছে, সেই ভাল-লাগাটা কেন তোমাদের প্রত্যেকের ভাল লাগিবে না ; তোমরা দেখ, আমার কত ভাল লাগিতেছে : এই জাতীয় সমালোচনার শ্রেষ্ঠ উদাহরণগুলিকে নিম্নGesälä Impressionistic criticism « fabto-fafos অতুভাবাত্মক সমালোচনা বলা যায়। কিন্তু ইহার অধিকাংশ পাঠ করা মানে অযথা সময় হত্যা করা । এইপ্রকার সমালোচনার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ “কাব্য সুন্দরী” নামক একখানি বঙ্কিমের উপন্যাসের ‘সমালোচনা’-গ্ৰন্থ । আমাদের দেশের মাসিক পত্রিকাগুলির গ্রন্থ-পরিচয়ের পাতা উন্টাইলে এই শ্রেণীর সমালোচনা অনেক পাওয়া যাইবে । সমালোচনা-সাহিত্যের অনেকখানি জুড়িয়া রহিয়াছে— বর্ণনামূলক সমালোচনা, শিক্ষক-মহাশয়ের ছেলেদের পাঠ্য কবিতাগুলির Paraphrase লিখিয়া দিতে যাহা করেন ইহা ঠিক তাই। কবি কবির ভাষায় যাহা বলিয়াছেন তাহার মধ্যে যাহা যাহা সুন্দর ও উত্তম ঠিক সেইগুলি বাদ দিয়া অবশিষ্ট চলনসই গদ্যের ভাষায় প্রকাশ করা এই সমালোচনার বিষয় । রবীন্দ্র .নাথের যে-সমস্ত সমালোচনা বাহির হইয়াছে তাহার তিন চতুর্থাংশ এই শ্রেণীতে পড়ে। উদাহরণ অনেক দিতে পারি, কিন্তু তাহ অশোভন এবং অনাবশ্যক। এই