পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ) এবং এই প্রাণের স্বরূপ ও স্বভাব নির্ণয় । তারপর দেখাইতে হইবে—এই এক প্রাণ কেমন করিয়া বহু অঙ্গ স্বজন করিয়া তাহাদের প্রত্যেকের মধ্যে স্পন্দিত হইতেছে এবং কেমন করিয়া প্রত্যেক অঙ্গই ঐ এক প্রাণের ক্রিয়ার সহায়তা করিবার জন্য নিয়োজিত রহিয়াছে। যদি কোনো কবিতায় দেখা যায় যে বিভিন্ন অঙ্গ বা বিভিন্ন অংশ কোনো এক অখণ্ড কেন্দ্রীভূত শক্তির আমুগত্য না করিয়া বিভিন্ন পথে বিভিন্ন কার্ষ্য করিতেছে—তৎক্ষণাং বুঝিতে হইবে যে, ইহা কবিতা হয় নাই । যদি দেখা যায়, ঐ প্রাণ-স্বরূপ রসটি সৰ্ব্ব অঙ্গেই ক্রিয়া করিতেছে, কিন্তু এক অঙ্গে নাই। তখনি বুঝিতে হইবে যে, ঐ অঙ্গটি ব্যর্থ । উহাকে ছেদন করা কৰ্ত্তব্য। যদি অনুভূত হয় কতকগুলি অবয়ব প্রাণ-শক্তি সতেজ ক্রিয়াশীল আর কতকগুলি অবয়বে কেবল অল্প অল্প ধিকি-ধিকি চলিতেছে—বুঝিতে হইবে কবিতায় গুরুতর দোষ আছে। ইহা উচ্চ শ্রেণীর যদি বোঝা যায় কবিতার কতকগুলি অঙ্গ অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় অত্যন্ত বড় অথবা অত্যন্থ ছোট হইয়াছে, অম্নি বুঝিতে হইবে রচনার সামঞ্জস্য নাই—ইহা ‘স্থষম’বিহীন—কদাকার—সুন্দরের বিপরীত। এইভাবে একে একে বিচার করিতে আরম্ভ করিলে যে-কোনো কবিতার সমস্ত দোষ—সমস্ত ক্রটী—সমস্ত হীনতা অনায়াসে ধরা পড়িয়া যাইবে । এদিকে প্রাণের স্বরূপ বিচারে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে প্রাণের যোগাযোগ নির্ণয়ে, অবয়বসমূহের সাম্য-বৈষম্যের পরিমাপ—কোন কবিতার কতখানি মূল্য তাহা একেবারে কড়ায় গণ্ডায় হিসাব করা হইয়া যাইবে । সাধারণতঃ যখন বলা হয় কবিতাটি ভাল বা সুন্দর অথবা খারাপ বা বিশ্ৰী তখন ঠিক কি পরিমাণে কত ডিগ্রিতে ভাল বা স্বন্দর, অথচ খারাপ বা বিশ্ৰী তাহার কিছুই ঠিকানা থাকে না। একটা আন্দাজী হাকুচা কথা বলিয়া দেওয়া হয়, যার কোনো অর্থ হয় ন। কিন্তু কবিতার গুণ-দোষগুলি যতদূর সম্ভব ফুট-রুল দিয়া বা মার্ক-কাটা টেপ দিয়া মাপিয়া দেওয়া চাই— অথবা তুলা-দণ্ডে তৌল করিয়া দেওয়া চাই। সমালোচনার নিদিষ্ট বিধান—স্বল্প পরিমিত নিয়ম থাকা আবশ্বক। জোনাকিও উজ্জল, কেরাসিনের প্রদীপও উজ্জল, তারাও エ工を I কাব্য-সাহিত্য সমলোচনা &లి উজ্জল, চাদও উজ্জল, সুৰ্য্য ও উজ্জল । সুতরাং সবই এক প্রকার হইবে কি ? কেহ বলে চণ্ডীদাস বড়, কেহ বলে বিদ্যাপতি বড়, কেহ বলে গোবিন্দদাস বড়, আবার কারো কারে। মতে কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী সব-চেয়ে বড় । কারো বিচারে মাইকেল, কারো বিচারে নবীনচন্দ্র, কারে। বিচারে হেমচন্দ্র, কারো বিচারে রবীন্দ্রনাথ সব-চেয়ে বড় কবি। আবার বহুলোকের মুখে শুনিতে পাই—পাণ্ডিত্য ও বিজ্ঞতার অভিমানে বলিয়া থাকেন—এইপ্রকার তুলনা করাই মূখত। মূখত নিশ্চয়ই নয়। এপ্রকার তুলনা অবত করণীয়। নতুবা প্রকৃত রসাস্বাদন হইবে না। হিসাব করিয়া অঙ্ক কসিয়া বলিয়া দেওয়া যায়—এই যাদের নাম করিলাম তাহাদের মধ্যে কে, কি পরিমাণে, কোন · বিষয়ে, কাহার চেয়ে কি ভাবে বড়। তাহাই যদি বলা না হইল তবে সমালোচকের গণ্ডগোলের আবশ্বকতা কি ? তুলনা অনেক দূর চলিবে এবং যে যে বিষয় তুলনার যোগ্য নয় তাহা কেন নয় তাহা বুঝাইয়া দিতে হইবে। শেষ পর্য্যন্ত দেখাইতে হইবে—এইটি আঙ্গুরের রস, এইটি বেদানার রস, এইটি আমের রস, এইটি কাঠালের রস । মৃতরাং ইহার বিভিন্ন। ইহাদের বিষয়ে আমের চেয়ে আঙ্গুর ভাল—এইপ্রকারের তুলনা চলিবে না। এইখানে রুচি-ভেদের বিষয়। কিন্তু এখানেও বলা চলিবে—আঙ্গুর হিসাবে ইহা কতখানি ভাল, আম হিসাবে ইহা ততটা ভাল নয়, ইত্যাদি । সংক্ষিপ্তভাবে এই সমালোচনার আদশ বলিলাম। এই আদর্শানুসারে আমি নিজ সমালোচনা করিতে পারিব, এপ্রকার স্পৰ্দ্ধা আমার নিশ্চয়ই নাই । এদেশে কত ইন্দ্র-চন্দ্র হদ হইল—অবশেষে কি জোনাকি—? এই প্রবন্ধের উপসংহারে পূৰ্ব্বে যে দুই ছত্র ইংরেজী কবিতায় নানা প্রকার সমালোচনার নমুনা দিয়াছি তাহারি আরো একপ্রকার সমালোচনার নমুনা দিব—যাহা ঐ চাতুৰ্ব্বর্ণের বহিভূত হইবে। Hail to thee, blithe Spirit ! Bird thou never wert.