পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\bobo পাইল, যাক শাশুড়ী শালী সমেত অশোকাকে ত ফাকি দেওয়া যাইবে । ললিতমোচনের হাসি পাইল । জিনিষটা কত সহজ অথচ তাহার কাছে কি অপরূপ স্বৰ্গই না বহন করিয়া আনিবে ! পাশের দুটি বাড়ীর চিলে কোঠার ছায়া দুপুরের দু’তিন ঘণ্টা ছাড়া সব সময় ললিতের ছাদে পড়ে, একটি মাদুর আর লেখার সরঞ্জাম আনিলেই চলিবে। পাশের বাড়ীর আর্টিষ্টের চেয়ে এবিষয়ে সে অধিক ভাগ্যবান । লিখিবার সরঞ্জাম যৎসামান্ত । একদিন তাহার প্রাণে স্বজনের যে অপার্থিব প্রেরণা করিত—দৈনন্দিন জীবনধাত্রার পঙ্কিলতা ও ধিক্কারে যাহা সে আজ হারাইয়া ফেলিয়াছে, তাহ আবার বুঝি ফিরিয়া আসিবে। হয় তো বা জীবনের আদর্শ ও সার্থকতা সে লাভ করিবে ; সেই অদম্য শক্তির আগমনী তখনই তfহার বুকে বাজিতে লাগিল । ত হার মনে বর্তমানের হতাশ্বাসকে চাপ দিয়া ভবিষ্যতের আশ পুঞ্জীভূত হইতে লাগিল। তাহার চিন্তা-ধারায় চেতনা সঞ্চারিত হইল । সে বঁচিবে— তাহাকে যে অনেক কিছুই দিতে হইবে । পরদিন ভোরে উঠিয়াই ললিতমোহন চুপি চুপি একটি মাদুর, একটি ডেক-চেয়ার ও একটি ছোট্ট জল-চৌকী ছাদে রাখিয়া আসিল । সকালে চা থাইয় সে খাতা পেন্সিল হাতে লইয়; বাহির হইয়া গেল এবং অতি সন্তৰ্পণে ছাদে উপস্থিত, হইল। প্রথম কয়েক দিন সে একটি লাইনও লিখিতে পারিল না । মুক্তি ও শান্তির আনন্দ তাহার মনে উপচিয়া পড়িতেছিল। সে ডেকচেয়ারখানিতে বসিয়া দূর দিগন্তে দৃষ্টি প্রসারিত করিয়া চুপ করিয়া পড়িয়া রহিল। টলমল অশোকার কোনো সন্দেহ হইল ন; যে, স্বামী তাহাকে এত কাছে থাকিয়া ফাকি দিতেছে। কিছুকাল হইতেই স্বামীর দিকে তাহার বিশেষ দৃষ্টি ছিল না। খাতা লইয়া ললিতকে বহিরে যাইতে দেখিয়া ভাবিল-লাইব্রেরীতে যাইতেছে —এমন সে প্রায়ই যায় । এম্নি করিয়া সাত দিন কাটিয়া গেল । ইতিমধ্যে ললিতমোহন বরষা-বাদলের দিনে আত্ম প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৩ { ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড রক্ষা করিবার জন্য একটি তেরপল সংগ্ৰহ করিয়া লইয়া পাশের বাড়ীর চিলে-কোঠার গায়ে খুটি লাগাইয় তাহ টাঙ্গাইবার ব্যবস্থা করিয়া রাখিল । ললিত সকাল-সন্ধ্যা বাহিরে যাইতে লাগিল। শ্বাশুড়ী একদিন বলিলেন, “লাইব্রেরীতে বুঝি ঢের কাজ হয় ।” তাহার স্বর শ্লেষপূর্ণ। অশোক আহত হইল। তাহার চক্ষু জালা করিতে লাগিল । সম্প্রতি স্বামীর প্রতি বীতরাগ হইলেও সে স্বামীকে ভালবাসিত ও স্বামীগর্বে এখনো সামান্ত গৰ্ব্বিত ছিল । সে নিজেও আজকাল স্বামীর বিরুদ্ধে অনেক কথাই বলিয়া থাকে, কিন্তু তাহার কথার অভিমান আছে, মায়ের মত জাল নাই । অবশ্ব মেয়ের শুভাশুভ চিন্তায় মাকে অনেক কিছু ভাবিতে হয় ও মেয়ের অমঙ্গলাশঙ্কায় মায়ের এই কটুক্তির বিরুদ্ধে বলিবারও কিছু নাই। তবু সে ব্যথিত হইল, ম; মেয়ের এই ভাবান্তর লক্ষ্য করিলেন না । তাসের আড় নিয়মিত জমিতে লাগিল । রবিবাবুর নূতনতম গানের স্বরলিপি হইতে বালীগঞ্জের আধুনিকতম ফ্যাসন পর্য্যন্ত কথার আর শেষ ছিল না। অশোকার এসব আর ভালো লাগে না, এত গোলমাল সত্ত্বেও তাহার কাছে ঘরগুলি ফাক-ফাক ঠেকে। ললিতের অভাব সে এখন অনুভব করে । তাহার মনে হয় স্বামী বহুদূরে চলিয়া গিয়াছে। রাত্রিতে শুইবার সময় এই দূরত্বটুকু বিশেষ ভাবে ধরা পড়ে ললিত তখন কাব্য-স্বষ্টির আনন্দে ভরপুর ; মুখচোখ দিয়া তাহার আনন্দ ঠিকুরিয়া পড়ে ; অশোক তাহার ভাগ পায় না। স্বামী যেন তাহার অস্তিত্বও বিস্মৃত হইয়াছে। স্থান-পরিবর্তনের দশম দিনে ললিতমোহনের মুছাহত বাণী পুনর্জাগ্রত হইল ; প্রকাশের বেদনায় তাহার মস্তিষ্ক টনটন করিয়া উঠিল, সে লিখিতে স্বরু করিল। বন্যার মত ভাব কলমের মুখে চুটিয়া আসিতে লাগিল । সে তাহার আংশিক লিখিত উপন্যাসখানি নূতন করিয়া লিখিতে আরম্ভ করিল । তাহার ‘অস্তধ্যামী’ তাহাকে লইয়া থেলিতে লাগিলেন । যাহা সে ভাবে নাই কেমন করিয়া তাহাই সে প্রকাশ করিতে লাগিল । তাহার অন্ত