পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] দুষ্টটি উপন্যাস ধে মামুলি ভাবে লেখা হইয়াছিল এটি তাহ। হইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের কষ্টল । বিশ্বমানবের মুখদুঃখের, আশা-আনন্দের চিরন্তন ব:রত। সে লিপিতে বসিল । সে যেন এক নূতন মন পাষ্টয়াছে । কিছুদিনের রুদ্ধ আবেগ যেন অদম্য শক্তি সংগ্র করিয়। বন্যার বেগে বাহিরে আসিতে চায়। বঞ্চিতের ক্ৰন্দন, ব্যথিতের দুৰ্ব্বলতা এই বন্যাবেগে কোথায় ভাসিয় গেল ; রসে গানে তেজে সৌন্দর্য্যে তাহার নূতন উপন্যাসখানি অপু : ষ্ট কষ্টয়া দাড়াইল । প্রত্যহ পাঁচ ছয় ঘণ্ট। লেখার পর পরিশ্রান্ত অথচ স্থাবিষ্ট চিত্ত লইয়। সে বহির্জগতের দিকে দৃষ্ট প্রসারিত করে। সমস্তই কেমন যেন অপার্থিব আনন্দে ভরপুর। বিগত তিন বৎসর এই আনন্দ কোথায় যেন লুকাইয়াছিল। লেখা কাগজগুলি হাতের মুঠার মধ্যে ভাজ করিয়। সে ড়েক-চেয়ারে আসিয়া বসে ; সন্ধ্যাপ শিশিরে কাগজগুলি ভিজিতে থাকে ; শ : বাতাসের স্পর্শে তাঙ্কার সমস্ত ক্লাস্তি দূর হইয়া যায়। সে উঠিয়া পায়ুচারি করিতে থাকে ; সঙ্গে-সঙ্গে পরের দিনের লেখা গুলি মনের মধ্যে গুঞ্জন কবিতে থাকে । শীত আসিয়। পড়িল । প্রথম প্রথম সকালে ও সন্ধ্যায়" কাজ করিতে ললিতের কষ্ট হইত। ক্রমে তা ১। সহিয়া গেল । তাহার দেহ ও মন ভারী হালকা হইয়া গিয়াছে। মাঝে মাঝে সন্ধ্যার আগে পাশের বাড়ীর ছেলেদের দেখাদেখি সে হাত পা ছুড়িয়া ব্যায়াম করিয়া লয় । দৈনন্দিন জাগতিক জীবনযা-ত্রা হইতে সে এখন বহুউদ্ধে । তাহার এই গোপন-বিহারের কথ। সে অশোকার নিকট হইতে সস্তপণে ঢাকিয়। রাখে। বারান্দায় দুই একদিন অশোকার সহিত তাহার দেখা হইয়াছে ; সে সোজাস্বজি ঘরে ঢুকিয়াছে। অশোক অমুসন্ধিৎস্থ নয়— সে কিছু সন্দেহ করে নাই । না, কিছুতেই তাহাকে এই আকাশবাসরের কথা জানিতে দেওয়া হইবে না। সে তাঙ্গর উপার্জিত সমস্ত অর্থে সংসার চালাইতে থাকুক কিন্তু তাহার বড় সাধের সাধনাকে সে যখন অবহেলা করিয়াছে তখন তাহার স্থখদুঃখের খবর সে নাই জানিল । তা ছাড়া তাহার অনন্দের খানিকট এই গোপনতার আকাশ-বাসর vyêპ জন্য ষ্ট । স্ত্রীর নিকট হইতে তাহার যে এই শারীরিক ও মানসিক বিচ্ছেদ ঘটিয়াছে ইহাতে সে দুঃখিত নয়। তাহার দিনের কাজে সঙ্গী এখন কেবল সেই পাশের বাড়ীর পরিচয়-না-জান আটিষ্ট । তাহার শিল্প-সাধনা সে লক্ষ্য করে ও উপভোগ করে। লোকটি খুব পরিশ্রমা। শীষ দিয়া গান গাহিয়! সে অক্লাস্ত ভাবে কাজ করিয়া যায় এবং অবসর-মত মডেলদের লইয়া চিত্তবিনোদন করে । আশুরালে থাকিয়া তাঙ্গদের নিষিদ্ধ প্রেমাfভনয় সে দেখিয়াতে । মাঘের এক সন্ধ্যাযু তাহার প্রাত্যহিক সান্ধ্যবিচারে বাধা পড়িল । যে সংসারকে সে নীচে ফেলিয়া আসিয়াছে ভাবিয়াছিল—তাহারই এক বেদন-তরঙ্গ তাঙ্গর আকাশবাসর আলোড়িত করিয়া দিল । e সমস্ত দিন গুমোট করিয়াছিল ; চারিদিকে কেমন একটা নিরানন্দ ভাব ; খণ্ডমেঘ-ভরা আকাশ পাণ্ডুর ; চিমনী গুলি যেন বিষোদগীরণ করিতেছিল । সমস্ত সতর মূৰ্ছাপন্ন ; আনন্দ-কলোচ্ছ্বাসের স্থান সঙ্করের কোলাহল খালের জল কালে ইয়া যেন আসন্ন কি-একট। দুর্য্যোগের প্রতীক্ষা করতেছে । প্রথমদিকটা ললিতমোহন এসব কিছুই লক্ষ্য করে নাই ; সে আপন মনে লিখিয়া যাইতেছিল । হঠাৎ অস্তগামী স্থয্যের দিকে দৃষ্টি পড়াতে সে চমকিয়া উঠিল। বোধ হইল যেন স্বৰ্য্যরশ্মি বেদনায় পাণ্ডুর ; চারিদিকে কেমন একটা থমথমে ভাব । সে ছাদের কিনারায় আসিয়া দাড়াইল । আর্টিষ্টের ষ্টুডিওর স্কাইলাইট বন্ধ ছিল ; ভিতরের আলো খালি দেখা যাইতেছে । ভিতর হইতে বঁাশীর আওয়াজ কানে আসিতেছে ও কাশীর তালে তালে মেঝেতে পা-ফেলার শব্দ শোনা যাইতেছে । সহসা সেই মেীন সন্ধ্যায় ললিতের আকাশবাসর কেমন যেন ফাকফাক ঠেকিল ; সে সেন জনশূন্য মরুভূমির মাঝে পড়িয়া । তাহার লেখার কাজ প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে । ভিতরের আগুন নিব-নিব হইয় তাহাকে যেন ভস্মমাত্র পরিণত করিয়াছে । সে একজন সঙ্গী চায়। অনন্ত শূন্যে নিজেকে ভারী একাকী’ মনে হইল। হঠাৎ সম্মুখে দৃষ্টি পড়াতে দেখিল সে একা নহে। ব্যথিতের ক্ৰন্দন বলিয়। বোপ ইতেতিল ।