পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] আকাশ-বাসর やら> তিনি আমার কাছে আসেন বাইরের সব অশুচি গায়ে মেখে ; আমি সহ করতে পারি না ! নিজেকে বডড অপমানিত মনে হয় ।” ললিত স্তব্ধ হইয়া গেল। ইহার উত্তরে সে কি কথা বলিবে ? জীবন্ত প্রাণীকে একেবারে মারিয়া না ফেলিলে যেমন তাহার হৃদস্পন্দন বন্ধ করা যায় না—এই অশুচির ব্যথা ভুলাইবার জন্য সে আর কিছু বলিতে পারে না। মেয়েটি কষ্টে আপনাকে সংযত করিয়া লইয়া বলিল—“এইসব দেখে শুনে আমার জীবনে ধিক্কার এসেছে—আমি আর পারি না।”—বুকের উপর ন্যস্ত হাত দুখানি দারুণ অবসন্নতায় তাহার পাশে ঝুলিয়া পড়িল । সে যেন সহসা বাস্তব জগতে ফিরিয়া আসিল । ভীত চকিত ভাবে বলিল—“আমি কি বলছিলাম ? আপনি কে ?” ললিত তাহার অবস্থা বুঝিতে পারিয়া শাস্তভাবে বলিল, “ব্যস্ত হবেন না। আপনিই ত বললেন, আমি আপনার শত্রু ; ধরুন তাই । তবে আপনার জীবনটাকেও শত্রু ভাববেন ন—এখন হয়ত জীবনকে ঘৃণা করছেন কিন্তু কালই আবার জীবনটাকে ভালো লাগবে। দুঃখকষ্ট ত আছেই।” বিহ্বল ভাবে ললিতের দিকে চাহিয়া মেয়েটি পূৰ্ব্বাপর ঘটনাটি ভাবিতে লাগিল ; সবট মনে পড়িল না। ললিতের সরল কথাবাৰ্ত্তায় ও সহজ প্রশ্নোত্তরে সে মন্ত্রমুগ্ধের মত আবার ধীরে ধীরে নিজের মনের কথা উদঘাটিত করিতে লাগিল । বলিল,—“বেঁচে থাকৃতে আর চাই না—এই ভাঙ্গা বুক আর পীড়িত মন নিয়ে ।” “আচ্ছা, আপনার স্বামীকে কেন একেবারে শেষ দেখতে দেন না ; ঘা খেলেই তিনি হয়ত ফিরবেন—” “ন, না, তার চাইতে মৃত্যু ভাল। বেঁচে থেকে একেবারে তাকে ছাড়তে পারব না—” “আচ্ছা, আপনার কি স্বামী ছাড়া অবলম্বন আর নেই, ছেলেপিলে ?” יין וב" “বড় কোনো কাজ, কি গান-টান কিছু ?” “ছিল, কিন্তু স্বামী সেসব পছন্দ করতেন না ; তিনিও ՊԵա-Ե আমাকে সম্পূর্ণ নিজের করে আগলে রাখতে চেয়েছিলেন।” “স্বামীর কথায় এইসব ছেড়ে দিয়েই আপনি আত্মহত্যার পথ ধবৃছেন—মেয়েদেরও নিজস্ব একটা অবলম্বন চাই—স্বামী-সন্তানের অধিকারের বাইরে—” অশোকার কথা মনে হইতেই তাহার বুকটা ছ্যাং করিয়া উঠিল । “আপনি বুঝি গান-বাজনা পছন্দ করতেন ?” “হঁ্যা—আমাকে দয়া ক’রে যেতে দিন ; আমি বডড ক্লান্ত ।” ললিত সরিয়া আসিল । সেও ত ক্লান্ত। সে শুধু বলিল,“আপনি একেবারে না ম’রেও হয়তো এখনো শাস্তি পেতে পারেন। নিজেকে অত সহজে ধরা দেবেন না ; " একটু দুষ্প্রাপ্য ক’রে তুলুন নিজকে । সব ঠিক হয়ে যাবে। মরূলেই তো সব গেল। আজকের এই মেঘ কাটুতেও পারে। নিজের মধ্যেই বেঁচে থাকার অবলম্বন খুজে পাবেন, শুধু নিজেকে একটু অবকাশ দিন।” এতক্ষণে মেয়েটি চারিদিকে চাহিবার অবসর পাইল । “আমি কোথায় আছি ভুলে গেছ লুম। আপনাদের বুঝি ওই ছাদ ?” “হ্যা, ওই ছাদের কোণে আমার আকাশ-বাসর।” নীচের ঘরের বঁাশীর স্বর ও পায়ের তাল কানে আসিতেই মেয়েটির ভাবাস্তর হইল। বহুকষ্টে আপনাকে ংযত করিয়া সে বলিল—“ওই শুনুন,—” “এ—ত সহ্য করতেই হবে—” “আচ্ছা, আপনি ছাদে ব’সে কি করেন ?” “আমি পৃথিবীর সুখ-দুঃখের আশা-আনন্দের কথা ভাবি আর সেই ভাবনাগুলো লিখে রাখি । দুঃখকে কাটিয়ে ওঠার এ এক সহজ উপায়। পৃথিবীর সবাইকে নিয়ে আমার কার্বুবার, আমি, আপনি, আমার অন্ধ স্ত্রী—” “আহ, আপনার স্ত্রী অন্ধ ।” “শুধু অন্ধ নয়, কিছু শুনতেও পায় না, বলতেও পারে না ।” “আপনি লেখক বুঝি ?”